সাক্ষাৎকার

চলচ্চিত্র নীতিমালা হবে সংস্কৃতি ও জীবনযাপনের উপর

পেশায় স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর চলচ্চিত্রকার হিসেবে সমাদৃত।  আলোকচিত্র, লেখা, আঁকা তার স্বভাবজাত। শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর প্রয়োজনীয় সংস্কারের দাবিতে সোচ্চার বিভিন্ন অঙ্গনের মানুষ। চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টরাও বলছেন তাদের প্রত্যাশার কথা। দেশের চলচ্চিত্রের সংকট, সম্ভাবনা, সেন্সর বোর্ডের সংস্কার ইত্যাদি বিষয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেছেন এই নির্মাতা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অনার্য মুর্শিদ  

রাইজিংবিডি: ২০১৭ সালে যে চলচ্চিত্র নীতিমালা হয়েছে তার ন্যারেটিভ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক। এর আলোকেই সর্বশেষ সার্টিফিকেশান আইন হয়েছে। এ নিয়ে চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টরা সন্তুষ্ট নন। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য জানতে চাচ্ছি। 

এনামুল করিম নির্ঝর: চেতনা জোর করে কাউকে ধারণ করানো সম্ভব নয়। এটা কালচারের পার্ট। এটা দিনে দিনে গ্রো করে। আমরা আসলে প্রথমেই ফেইল করেছি এই জায়গাটাতে। চেতনা আসলে কাকে বলে, একটা স্বাধীন দেশের মানুষ হিসেবে আমার চেতনা কী হবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে আমি কী বুঝি? — বিষয়গুলো স্পষ্ট করিনি। ফলে এটা হয়ে গেছে স্বার্থসিদ্ধির ব্যাপার। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটা ভালো চলচ্চিত্র কি হয়েছে? একটা মিউজিয়াম হয়েছে তাও বেসরকারি উদ্যোগে। আমার সন্তান প্রকৃত ইতিহাস জানতে চাইলে আমার গন্তব্য নেই! সে হিসেবে আমি বলব, এই ৫৩ বছরে আমাদের এই সোসাইটি যেভাবে গ্রো করেছে সেটা সম্পূর্ণ স্বার্থকেন্দ্রিক। স্বাধীনতার ৫০ বছর উদ্‌যাপন হলো, সেখান থেকে আপনি কোনো কিছু মেমোরাইজ করতে পারেন? এ বিষয়ে কথা বলতেও বিব্রতবোধ করি। 

আমাদের একটা প্রজন্মের মানুষ যুদ্ধ করল এবং সেই প্রজন্মের কিছু মানুষ সরাসরি যুদ্ধের বিরোধীতা করল। তারপরের প্রজন্ম দেখল সব কর্মকাণ্ড। তারপরের প্রজন্ম মানে তৃতীয় প্রজন্ম, তারা প্রথম প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এবং বিপক্ষের অর্থাৎ দুপক্ষেরই গল্পগুলো শুনল। ৭৫-এর পর তো মুক্তিযুদ্ধের গল্পই চেঞ্জ হয়ে গেল। সবকিছু মিলিয়ে আরেকটা গল্প এলো থার্ড জেনারেশনের কাছে। যারা প্রথম শুনল গল্পটা, তাদের ইন্টারেস্ট কমে গেল। আসলে ইতিহাস নিয়ে এত লীলাখেলা হয়েছে; দলীয়করণের কারণে, গ্লোবালাইজেশনের কারণে— ফলে তারা অন্যভাবে ভাবল। তবে একই ভূখণ্ডে থাকার কারণে আমূলে চেতনা পাল্টে যেতে পারে না, ভাবনার মিলতো থাকেই। 

আপনি যে চলচ্চিত্র নীতিমালায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলেছেন, এটা এক ধরনের নিয়ন্ত্রণের জন্যই ব্যবহার করা হয়েছে। দেখুন, মুক্তিযুদ্ধের একটি স্পেসিফিক এবং সর্বজনীন অর্থ রয়েছে। যা মানুষকে বোঝাতে হয়নি। সার্বিক পরিস্থিতিতে মানুষ একদম ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আমি নিজেও শরণার্থী ছিলাম। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সবচেয়ে জরুরি ছিল অংশগ্রহণমূলক একটা সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে আমাদের নীতিমালা প্রণয়ন করা। একটা গ্রুপ অব পিপলের মধ্যে ডিসকাশন হবে, ডিসকোর্স হবে তারপর ডিসিশন হবে— সেটা কি হয়েছে? 

কাজেই যে দেশে সবক্ষেত্রে অংশগ্রহণমূলক হওয়ার কথা ছিল, সেই জায়গা থেকে সিনেমা, মিউজিক, সৃজনশীল জায়গাগুলো থেকে আমরা একটা অদ্ভুত পরিবর্তন আনতে পারতাম। যেহেতু আমরা মেধাবী জাতি। কিন্তু আমরা পারলাম না। আমরা চিন্তা করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেললাম এসব নিয়ন্ত্রণের জন্য। যা তাদের নিজস্ব স্বার্থের জন্যে করেছে। আমি কোনো রেফারেন্সে যাব না। 

এখন যদি নতুন নীতিমালা করতেই হয়, আমি বলব আমাদের দেশের নির্দিষ্ট একটা সংস্কৃতি আছে, একটা চর্চা আছে, একটা ভাবনা আছে, একটা জীবনযাপন আছে এই নীতিমালা হবে সেটার ভিত্তিতে। সেখানে কে শিক্ষক, কে অভিভাবক, কে ছাত্র-ছাত্রী, কে অল্প শিক্ষিত, কে স্বশিক্ষিত সেখানে বিশেষভাবে একটা অংশগ্রহণ করা দরকার। বিশেষ করে আমি কী দেখব, কী ভাবব এটা নিয়ে একটা আলোচনা দরকার। কিন্তু সেখানে তো ১৮ কোটি মানুরেষর অংশগ্রহণ করা সম্ভব না। এটা প্রতিনিধিত্বমূলক হওয়া দরকার। এই চর্চাটা শুরু করার বিরাট বড় সুযোগ এখনই। আমাদের ভিশন নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা ভাবি না, একশ বছর বা দুশো বছর পরে কী হবে? একটা দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরবর্তী একশ বছরে অনেক ঘটনা ঘটে— এটা স্বাভাবিক। সেখানে একটা শ্রেণীকে যদি একসঙ্গে করা যেত যারা আসলে দেশটাকে ভালোবাসে, দেশের মানুষের কল্যাণ চায় এবং তাদের স্বার্থটাও খুব স্পেসিফিক, তারা ওই জায়গাটায় একদম পরিষ্কার স্ট্যান্ড করে। কিন্তু সমস্যা হলো, আমাদের লুকোচুরি প্রথম থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে। মানে সত্তাটাকে কয় ভাগে ভাগ করা যায়? বাণিজ্যের জন্য একরকম, সরকারি কাজে একরকম, নিজের কাজে আরেক রকম। এটা তো হয় না আসলে। মানুষের আদর্শ একটাই। আমি মনে করি, সেই আদর্শিক জায়গাটায় আমরা যতদিন না দাঁড়াতে পারব ততদিন পর্যন্ত সেই একই আবর্তে আমাদের ঘুরতে হবে। কাজেই আমি মনে করি, এ ক্ষেত্রে যদি আসলেই কিছু করতে হয় তাহলে পরিষ্কার একটা প্রস্তাবনা থাকা দরকার। সেটা নিয়ে কথা বলা উচিত, বিশ্লেষণ করা উচিত, ওপেন ডিসকাশন করা উচিত। যখন অংশগ্রহণমূলক হবে ব্যাপারটা তখন এ নিয়ে কারো কোনো কথা থাকবে না।

রাইজিংবিডি: আপনার বক্তব্য থেকেই বুঝতে পারছি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এখন সেই ভাষা ব্যবহার করলে অসুবিধাও হচ্ছে এই মুহূর্তে। আমরা কি সেই ভাষা আর ব্যবহার করব নাকি মুক্তিযুদ্ধের উদ্দেশ্য ঠিক রেখে ভাষায় রদবদল করব?

এনামুল করিম নির্ঝর: আপনি যে ভাষাই আনুন না কেনো অসৎ উদ্দেশ্যমূলক হওয়া উচিত নয়। উদ্দেশ্য যদি মহৎ হয় তাহলে অবশ্যই ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ও থাকতে পারে। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণার জায়গা। তার থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে যদি আমি কাজ করি তাহলে অসুবিধা কোথায়? এবং সেটাই তো করা উচিত—নয় কি?

রাইজিংবিডি: আপনার চলচ্চিত্র ‘নমুনা’। চলচ্চিত্রটি আটকে আছে। ঠিক কী কারণে আটকে দেয়া হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?

এনামুল করিম নির্ঝর: এ নিয়ে আমি খুব বেশি বলতে চাই না। এটি আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। যতক্ষণ পর্যন্ত আইনি প্রক্রিয়া শেষ না হবে আমার মনে হয় উন্মুক্তভাবে খুব বেশি কিছু বলা ঠিক হবে না। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার পর ‘নীল কেতন’ ছবির জন্য যখন আমার কাছে পাণ্ডুলিপি চাওয়া হয় তখন আমি চার-পাঁচ দিন দেরি করেছিলাম। নব্বইয়ের শুরু থেকে বিশেষ করে এরশাদের সময় অ্যাফেক্টেড হয়েছি অনেকভাবে। তারপর রাজনৈতিক সরকার যখন এলো, আমরা দেখেছি হিংসা, বিদ্বেষ এবং অদ্ভুত আচরণ। এর একটা প্রভাব আমাদের উপর দিয়ে গেছে। একটা পর্যায়ে গিয়ে আমার মনে হয়েছে সুশীল স্যাটায়ার, মানে সামাজিক বিদ্রূপ করা দরকার। বিদ্রূপাত্মক ছবি আমাদের দেশে কম হয়। এটা এরকম একটা ছবি। একটা সমাজ স্টাকড এমনভাবে যেটার অতিরিক্ত কোনো কিছু দেখানো হয়নি। তারা যা করেছে তাই দেখানো হয়েছে। সেটা পছন্দ হয়নি সেন্সর বোর্ডের। ২০০৭-২০০৮ এর অনুদানে পাওয়া ছবি। পকেট থেকে বেশ কিছু টাকাও খরচ করতে হয়েছে আমাকে। পরে যখন জমা দিলাম, তখন আমাকে জানানো হলো, অনেক অংশ কাটতে হবে; প্রায় সত্তর থেকে আশি ভাগ— খুবই দুঃখজনক ব্যাপার! অথচ স্ক্রিপ্ট দেখে আমাকে অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। আমি বললাম, এটা ট্যাকনিক্যালি পসিবল না। তাহলে তো আবার নতুন করে টাকা দিতে হবে আমাকে। একটা পর্যায়ে ওরা বলল, আমি ছবিই বানাইনি! সব কিছু হতে হতে আমি এক পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। আমার ফিল্ম বানানোর টার্গেট নষ্ট হয়ে গেল। অনেকেই সন্দেহ করে বলেছে, বিরাজনীতিকরণের জন্য ছবিটা বানানো হয়েছে। কথাটি সত্য নয়। সামাজিক প্রেক্ষাপটের ছবি এবং তার সঙ্গে তো একটা রূপক থাকবেই।

রাইজিংবিডি: শোনা যায় ‘নমুনা’য় আপনি সব দলকে নিয়ে স্যাটায়ার করেছেন!

এনামুল করিম নির্ঝর: এটা সামাজিক স্কুল নিয়ে ছবি। এখানে রাজনীতিকে যদি কেউ মেলাতে যায় তাহলে আমার দোষ না। আমি তো স্টোরি ডিসক্লেইমারে দিয়ে দিয়েছি এর সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। স্ক্রিপ্ট তারাই দেখেছে। পরে ব্যাপারটা কোথায় গেল? তারা বলল, আমি নাকি ছবিই বানাইনি! আমি আরো গোটা তিনেক ছবি বানিয়ে ফেললাম আমার ইনভেস্টে। ওগুলো সেন্সরে জমা দিলাম। তখন আমাকে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে আসতে বলল। আমি বললাম, ক্লিয়ারেন্স লাগবে কেন? আমি এফডিসির ক্যামেরা; কিছুই ব্যবহার করিনি। ক্লিয়ারেন্স নিতে গেলে তারা বলল, আপনি তো অনুদান নিয়েছেন কিন্তু ছবি তো বানাননি। কি একটা বিপদ! এখন আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে ঝুলে আছে। রায় হবে কবে! অদ্ভুত একটা পরিস্থিতি। আমার চারটা সিনেমা আটকে আছে সেন্সর আইনের জালে। আমার প্রফেশন থাকাতে টিকে আছি। আর কেউ হলে তো সুইসাইড করত! আমার প্রশ্ন হলো, যেখানে আমি স্বাধীন ছবি বানাচ্ছি, সেখানে এফডিসি থেকে ক্লিয়ারেন্স নিতে হবে কেন? 

রাইজিংবিডি: আমাদের যে অনুদান দেয়া হয়, সেখানে কয়েকটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়। যেমন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক, সাহিত্যনির্ভর এবং শিশুতোষ চলচ্চিত্র। এই নীতি আপনার কাছে যথাযথ মনে হয় কিনা?

এনামুল করিম নির্ঝর: আমাদের নীতিমালা এবং প্রয়োগ এই সংস্কৃতিটাই এখন পর্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ। অনুদান বা সাহায়তা যেটাই বলি তার শাব্দিক অর্থের সঙ্গে মিল থাকতে হবে। আমার কাছে মনে হয়, পুরো জিনিসটার মধ্যে ভীষণ রকম অস্বচ্ছতা রয়েছে। আপনি যদি ২০২৫ সালের অনুদান দেন তাহলে ২০২৪ সালের মধ্যে দিতে হবে। যাতে করে সময় পাওয়া যায়। দু’তিনটি লেয়ারের মধ্যে দিয়ে একটা প্রসেসের মাধ্যমে সিলেকশান করা উচিত। বিষয়ভিত্তিক হলেও হতে পারে সমস্যা নেই। বয়স্কদের আমন্ত্রণ জানানো, তরুণদের সুন্দর সুযোগ করে দেয়া। অনুদানের সবচেয়ে বড় দক্ষতা হচ্ছে ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে এটি কীভাবে কানেকটেড হবে। এমন না যে, ছবি বানালাম তারপর ওখানেই সমাপ্তি। এটা কিন্তু তা না। জনগণের পয়সা ইনভেস্ট করা হচ্ছে। জনগণকে দেখানোর দায়িত্বটাও পড়ে। জবাবদিহিতা থাকা দরকার। কীভাবে হলে এটা একটা দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব রাখতে পারবে— ভাবা দরকার। আসলে পুরোটাই ঢেলে সাজাতে হবে। 

রাইজিংবিডি: আমরা কি ব্যাপারটিকে অংশগ্রহণমূলক করতে পারি? যেমন চলচ্চিত্র সংসদগুলোকে এখানে ইনভলভ্ করতে পারি? 

এনামুল করিম নির্ঝর: চলচ্চিত্র সংসদের কাজ ভিন্ন। ফেস্ট করা যেতে পারে। ব্যাপারটা হচ্ছে আমরা কখন অনুদান দেই? কোনো কিছু কল্যাণ করার জন্য, ভালো করার জন্য, ফিল্ম ডেভলপ করার জন্য, ইন্সপায়ার্ড করার জন্য। এটি একটি প্রফেশনাল জব। এখানে চলচ্চিত্র সংসদ অবশ্যই ভূমিকা রাখতে পারে, বোদ্ধারা ভূমিকা রাখতে পারে। আমি মনে করি, ডিস্ট্রাকচারিং করা দরকার। খুব দুঃখের বিষয় এতদিন আমাদের রাজনৈতিক সরকারগুলোর কোনো ভালো ইনটেনশন আমরা দেখিনি। এ কারণে যখন অরাজনৈতিক কোনো সরকার আসে তখন আমরা একসেপ্ট করতে থাকি প্রপার কোনো সিদ্ধান্ত হবে। রাজনৈতিক সরকারগুলোর একটা আলাদা দুরভিসন্ধি থাকে, স্বার্থকেন্দ্রিক লক্ষ্য থাকে। চলচ্চিত্র সেক্টরটি অনেকদিন অবহেলিত। আলোচনা করে পরিকল্পনা সাজানো খুব জরুরি। এফডিসি, আমাদের যে ফিল্ম স্কুল আছে সবকিছু ঢেলে সাজাতে হবে। এগুলো অনেক বেশি উপযোগী হওয়া উচিত। স্বার্থকেন্দ্রিক চর্চা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

রাইজিংবিডি: আমাদের দেশে স্বাধীন চলচ্চিত্রকাররা অনেক বেশি স্ট্রাগল করছে।

এনামুল করিম নির্ঝর: আমাদের দেশে নয়, পুরো পৃথিবীতেই স্ট্রাগল করছে। স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাণ একটা ইচ্ছা, উদ্দেশ্য বা প্রসেস বলতে পারেন। এটি একটি আলাদা ইন্ডাস্ট্রি হয়ে উঠতে পারে। খুব বেসিক থেকে কাজ করতে হবে। এ জন্য একটা কমিউনিটি থাকতে হবে। আমাদের সমসাময়িক সময়ে আমরা এটা নিয়ে চিন্তা করেছিলাম। স্বাধীন চলচ্চিত্র কিছুটা প্রতিষ্ঠানবিরোধী; তার মানে আপনাকে গুপ্ত চিন্তার অধিকারী হতে হবে। এটাও একটা ইন্ডাস্ট্রি। এখানে বিনিয়োগ আছে। বিনিয়োগটা আপনাকে ফেরত আনতে হবে। আমরা ওটাই চেষ্টা করছি বর্তমানে খুব ছোট্ট পরিসরে। কিন্তু আমি মনে করি, রাষ্ট্রীয়ভাবে সামগ্রিক চলচ্চিত্র চিন্তার সাথে মিলিয়ে এটিকে একটা জায়গায় আনতে হবে যাতে চলচ্চিত্রের কল্যাণ হয়। এখানে একাত্মতা দরকার। তাহলেই চলচ্চিত্রের কলাকৌশলীও তৈরি হবে। এ জায়গায় আমাদের ভীষণ রকম ঘাটতি আছে। আমার এখন উদ্দেশ্য হলো তরুণদের নিয়ে চলচ্চিত্র, সংগীত, স্থ্যাপত্য, দৃশ্যশিল্প থেকে শুরু করে প্রকাশনা, মিডিয়া এমন একটা হাব তৈরি করা যেন তারা নিজেদের সততা এবং আদর্শিক জায়গা থেকে, শ্রদ্ধাশীল থেকে কাজ করে যেতে পারে, স্বাধীনভাবে মাথা উঁচু করে টিকে থাকতে পারে। 

রাইজিংবিডি: একুশে বইমেলার নান্দনিকতায় আপনার ভূমিকা দেখেছি। প্রায় বিনা পারিশ্রমিকে আপনি এসব কাজ করেছেন। আগামীতে কি এসব নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে?

এনামুল করিম নির্ঝর: প্রায় বিনা পারিশ্রমিকে নয়, পুরোটাই বিনা পারিশ্রমিকে। আমি একা করিনি কাজটা, আমার অফিসের লোকজনই ইনপুট দিয়েছে সেখানে। আমি চেষ্টা করেছি বইমেলার স্পেস বড় করতে। আমাদের স্বাধীনতা টাওয়ার, লেকের নান্দনিক ব্যবহার আগে হয়নি। সেটা আমি করেছি। লেখক মঞ্চ করেছি। কিন্তু এরপর আর নতুন কিছু হয়নি, কোনো সংযোজন আমার চোখে পড়ছে না। বাংলা একাডেমি যদি চায় আমি অবশ্যই সময় দিব।