সাভারের আশুলিয়ার একটি নির্মাণাধীন বাড়ির উঠানে পুঁতে রাখা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক অস্ট্রোলিয়ান নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে উপজেলার পাথালিয়া ইউনিয়নের মনোদিয়া চৌরাপাড়া এলাকার বাড়িটি থেকে মরদেহটি উদ্ধার হয়। মারা যাওয়া রেহানা পারভীন (৩৭) গত দুই মাস ধরে নিখোঁজ ছিলেন বলে জানিয়েছে পরিবার।
এর আগে, গত ৩ জুলাই রেহানা পারভীন অপহরণ হয়েছেন উল্লেখ করে চার জন সন্দেহভাজনের বিরুদ্ধে নবাবগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করেন তার মা আইরিন আক্তার।
রেহানা পারভীন ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার পাতিল গ্রামের লেহাজ উদ্দিনের মেয়ে। তিনি স্বামী আওলাদ হোসেন ও পাঁচ ছেলে মেয়ে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করতেন।
অভিযুক্তরা হলেন- নিহতের স্বামী আওলাদ হোসেন (৪৭), তিনি একই গ্রামের মৃত আ. মান্নানের ছেলে। একই থানার ছোট রাজপাড়া গ্রামের মৃত জহুর উদ্দিনের ছেলে আমজাদ হোসেন (৬৪), তিনি নিহতের চাচা শ্বশুর। নিহতের ননদ পাপিয়া আক্তার ( ৩৬) ও মাকসুদা নামে অপর এক নারী। এরমধ্যে আমজাদ হোসেন ও পাপিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, গত ২৯ জুন ছেলেসহ বাংলাদেশে আসেন রেহানা পারভীন। একদিন পর তিনি বাবার বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়ি যান। গত ৩ জুলাই বিকেলে মায়ের সঙ্গে রেহানা পরভীনের ফোনে কথা হয়। এরপর থেকেই তার সঙ্গে পরিবারের কারও যোগাযোগ হয়নি। এমনকি তিনি অস্ট্রেলিয়াতেও ফিরে যাননি। দূতাবাসে খোঁজ নিয়ে রেহানা পরভীনের পরিবার জানতে পারেন, তার স্বামী গত ১৩ জুলাই অস্ট্রেলিয়া ফিরে গেছেন। রেহানা পারভীনের সন্ধান পেতে থানায় অভিযোগ করেন তার মা।
পুলিশ আরও জানায়, গত ৩ জুলাই নবাবগঞ্জ থানায় পাওয়া অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে রেহানা পারভীনের আশুলিয়ার স্বরলতা হাউজিংয়ে একটি বাড়ি ছিল। প্রাথমিকভাবে পাপিয়া ও আমজাদকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যে রেহানা পরভীনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
যে কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঢাকা জেলার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (দোহার সার্কেল) মো. আশরাফুল আলম বলেন, জুন মাসের শেষ দিকে রেহানা পারভীন দেশে আসেন। এর কয়েকদিন পর দেশে আসেন তার স্বামী আওলাদ হোসেন। তারা দুজনই অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। প্রায় ২০ বছর ধরে অস্ট্রেলিয়াতে সংসার তাদের। সংসারে রয়েছে পাঁচ সন্তান। তাদের বেশিরভাগ সম্পত্তি রয়েছে বাংলাদেশে। সেসব দেখভাল করতে রেহানা পারভীন মাঝে মধ্যেই বাংলাদেশে আসেন। সম্পত্তির অধিকাংশের মালিকানাই রেহানা পরভীনের নামে। এরই জেরে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাকে তুলে নিয়ে হত্যার পর আশুলিয়ার চৌরাবাড়া এলাকায় নির্মাণাধীন বাড়ির উঠানে পুঁতে রাখা হয়।
তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হওয়ায় দেশে আসার সময়ই ফিরে যাওয়ার সম্ভাব্য সময় জানিয়ে আসতে হয়। তবে, সেই সময়েও তিনি না ফেরায় দূতাবাস পরিবারকে বিষয়টি অবহিত করে। তবে, এরপরও রেহানা বা তার স্বামীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ১৩ জুলাই পরিবার জানতে পারে, রেহানার স্বামী অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে গেছেন। এরপরই পরিবারের পক্ষ থেকে প্রথমে একটি সাধারণ ডায়রি ও পরে মামলা করা হয়। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে দুই জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ভিত্তিতে মাটিচাপা দেওয়া অবস্থায় রেহানা পারভীনের গলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
যা বলছে পরিবার রেহানা পারভীন হত্যার ঘটনায় শোক নেমে এসেছে পরিবারটিতে। তার মা আইরিন আক্তার বলেন, অনেক কষ্টে মেয়েকে পড়াশোনা করিয়েছি। তারপর তাকে অষ্ট্রেলিয়া পাঠাই। সেখানে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব পায় সে। আওলাদ আমার মেয়েকে জোর করে বিয়ে করেছিল। অস্ট্রেলিয়ায় থাকার সময় আমার মেয়ে পরিশ্রম করে সহায় সম্পত্তি করেছিল। সেই সম্পত্তির জন্য আওলাদ ও তার পরিবারের সবাই আমার মেয়েকে কৌশলে হত্যার পর লাশ গুম করে। দুই মাস পর পুলিশ আমার মেয়ের লাশ উদ্ধার করেছে। আমি খুনিদের ফাঁসি চাই।
নিহতের ভাই রবিন বলেন, পরিকল্পিতভাবে আমার বোনকে হত্যার পর লাশ গুম করেছে স্বামী ও তার পরিবার। আমি সব খুনির ফাঁসি চাই।