ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহ। মাত্র চার বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে ২৭টি সিনেমায় অভিনয় করে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে যান ক্ষণজন্মা এই অভিনেতা। ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার মাধ্যমে রুপালি পর্দায় পা রাখেন সালমান। এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়িকা মৌসুমী। সিনেমাটিতে জুটি বেঁধে দারুণ খ্যাতি কুড়ান এই যুগল।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতি তুঙ্গে থাকা অবস্থায় রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন সালমান শাহ। তার মৃত্যুর পর কেটে দীর্ঘ ২৮ বছর। তবে লাখো-কোটি ভক্ত সালমানকে আজও মনে রেখেছেন। মনে রেখেছেন মৌসুমীও। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রিয় নায়ককে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন এই অভিনেত্রী।
মৌসুমী বলেন, ‘সালমানকে হারানোর ২৮ বছর আজ। মাঝে মাঝে মনে হয় আমি পৃথিবীর ভাগ্যবান তারকা যার প্রথম নায়ক মৃত্যুর এতগুলো বছর পরও চিরতরুণ ভক্ত-অনুরাগীদের মণিকোঠায়। বছরের হিসেবে ২৮টা বছর গেলেও সালমান আমার কাছে যেমন আজও নতুন, নবীন ঠিক তার ভক্তদের মাঝেও। আমি তো মনে করি, সেদিনের কথা যে দিন পৃথিবীর সকল মায়ার জাল ছিঁড়ে পরপারে চলে গেছে। কিন্তু মনেই হয় না আঠাশ বছর। এত এত কাজে ব্যস্ততার জন্য হয়ত শুধু গভীর স্মরণ করেছি এই ৬ সেপ্টেম্বর। কিন্তু কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে এখন আরো বেশি বোধ করছি তাকে আর ভাবছি এত বছর কোথায় কীভাবে পালিয়ে গেল জীবন থেকে?’
শুটিং সেটে মৌসুমীর মন খারাপ থাকলে অস্বস্তিতে পড়তেন সালমান। তা উল্লেখ করে মৌসুমী বলেন, “সালমান আমি যেন সেই আর্বিভাবের দিনেই ফিরে যাই। আমি যত শান্ত চুপচাপ তার বিপরীতে সে দুরন্ত। আমার মন খারাপে সে অস্বস্তিতে থাকত আবার তার মন খারাপ থাকলে আমার কষ্ট লাগত। এই বিষয়গুলো সব যে প্রকাশের ছিল তাও না। এমনিতেই এমন হতো। কিন্ত এই আন্তরিকতা আর ভালোবাসা কোনো কিছুর উর্ধ্বে ছিল। এভাবেই চলল প্রায় তিনটা বছর। মাঝখানে কত কিছু হলেও ‘দেনমোহর’-এর শুটিংয়ের সময় দুজনের মন খুব ভারী থাকত। একদিন সেটে বসে সফি বিক্রমপুরী তো বলেই ফেললেন, ‘আমরা আর মৌসুমী সালমানকে পাচ্ছি না। চলচ্চিত্র শিল্প যে কত সুন্দর একটা ক্লাসিক্যাল জুটিকে হারাচ্ছে তা কল্পনাও করতে পারবে না মানুষ। উত্তম-সুচিত্রা হওয়ার পথে কাটা হয়ে থাকবে এই বিচ্ছেদ।’ আমি কথাটা সে দিন খেয়াল না করলেও এখন মনে পড়লে অজানা দূঃখে চোখ ভাসে।”
মৌসুমী বিশ্বাস করেন না সালমান শাহ আত্মতহ্যা করেছেন। তার ভাষ্য— “সালমান আত্মহত্যা করেছে এ কথা আজও আমার বিশ্বাস হয় না। তার মতো প্রাণপ্রাচুর্য ভরা মানুষ এভাবে যেতে পারে না। সেদিন যখন আমি আর ইস্পাহানী এফডিসিতে কথা বলছিলাম, তার নতুন সিনেমার বিষয়ে তখন সে আমাকে জানাল যে, মৌসুমী আমি প্রাথমিক কথা সালমানের সাথে সেরেছি। সালমান তুমি আবার এক হচ্ছো আমার নতুন সিনেমায়। সেটা ছিল সম্ভবত ‘তুমি সুন্দর’। যেটা পরে সানীকে নিয়ে করা হলো।”
মৌসুমীর জীবনে সালমান একটা অনুভূতির নাম। তা উল্লেখ করে মৌসুমী বলেন, ‘রাজ্যের স্মৃতি আমার মনে আসে, মাঝে ভুলে থাকতে চাই। ছয় সেপ্টেম্বর আসলে মন আরো ভারী হয়। বন্ধু, সহকর্মী, প্রথম নায়ক। সালমান যেন সবকিছুতে মিলেমিশে আমার শুরুর জীবন থেকে আজও একটা অনুভূতির নাম। আজ আমি ব্যস্ততা পার করে যখন নীরব তখন যেমন বেশি অনুভব করি, ঠিক সময়ের সাথে জনপ্রিয়তার পাল্লায় ভারী হয়ে নতুন ভালোবাসায় সিক্ত হয় সালমান তার নতুন ভক্তদের মাঝে। সময়ের সাথে সালমান আজও চির তরুণ, চির অমর। ভালো থেক ওপারে, আমরা তোমাকে ভুলব না। আমার নায়ক সালমান শাহ।’