বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে চোখ হারাতে বসা খুলনার আব্দুল্লাহ শাফিল উন্নত চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড যাচ্ছেন। রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) খুলনা থেকে ঢাকায় গিয়েছেন আহত শফিল এবং তার মা-বাবা। আগামীকাল সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) তারা থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবেন।
এক দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ২ আগস্ট (শুক্রবার) খুলনায় পুলিশের গুলিতে শাফিলের বাম চোখ গুরুতর আহত হয়। শাফিল খুলনার নর্দান ইউনিভার্সিটির ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (ইইই) প্রথম বর্ষের ছাত্র। খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকায় মা-বাবার সাথে ভাড়া বাসায় থাকেন তিনি। তাদের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জে। তার বাবা ইউনুস আলী খোকন গ্রামে মাছের ব্যবসা করেন।
সরকারি বিএল কলেজের এইচএসসি ৮৯ সালের ম্যাচের শিক্ষার্থীরা আজ শাফিলকে চিকিৎসার জন্য নগদ ১ লাখ টাকা প্রদান করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ড. মো. হায়দার আলী বিশ্বাস, ডা. মো. ইনামুল কবীর, ডা. শেখ আবু শাহীন, সহকারী অধ্যাপক মো. সিরাজুল ইসলাম, ব্যাংক কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম, শামীম আহমেদ ও মো. মশিউল হক।
শাফিলের বাসায় বিদায় জানাতে আসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি মিনহাজুল আবেদীন সম্পদ। এসময় তিনি বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটেছে। নিজেদের সর্বোচ্চ ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে নতুন দরজা খুলে দিয়েছে ছাত্র-জনতা। আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের নির্বিচার গুলিতে শাফিলের মতো শত শত মানুষ আহত হয়েছেন। নিহত হয়েছেন অগণিত ভাই-বোন। শাফিলের চিকিৎসার জন্য আমরা অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে আবেদন করেছিলাম। অনেকে সহযোগিতা করেছেন। সরকারের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আশা করি, দ্রুতই সেখান থেকে সহযোগিতা পেয়ে যাবো।’
গুলিবিদ্ধ শাফিল জানান, ২ আগস্ট বন্ধুদের সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেন তিনি। সেদিন বিকেলে হঠাৎ তার চোখের সামনে জ্বলে ওঠে লাল আলো। অন্ধকার হয়ে যায় তার চারপাশ। একাধিক স্প্লিন্টার আঘাত করে চোখ ও মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে। বন্ধুরা উদ্ধার করে নিয়ে যায় হাসপাতালে। খুলনা ও ঢাকার একাধিক চক্ষু হাসপাতালে দেখিয়েও লাভ হয়নি। গুলি লাগায় বাঁ চোখ নষ্ট হয়ে গেছে সম্পূর্ণ। চোখে ও মাথায় এখনো স্প্লিন্টার রয়ে যাওয়ায় অপর চোখটিও নষ্ট হওয়ার উপক্রম প্রায়। এখন সীমাহীন যন্ত্রণা সহ্য হচ্ছে না। যে কারণে পারিবারিক সিদ্ধান্তে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে নেওয়া হচ্ছে তাকে। এ জন্য প্রায় দেড় কোটি টাকার প্রয়োজন।
শাফিল বলেন, ‘আমার বিষয়টি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে জানানো হয়েছে। তারা অবশ্যই চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন প্রক্রিয়ার কারণে সেটা দেরি হচ্ছে। আজ ৩৬টি দিন ধরে আমি চোখের যন্ত্রণা নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেরাচ্ছিলাম। আমার যন্ত্রণা পরিবার সহ্য করতে না পেরে তাদের অর্থায়নে এবং শ্রদ্ধেয় ভাইয়েরাসহ দেশ-বিদেশের ভাই এবং আপুদের সাহায্য সহযোগিতায় আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা সোমবার থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওনা দেব। রাষ্ট্রের কাছে আমার একটাই আকুতি, আহতদের চিকিসার বিষয়টি যেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখা হয়।’