গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লিফট দুর্ঘটনায় মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) দিবাগত রাতে রোগীর এক স্বজন নিহত হয়েছে। চলতি বছরে এ হাসপাতালে লিফটে আটকা পড়ে একজনের মৃত্যু হয়। ফলে হাসপাতালের লিফটে উঠতে রোগী ও স্বজনেরা ভয় পাচ্ছেন। অধিকাংশ মানুষ সিড়ি ব্যবহার করছে। এতে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে।
এ ঘটনার তদন্তে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির গঠন করা হয়েছে।
কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকার জাহিদুল ইসলাম (৪০) তার শিশু সন্তান নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন। মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে সন্তানকে শিশু ওয়ার্ডে রেখে তিনি হাসপাতালের নিচে যাচ্ছিলেন। তবে তার জানা ছিল না লিফট নষ্ট। লিফট নষ্ট এমন নির্দেশনাও ছিল না। ফলে লিফটে উঠতে গিয়ে ১০ তলা থেকে পড়ে তিনি মারা যান। গত ১২ মে লিফটে আটকা পড়ে মমতাজ (৫০) নামে রোগীর মৃত্যু হয়। ৩ মে একই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগী ১২ তলা থেকে পড়ে মারা যায়।
নিহত জাহিদুলের শ্যালিকা সুমাইয়া বলেন, ‘দুলাভাই আমার বোন ও ভাগনিকে নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন। তাদের সঙ্গে আমিও ছিলাম। রাত সাড়ে ১১টার দিকে নিচে নামার জন্য লিফটে কল করেন ১০ তলা থেকে। তবে ওই লিফট নাকি নষ্ট ছিল, লিফটমানও ছিল না। তিনি লিফট কল করলে দরজা খুলে যায় কিন্তু লিফট আসেনি। তিনি ভেতরে পা দিলে সঙ্গে সঙ্গে নিচে পড়ে যান। পরে দৌড়ে নিচে এসে চিৎকার করলেও কোনো লিফটম্যান আসেনি। কিছুক্ষণ পর সবাই এসে লিফটের নিচ থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় দুলাভাইকে উদ্ধার করি। ততোক্ষণে তিনি মারা যান। এখন আমার বোন-ভাগনির কী হবে?’
শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে আসা আকাশ ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, এই লিফটে গত কয়েক দিন ধরে সমস্যা থাকলেও কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ নেয়নি এবং কাউকে সর্তকও করেনি। এখানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও লিফট ম্যান উভয়ই দোষী।
ওই ঘটনার পর থেকে লোকজন হাসপাতালের লিফটে উঠতে ভয় পাচ্ছে। পরপর লিফট দুর্ঘটনায় মৃত্যু ও ঘনঘন লিফট বিকল হয়ে যাওয়ায় অনিরাপদ মনে করে সবাই এড়িয়ে চলেছে। এতে শঙ্কা কমলেও বেড়েছে ভোগান্তি। পায়ে হেঁটে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে সময় যেমন লাগছে, তেমনি বয়স্ক ও শিশুদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে।
আনোয়ার হোসেন একজন বলেন, এই হাসপাতালের কোনো কিছু ঠিক নেই। সবাই দায়সারা হয়ে চলেছে। লিফটম্যান থাকে না। লিফট বন্ধ হয়ে যায়, দুর্ঘটনা ঘটে; কোনো প্রতিকার হয় না। এদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত, কীভাবে দুই দিন পরপর দুর্ঘটনা ঘটে।
শাহিনুর রহমান নামে একজন বলেন, ‘সচেতন মানুষ যারা তারা এ হাসপাতালের লিফট ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে। আমিও ওই হাসপাতালে গেলে লিফট ব্যবহার করি না। লিফটে উঠলে মনে হয় এই বুঝি বন্ধ হয়ে যাবে। লিফটের এ সমস্যা দ্রুত সমাধান করা দরকার।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালের লিফট স্থাপন করেছে গাজীপুর গণপূর্তের ইলেকট্রিক বিভাগ। এর রক্ষণাবেক্ষণও করেন তারা। লিফটের ত্রুটির জন্য তারাই দায়ী। ঘটনার তদন্তে চার সদস্য বিশিষ্ট কমিটির গঠন করা হয়েছে।
গাজীপুর গণপূর্তের ইলেকট্রিক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হালিমের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি। পরে তিনি মুঠোফোন বন্ধ করে রাখেন।