ক্যাম্পাস

গবির স্বাস্থ্যবীমার টাকার হিসাব চান শিক্ষার্থীরা

সেমিস্টার প্রতি ফি থেকে বিভিন্ন খাতে টাকা কেটে নিলেও সে অনুযায়ী যথাযথ সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন ঢাকা সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, গবিতে প্রতি সেমিস্টারে একজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে খেলাধুলা বাবদ ৫০০ টাকা, সাংস্কৃতিক বাবদ ৫০০ টাকা, লাইব্রেরি বাবদ ৫৫০ টাকা, স্বাস্থ্যবীমা বাবদ ৭৫০ টাকা নেওয়া হয়। এছাড়া ফিল্ড ভিজিট, ল্যাবরেটরি, ছাত্র সংসদসহ বিভিন্ন খাত দেখিয়ে মোট সেমিস্টার ফি হিসাব করা হয়। 

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে জানান, প্রতি সেমিস্টারে স্বাস্থ্যবীমার নামে ৭৫০ টাকা করে কেটে নিলেও প্রতিষ্ঠার ২৫ বছরেও কোনো প্রকার মেডিক্যাল টিম বা প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ে। খেলাধুলা চলাকালে কিংবা হঠাৎ কেউ অসুস্থ হলে তাকে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য ক্যাম্পাস থেকে ১ কিলোমিটার দূরে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেতে হয়। সেখানেও নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় তাদের। এছাড়াও ২০২০ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের কার্যক্রম পুরোপুরি স্থগিত থাকা সত্ত্বেও ছাত্র সংসদ বাবদ কেটে নেওয়া হচ্ছে ২০০ টাকা। এসব টাকা কোথায় যায়- প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গবিতে বর্তমানে পাঁচটি অনুষদের অধীনে ১৭ বিভাগে আটটি সেশনে শিক্ষার্থীরা অধ্যায়ন করছেন। প্রতি সেমিস্টারে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থী সংখ্যা অন্তত ৮০০ জন। ভর্তির হিসাবে সেমিস্টার প্রতি প্রায় ৬ লাখ টাকা আয় হয়।

অন্যদিকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। যেখানে তাদের থেকে ৬ মাস অন্তর প্রতি সেমিস্টারে জনপ্রতি স্বাস্থ্য বীমা খাতে ৭৫০ টাকা করে নিলে প্রায় ৩০ লাখ টাকা আসে। সে ক্ষেত্রে বাৎসরিক হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের খাতায় প্রায় ৬০ লাখ টাকা উঠে শুধু স্বাস্থ্যবীমা বাবদ। 

এদিকে অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল থেকে গবি শিক্ষার্থী হিসেবে কোনো বিশেষ সুযোগ সুবিধা না পাওয়া এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে অবহেলার অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার প্রতি প্রদানকৃত স্বাস্থ্যবীমার সঙ্গে হাসপাতালের কোনো যোগসূত্র আছে কিনা, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

তবে ক্ষোভ প্রকাশ করেন একাধিক শিক্ষার্থী বলে, টাকা জমা না দেওয়া পর্যন্ত সেখান থেকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয় না।

ফলিত গণিত বিভাগের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মনজুরা আক্তার বলেন, সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হলে সহপাঠীরা আমাকে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়। পরবর্তীতে চিকিৎসার পূর্বে ১০ মিনিট বসিয়ে রেখে টাকা আছে কি-না এ ধরনের প্রশ্ন করেন তারা। বিকাশে টাকা আছে জানার পর সহপাঠীর কাছে ইনজেকশন আনতে দেওয়া হয়। আশেপাশে কোনো আউটলেট না থাকায় বিকাশ থেকে ক্যাশ আউট করতে ঘন্টা পার হয়ে যায়। ওই টাকা আনার পর আমাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিচয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। চিকিৎসকদের এমন আচরণ লজ্জাজনক। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী মবিনুল ইসলাম রাশা বলেন, প্রত্যেক সেমিস্টারে স্বাস্থ্যবীমার টাকা দিয়েও শিক্ষার্থীরা কোনো সুবিধা পায় না। এভাবে প্রত্যেক সেমিস্টারে নেওয়া টাকাগুলোর সঠিক খরচ না হলে, তা জমা থাকার কথা। সে টাকা প্রশাসনের কাছে না থাকলে গেল কোথায়? এতদিনের টাকা প্রশাসন কী করলো, তার সঠিক ব্যাখা এখন সময়ের দাবি। প্রশাসনের কাছে জানতে চাই, বিভিন্ন অজুহাতে যে টাকা নেওয়া হচ্ছে, তা কোন খাতে খরচ হচ্ছে এবং কোথায় যাচ্ছে?

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্যবীমা ও ছাত্র সংসদের ক্ষেত্রে নেওয়া অর্থের পরিপূর্ণ হিসাব আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে কাদের সাহেব (অর্থ ও হিসাব বিভাগের পরিচালক) ভালো বলতে পারবেন। এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে।

অর্থ ও হিসাব বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল কাদের জানান, পুরাতন প্রোসপেক্টাস অনুযায়ী বিভিন্ন খাত উল্লেখ করে সেমিস্টার ফি হিসাব করা হলেও চলতি বছরের জানুয়ারিতে সংস্করণকৃত প্রোসপেক্টাসে সেমিস্টার ফি থেকে স্বাস্থ্যবীমা, ছাত্র সংসদ, ফিল্ড ভিজিট (বিশেষ বিভাগ ব্যতীত) খাতগুলো নেই। তবে শিক্ষার্থীদের জন্য অন্তত প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা যাতে ক্যাম্পাসেই করা যায়, সে ব্যাপারে আলোচনা চলছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ শিক্ষার্থীদের জন্যেই ব্যয় হয়। যেহেতু এটা কোনো ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান নয়, সেহেতু বিভিন্ন খাত উল্লেখ থাকলেও তা বিভিন্নভাবে সমন্বয় করা হয়। চিকিৎসা না পাওয়ার ব্যাপারটা দুঃখজনক। এ ব্যাপারে ট্রাস্টি বোর্ডে পূর্বেও জানানো হয়েছে। আবারো আলোচনা করা হবে।