ময়মনসিংহে ব্রহ্মপুত্র নদ রক্ষায় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ‘ব্রহ্মপুত্র নদের স্মরণসভা’ শীর্ষক প্রতিবাদ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নগরীর কাচারীঘাট এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে জেগে ওঠা চড়ে এ আয়োজন করা হয়।
সাংস্কৃতিক কর্মী শামীম আশরাফ আয়োজিত অনুষ্ঠান জুড়ে চলতে থাকে কথা, গান ও কবিতা। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, সাংস্কৃতিক কর্মী ও সাধারণ মানুষ সংহতি প্রকাশ করে এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
‘গাছ খাও, মাছ খাও নদী খাও কেন?’ ‘নদী মরলে আমরাও মরি’, ‘আমাকে দাও স্রোতের জীবন’ এমন স্লোগান দেন অনুষ্ঠানে আসা মানুষরা। মানুষরূপী রাক্ষস কীভাবে নদকে খাচ্ছে তাও ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয় অনুষ্ঠানে।
আয়োজনের উদ্যোক্তা শামীম আশরাফ বলেন, ‘গত বছরের ৫ মে হাঁটুজলে নেমে আমরা মৃতের চিৎকার আয়োজন করে ছিলাম। এবার ব্রহ্মপুত্র নদের স্মরণসভা করছি। আমরা নদ রক্ষায় কর্মসূচি পালন করেছি। এই নদটি যতদিন পর্যন্ত প্রাণ না ফিরে পাবে, ততদিন আমাদের আন্দোলন চলবে। খননের নামে যারা লুটপাট করছে মূলত স্মরণসভা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে। দিনের পর দিন ব্রহ্মপুত্রকে যারা মারছে, তাদের শাস্তির আওতায় আনতে আমাদের এমন আয়োজন।’
আয়োজনে অংশ নেওয়া শিল্পী মিজান বাউলা বলেন, ‘আমরা শিল্পীমনা মানুষ চাই ময়মনসিংহের প্রাণপ্রকৃতি আগামী প্রজন্মের মধ্যে বেঁচে থাকুক। চোখের সামনে ব্রহ্মপুত্র নদ মরে যাচ্ছে। একটি সুবিধাবাদী মহলের কারণে একসময়ের উত্তাল ব্রহ্মপুত্রের আজকে রুগ্ন অবস্থায়। এর প্রতিবাদ করছি গানে গানে। যতদিন না পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র যৌবন ফিরে পাবে, ততদিন পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। যারা নদ খননের দায়িত্বে রয়েছেন প্রয়োজনে তাদের বাসা-বাড়ি ও অফিসের সামানে গিয়ে প্রতিবাদ গড়ে তোলা হবে।’
দখল, দূষণ আর পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ২০১৯ সালের শেষের দিকে শুরু হয় খনন কাজ। প্রায় ২ হাজার ৭৬৩কোটি টাকা ব্যয়ে নদের ২২৭ কিলোমিটার খনন করছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। খননের পর যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের সংযোগস্থল জামালপুরের কুলকান্দি থেকে কিশোরগঞ্জের টোক পর্যন্ত নদটি ৩০০ ফুট প্রশস্ত ও শুস্ক মৌসুমে ১০ ফুট গভীর থাকবে এমনটি কথা ছিলো। নিধার্রিত সময় পেরিয়ে গেলেও কাঙ্খিত কোনো খনন হয়নি বলে জানিয়েছেন অনুষ্ঠানে থাকা লোকজন।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী মহসিন মিয়া বলেন, ‘চলতি বছরের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত কাজের সময় বাড়ানো হয়েছে। যমুনা-ব্রহ্মপুত্র নদের উৎসমুখ জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে খনন করতে না পারায় সফলতা আসছে না। ৩৬টি ড্রেজার সেখানে নেওয়া হলেও স্থানীয়দের বাঁধার কারণে কাজ করা যাচ্ছে না। সীমানা জটিলতা কাটিয়ে কাজ শুরু করতে পারলে খনন কাজ দৃশ্যমান হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ৩৩ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আমরা দ্রুত চেষ্টা করছি সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাতে।’