গত ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সহিংসতার ঘটনায় তিন দিনের অবরোধের ডাক দেয় বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র সমাজ। এতে সাজেক ভ্রমণে গিয়ে আটকা পড়েন প্রায় দেড় হাজার পর্যটক। তিন দিন পর তারা সাজেক ছাড়তে পারলেও পর্যটকদের জন্য অনেকটাই দরজা বন্ধ হয়ে যায় সাজেকের।
২৪ সেপ্টেম্বর আটকা পড়া পর্যটকরা সাজেক ত্যাগের পরই রাঙামাটির জেলা প্রশাসন সাজেক ভ্রমণে পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করে। যা ‘নিষেধাজ্ঞা’র শামিল বলছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। সাজেকের সেই অবরুদ্ধ দুয়ার তিন দফা বাড়িয়ে গত শুক্রবার (৪ অক্টোবর) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য করা হয়েছে। এতে লোকসানে পড়েছেন স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
সাজেক রিসোর্ট-কটেজ মালিকর সমিতির তথ্যমতে, সাজেকে ১১৬টি হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ রয়েছে। রেস্তোরাঁ আছে ১৪টির বেশি। তবে নেই কোনো বেচা-বিক্রি। এতে প্রতিদিন ৭০-৮০ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে বলে দাবি করা হয়েছে।
সাজেকের ব্যবসায়ী সুমন চাকমা বলেন, ব্যবসায়ীদের যে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে তা বলে বোঝানোর মতো না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। প্রথমে তিন দিন করে ৯ দিন। এখন তা অনির্দিষ্টকালের জন্য। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা ছাড়তে হবে।
মেঘপল্লী রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী শাহ আলম বলেন, আমাদের কটেজে ছুটির দিন ছাড়াও রুম বুকিং থাকত। দুই সপ্তাহে আমাদের ক্ষতি প্রায় ৫-৭ লাখ টাকা। পূজার ছুটিতে দিনে অন্তত তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার পর্যটক সাজেক ভ্রমণ করতেন।
সাজেক পরিবহন মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইব্রাহিম বলেন, গত ২০ সেপ্টেম্বরের পর থেকে কোনো পর্যটক না আসায় পরিবহন ব্যবসায়ীদের প্রায় এক কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকে প্রতিদিন গড়ে ৫০-৬০টি জিপ যাতায়াত করে। আর সরকারি ছুটির দিনে সেটা আরও বাড়ে।
সাজেক রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক রাহুল চাকমা জন বলেন, সাজেকে পর্যটক না আসায় প্রতিদিন ৭০-৮০ লাখ টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে। কারণ পর্যটক না আসলেও স্টাফদের বেতন, ভাড়া, বিদ্যুৎ-পানির বিল কিছুই তো বন্ধ নেই।
তিনি বলেন, শুধু রিসোর্ট-কটেজ কিংবা রেস্টুরেন্ট মালিকদের লোকসান হচ্ছে না। পর্যটকদের বহনে জিপ চালক, হেলপারদের অলস সময় দিন কাটাতে হচ্ছে। এছাড়া সাজেকে স্থানীয় পাহাড়িরা তাদের বাগানে উৎপাদিত ফলমূল, বাঁশকোড়লসহ হাতে বানানো অনেককিছুই বিক্রি করেন। তাদের আয়ও বন্ধ হয়ে গেছে।
রাহুল চাকমা বলেন, স্থায়ী সমাধান না হলে সাজেকে ব্যবসা করে শান্তি পাওয়া যাবে না। প্রশাসনের কাছে দাবি, সব পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার। সুন্দর পরিবেশ থাকলে পর্যটকদের সাজেক ভ্রমণে সমস্যা হবে না।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান বলেন, বর্তমানে পার্বত্য জেলায় যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাতে যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে আমরা এই নির্দেশনা দিয়েছি। পরিস্থিতি উন্নতি সাপেক্ষে শিগগিরই সেটা তুলে নেওয়া হবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় সকলকে ধৈর্য, সতর্ক ও প্রশাসনকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তিনি।