চট্টগ্রামে পরপর দুটি তেলবাহী জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১০ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।
রোববার (৬ অক্টোবর) চট্টগ্রামে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের কনফারেন্স রুমে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান এবং পরিচালকসহ শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এ সব কথা বলেন।
বিএসসির তেলবাহী জাহাজে প্রথম অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে গত ৩০ সেপ্টেম্বর। ওইদিন সকালে বন্দরের ডলফিন জেটিতে পাইপলাইনের মাধ্যমে ইস্টার্ন রিফাইনারিতে ক্রুড অয়েল খালাসের সময় জাহাজ এমটি বাংলার জ্যোতির সামনের অংশে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ওই সময় জাহাজটিতে ১১ হাজার ৭০০ টন ক্রুড অয়েল ছিল। আগুনের ঘটনায় একজন ক্যাডেটসহ তিন জন নিহত হয়।
এ ঘটনার পাঁচ দিন পর শুক্রবার (৪ অক্টোবর) মধ্যরাতে বহির্নোঙ্গরে একটি মাদার ভ্যাসেল থেকে ক্রুড অয়েল লাইটার করে নিয়ে আসার সময় চার্লি অ্যাংকরেজে এমটি বাংলার সৌরভে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। জাহাজ থেকে নামার সময় পানিতে পড়ে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজন ক্রু মারা যায়। জাহাজটিতেও ১১ হাজার ৫৫ টন ক্রুড অয়েল ছিল।
শুক্রবারের ঘটনার পর এ জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তার স্বার্থে ‘নাশকতা’ আছে কি-না সন্দেহ প্রকাশ করেন বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কমডোর মাহমুদুল মালেক।
উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ছোটখাট ঘটনা ঘটলেও আপনাদের মনে সন্দেহ জাগতে পারে, এটা অন্য কোনো ব্যাপার কি না। সে সন্দেহ যাতে দূর হয় এবং প্রকৃত বিষয়টা বের করে আনতে পারি…একটা বেশ বড় এনকোয়ারি কমিটি, যেখানে সব ধরনের এক্সপার্টরা থাকবে। সিকিউরিটি এক্সপার্ট থেকে শুরু করে যারা অয়েল ট্যাংকারে কাজ করেছেন এবং বিএসসির প্রতিনিধি নিয়ে ৯-১০ জনের কমিটি তৈরি করা হয়েছে।’
সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘যেহেতু দুটো জাহাজ বিস্ফোরণের কারণে অকেজো হয়ে গেছে, তার বিকল্প হিসেবে অন্যান্য জাহাজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, যাতে লাইটারিং জাহাজরে কার্যক্রম অব্যাহত থাকে। আমি কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী এবং পোর্ট কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে গিয়ে আগুন নিভিয়েছে এবং সেখানে আটকে পড়া ৪৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করতে পেরেছে। নেভাল চিফ, বন্দর চেয়ারম্যান, কমান্ডার থেকে শুরু করে সবার সঙ্গে আমার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল। ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত আমি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। তারা আমাকে জানিয়েছে, সবাইকে উদ্ধার করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশি উদ্যোক্তা, যারা বিদেশে ব্যবসা করেন; তারা জাহাজ এবং পাটে বিনিয়োগ করতে ইচ্ছা পোষণ করেছেন। আমি বিদেশিদের আহ্বান জানাই, তারা যেন আমাদের জাহাজ শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ায় এবং একসঙ্গে কাজ করেন; এ শিল্পকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেন।’
চীন থেকে জাহাজ কেনায় দূর্নীতির অভিযোগ উঠছে বলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের একটা টিম জাহাজ কেনার বিষয় নিয়ে কাজ করছে। আগের যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল, ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় জাহাজের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু আমরা নেগোসিয়েশনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তারা যে দাম নির্ধারণ করেছেন, সেটা থেকে কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। জাহাজ আমাদের প্রয়োজন, তাই আমরা যাতে সেগুলো কিনতে পারি; সেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি। জাহাজ কেনার ব্যাপারে দুর্নীতির যে প্রশ্নগুলো উঠছে, মন্ত্রণালয় এ সব ব্যাপারে দুদকের সাহায্য নেবে এবং দুদক তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’