বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপে কারণে যশোরে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেল ৩টা থেকে রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টা পর্যন্ত এ জেলায় ১১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে যশোর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিস। টানা বৃষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার ১৪০ হেক্টর জমির আগাম শীতকালীন সবজির খেত বলে জানিয়েছে যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
এদিকে, যশোর পৌর শহরের কয়েকটি নিচু এলাকা বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়েছে। সেসব এলাকায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। অনেকের বাড়িতে পানি উঠেছে। টানা বর্ষণে দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন আয়ের লোকজন।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, ‘শনিবার থেকে শুরু হওয়া ভারী বর্ষণে যশোর জেলার ১৪০ হেক্টর সবজির খেত পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এসব খেতে কৃষকেরা আগাম শীতকালীন সবজি যেমন- টমেটো, পাতাকপি, ফুলকপি ও পালংশাক চাষাবাদ করেছিলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত শতকরা ২৫ ভাগ কৃষি জমি বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রোববার সারাদিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে। সারাদেশে মোট সবজি চাহিদার প্রায় ৬৫ ভাগ যশোর জেলায় আবাদ করেন কৃষকরা।’
রোববার সকালে যশোর শহর ঘুরে দেখা গেছে, বর্ষণে তলিয়ে গেছে যশোর পৌর এলাকার নিম্নাঞ্চল। বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে শহরের বেজপাড়া, টিবি ক্লিনিকপাড়া, স্টেডিয়াম পাড়া, শংকরপুর, মিশনপাড়া, উপশহর, চাঁচড়া, কারবালা, এমএম কলেজ এলাকা, নাজিরশংকরপুর, বকচর, আবরপুরসহ আরো কয়েকটি এলাকার প্রায় ৩০টি সড়ক। এরমধ্যে শংকরপুর, বেজপাড়া, খড়কি, কারবালা, স্টেডিয়ামপাড়ার অনেক বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। এসব এলাকার ড্রেনের উপচে পড়া পানি সড়ক পার হয়ে ঘরের মধ্যেও ঢুকে পড়েছে। ফলে দুর্ভোগে রয়েছেন মানুষরা।
এ বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়েছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা। যশোর জিলা স্কুলের এক শিক্ষার্থী নয়ন হোসেন বলেন, ‘বৃষ্টিতে স্কুলে যেতে পারিনি। ছাতাও বৃষ্টির পানি মানছে না। বাড়ি থেকে বের হলে রাস্তায় হাটু সমান পানি। স্কুল ড্রেস ভিজে যাচ্ছে। বই খাতাও ভিজে যাওয়ার মতো অবস্থা।’
খড়কি এলাকার ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বৃষ্টিতে সড়কে হাটু পানি জমেছে। সড়কের পাশে ড্রেন থাকলেও আবর্জনায় পূর্ণ হওয়ায় পানি উপচে সড়কে প্রবেশ করেছে। সড়কের সেই পানি আবার দোকানে প্রবেশ করেছে। সড়ক নিচু আর ড্রেন হয়ে গেছে উঁচু। তাই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। উপায় না পেয়ে ব্যবসায়ীরা যে যার মতো দোকান থেকে পানি নিষ্কাশন করছেন।’
শংকরপুর এলাকার সালেহা বেগম বলেন, ‘বাড়িঘরে পাানি উঠেছে। ঘরের ভেতরেও অনেক পানি। পরিবার নিয়ে অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েছি।’
যশোর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতকাল শনিবার ৮১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। রোববার সকাল ১১টা পর্যন্ত ৩১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে যশোরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। কখনো ভারী, কখনো হালকা এই বৃষ্টিপাত আজ বিকেল পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত যশোরে ১০৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টির এই ধারা অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস রয়েছে।