দেশের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে স্পট মার্কেট থেকে এক কার্গো এলএনজি আমদানির একটি প্রস্তাবসহ ছয়টি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ৩৭০ কোটি ৮১ লাখ ৫ হাজার ৯২০ টাকা।
বুধবার (৯ অক্টোবর) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রস্তাবগুলো অনুমোদন দেওয়া হয়।
সভা সূত্রে জানা গেছে, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮ অনুসরণে মাস্টার সেল অ্যান্ড পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (এমএসপিএ) স্বাক্ষরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে থেকে কোটেশন প্রক্রিয়ায় স্পট মার্কেট থেকে (২০২৪ সালের ২৮তম) এলএনজি আমদানির প্রত্যাশাগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির (সিসিইএ) সভার অনুমোদনক্রমে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি ক্রয়ের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত ২৩টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এমএসপিএ চুক্তি চূড়ান্ত করা হয়। পেট্রোবাংলা কর্তৃক ১ কার্গো এলএনজি সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ ২৩টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দরপ্রস্তাব আহ্বান করা হলে তিনটি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। তিনটি প্রস্তাবই কারিগরি ও আর্থিকভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স গানভর সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেডের কাছ থেকে প্রতি এমএমবিটিইউ ১৩.৯৩ মার্কিন ডলার হিসেবে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি ক্রয়ে ব্যয় হবে মোট ৬৫৭ কোটি ১৩ লাখ ৯৩ হাজার ৯২০ টাকা।
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় মরক্কো থেকে ৭ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন টিএসপি সার আমদানির একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। বিএডিসি কর্তৃক মরক্কো থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে টিএসপি সার আমদানি করা হয়। ইতোপূর্বে সম্পাদিত চুক্তির কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ায় বিদ্যমান চুক্তির শর্তসমূহ অভিন্ন রেখে ২০২৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তারিখে আবার চুক্তি নবায়ন করা হয়। সার আমদানি চুক্তিতে উল্লিখিত মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি অনুসারে মরক্কো থেকে ৭ম লটে ৩০ হাজার (+১০%) মেট্রিক টন টিএসপি সার কিনতে ব্যয় হবে বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য অনুযায়ী ১ কোটি ২৪ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১৪৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। প্রতি মেট্রিক টন টিএসপি সারের দাম পড়বে ৪১৫ মার্কিন ডলার।
সভায় ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ১০ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল (৫০ কেজির বস্তায়) ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের কাছে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে ১০ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল ক্রয়ের জন্য স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে চারটি দরপ্রস্তাব জমা পড়ে। চারটি দরপ্রস্তাবই কারিগরিভাবে ও আর্থিকভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপ্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স পায়েল ট্রেডার্স, চট্টগ্রাম এই মসুর ডাল সরবরাহ করবে। ১০ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল প্রতিকেজি ৯৬.৩৯ টাকা হিসেবে কিনতে মোট ব্যয় হবে ৯৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
সৌদি আরব থেকে ৩য় লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন (১০%+) বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। দেশটির সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে ৫ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানির জন্য চুক্তি হয়। সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি অনুসারে সারের মূল্য নির্ধারণ করে ৩য় লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন (১০%+) বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানিতে প্রতি মেট্রিক টন ৩৫৬.১৭ মার্কিন ডলার হিসেবে মোট ব্যয় হবে ১ কোটি ৬ লাখ ৮৫ হাজার ১০০ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১২৮ কোটি ২২ লাখ ১২ হাজার টাকা।
সূত্র জানায়, কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), বাংলাদেশের কাছ থেকে ৫ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাফকো, বাংলাদেশ থেকে ৫.৪০ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার ক্রয়ের সংশোধিত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ৫ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয়ের জন্য প্রাইস অফার পাঠানোর অনুরোধ করা হলে কাফকো, বাংলাদেশ প্রাইস অফার পাঠায়। কাফকোর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সারের মূল্য নির্ধারণ করে ৫ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগ গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার প্রতি মেট্রিক টন ৩৪৩.৩৭৫ মার্কিন ডলার হিসেবে মোট ব্যয় হবে ১ কোটি ৩ লাখ ১ হাজার ২৫০ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১২৩ কোটি ৬১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
সভায় স্বাস্থ্য বিভাগের ৪৫ মিলিয়ন খাবার বড়ি ক্রয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। টেকনো ড্রাগস লিমিটেড ও পপুলার ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড এসব বড়ি সরবরাহ করবে। এতে মোট ব্যয় হবে ২১৬ কোটি ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা।