ক্যাম্পাস

রাবি অধ্যাপক আল মামুনকে অপসারণের দাবি শিক্ষার্থীদের

অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরীকে বিভাগ থেকে অপসারণের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (২ অক্টোবর) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসমাইল হোসেন সিরাজী ভবনে বিভাগের সামনে এ বিক্ষোভ করেন তারা।

এ সময় ‘এক দুই তিন চার মামুন তুই আইআর ছাড়’, ‘জেগেছে রে জেগেছে আইআর বাসী জেগেছে’, ‘এক দফা এক দাবি মামুন তুই কবে যাবি?’, ‘মামুনের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে’, ‘অ্যাকশন টু অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ ইত্যাদি স্লোগান দেন তারা।

শিক্ষার্থীরা মামুনের বিরুদ্ধে বোরখাকে পতিতাবৃত্তির সঙ্গে তুলনা, খোলামেলা পোশাকের দোহাই দিয়ে অশোভন মন্তব্য, বিভাগের উন্নয়ন তহবিলের অর্থ আত্মসাৎ, গণ বিপ্লবের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য নগদ অর্থের প্রলোভন, অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, ফল বিপর্যয় ও পাঠদানে ফাঁকি দেওয়াসহ নানা অভিযোগ তুলে ধরেন ।  বিগত ছয় বছর বিভাগের সভাপতি থাকা অবস্থায় বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি ও বর্তমান সভাপতিকে জোরপূর্বক পদত্যাগ করতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। 

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রাইয়ান বিনতে হাবিব বলেন, আমরা ১০-১২ জন তার চেম্বারে গিয়েছিলাম একটা কাজে। তিনি কাজের কথা বলা বাদ দিয়ে আমাকে বলেন, ‘তুমিতো গেঞ্জি পরো! তুমি গেঞ্জি পরো এটা তোমার কাছে নর্মাল। কিন্তু ছেলেদের তো এসব দেখলে মাথা খারাপ হয়ে যাবে।’ তিনি আজব আজব অঙ্গভঙ্গি করে আমাকে বলেন, ‘সমাজে যারা এসব ড্রেসাপ পরে তারাই টার্গেটেড থাকে। আর তারাই ধর্ষণের শিকার হয়।’ কিন্তু তিনি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন, তিনি নাকি মেয়েদের পোশাক নিয়ে কথা বলেন না।

তিনি বলেন, একদিন ক্লাসে আমার এক বান্ধবী বোরখা পরা ছিল। তিনি আমাদের দুজনকে তুলনা করে বলেন, আমরা নাকি কেউই বাঙালি সংস্কৃতির অংশ না। কারণ আমি ফতোয়া পরে ছিলাম, আর আমার বান্ধবী বোরখা। আমার সেই বোরখা পরা বান্ধবীকে তিনি ‘জঙ্গি’ বলেন। এভাবে প্রায়ই আমাদের ক্লাসে অপমান করা হতো।

আন্তর্জাতিক বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী নওশিন ইসলাম বলেন, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে গত ছয় বছর ধরে শিক্ষার্থীদের ওপর নানা রকম অনিয়ম অত্যাচার করে আসছেন। বিভাগের সেশনজট, অর্থ কেলেঙ্কারি ও যৌন হয়রানির সঙ্গে তিনি জড়িত। বোরকা পরাকে তিনি পতিতাবৃত্তি বলেছেন। এ রকম শিক্ষককে আমরা আমাদের বিভাগে চাই না। আমাদের বিভাগের না হয়েও তিনি এখানে থাকার জন্য নানারকম তালবাহানা শুরু করেছেন। আমরা উপাচার্য বরাবর একটি দরখাস্ত দিয়েছি কিন্তু এখনো কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি।

ওমর ফারুক তুফান নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, তিনি দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের বিভাগে অনিয়ম দুর্নীতি করে আসছেন। তিনি ইতিহাস বিভাগ থেকে আমাদের বিভাগে সভাপতি হয়ে আসছিলেন। তার আগেই চলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি অনিয়ম ও দালালী করে থেকে গেছে। কিন্তু আমরা তাকে এ বিভাগে আর দেখতে চাই না। আমরা বর্তমান সভাপতি স্যারকে গতকাল (মঙ্গলবার) লিখিত অভিযোগ দিয়েছি কমিটি করার জন্য।

বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী রাউফু ইসলাম ইতু বলেন, তার বিরুদ্ধে যে অবস্থান তৈরি হয়েছে, তার জন্য তিনি নিজেই দায়ী। তিনি এই বিভাগে থাকলে সবাই বিপদে থাকবে। তার যখন মন চাচ্ছে, যার-তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন। আমাদের শিক্ষকরাও সেইফ না তার কাছে। ক্লাসে পড়ানোর নামে তিনি পারিবারিক গল্প করেন। তিনি আমাদের সিনিয়রদের ছাত্রত্ব বাতিলের হুমকি পর্যন্ত দিয়েছেন। এছাড়া জুলাই বিপ্লবে খুনি হাসিনার পক্ষ নিয়েছেন, ছাত্র হত্যার পক্ষে ফেসবুকে পোস্টও করেছেন। আমরা আর তাকে এই বিভাগে দেখতে চাই না।