শেরপুরে নদীর পানি কিছুটা কমেছে। বন্যার পানি কমতে থাকায় বিধ্বস্ত বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছেন মানুষ। অন্যত্র আশ্রয় নেওয়া মানুষজন আসবাবপত্র নিয়ে নিজ ঘরে ফিরছেন। অনেকে বাড়িঘরে ফিরে মেরামত ও পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করেছেন।
এদিকে গত চারদিনে বন্যার পানিতে নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও নকলা উপজেলায় মোট ৮ জন মারা গেছেন। এছাড়া এখনও পানিবন্দি রয়েছেন সহস্রাধিক পরিবার। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নালিতাবাড়ী এবং ঝিনাইগাতী উপজেলার প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষেরা। তাদের অনেকেরই মাটির ঘর পানির সাথে মিশে গেছে। তবে নালিতাবাড়ি উপজেলা বেশ কিছু উঁচু এলাকার পানি গতকাল রাত থেকে সকাল পর্যন্ত নকলা উপজেলায় নেমে আসার পর তা নকলা উপজেলার কয়েকটি গ্রামে ঢুকেছে।
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলার ভোগাই নদীর নাকুগাও পয়েন্টের পানি ৭৫ সেন্টিমিটার নিচে দিয়ে, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদ সীমার ৫৪০ সেন্টিমিটার নিচে, ভোগাই নদী নালিতাবাড়ি পয়েন্টে পানি ১৩৮ সেন্টিমিটার নিচে এবং চেল্লাখালীর বাতকুচি পয়েন্টে পানি ৭৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
শেরপুর জেলায় ৩০১ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যাকবলিত হয়েছে। এর মধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ২৪২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। আর আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ৫৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বেশি বন্যাকবলিত হয়েছে নালিতাবাড়ি উপজেলা। উপজেলার ১২ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার ১২১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১১৯টি বন্ধ রয়েছে।
এছাড়াও ঝিনাইগাতী এবং নালিতাবাড়ী উপজেলায় ২ হাজার ৫৭টি মাছের ঘের ভেসে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রাথমিক হিসাবে ১১ কোটি টাকার বেশি। এছাড়াও জেলার অন্তত ২০ হাজার হেক্টর আমন আবাদ এবং এক হাজার হেক্টর সবজির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে অন্তত ৬৫ হাজার ৪০০ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুম রানা বলেন, নালিতাবাড়ীতে আমরা মোট ১২৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছি। কেন্দ্র গুলোতে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। আজ নতুন করে কোন বৃষ্টি হয়নি। এছাড়াও নদীর পানিও কমে গেছে। আমরা দুর্গত মানুষদের বাড়িতে ফেরানোর কাজ করছি।
জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, শেরপুর জেলার তিনটি প্রধান নদীর পানিই আজ বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন দুর্গতদের মাঝে প্রায় ১৫ হাজার শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও দুর্গতদের পুনর্বাসনের জন্য টিন ও নগদ অর্থের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পানি আরও একটু কমলেও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে বিতরণ করা হবে।