খেলাধুলা

ক্যাচেই ঘুরলো ম্যাচের মোড়, সঙ্গে পুরোনো ‘রোগ’

দিল্লির দুর্গে অপরাজিত থেকে নেমেছিল বাংলাদেশ। শুরুটাও হয়েছিল তাই। ৪১ রান হতেই নেই ভারতের ৩ উইকেট। প্রায় ৩০ হাজার দর্শকের সামনে স্বপ্নের মতো শুরু। কিন্তু ভালো যেন সহে না। দারুণ শুরুর মধ্যে হঠাৎ ছন্দপতন। লিটন দাসের হাত ফসকালো নীতিশ কুমার রেড্ডির ক্যাচ। সঙ্গে ব্যাটিং ব্যর্থতার পুরোনো রোগ নিয়ে বাংলাদেশ খোয়ালো ম্যাচ।

দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে এক অঙ্কে (৫) জীবন পাওয়া নীতিশের গড়া ভিতে দাঁড়িয়ে রানের পাহাড় গড়ে ভারত। তাতেই কুপোকাত লাল সবুজের শিবির। টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে স্বাগতিক শিবির তোলে ২২১ রান। তাড়া করতে নেমে ১৩৫ রানে থামে বাংলাদেশ। এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ হারে বাংলাদেশ। ৮৬ রানের হারে ১ ম্যাচ বাকি থাকতে সিরিজ খোয়ায় বাংলাদেশ।

এমন পাহাড়সম রানের সামনে বাংলাদেশের ব্যাটিং কেমন হতে পারে তার চিত্রনাট্য যেন আগেই লিখে দেওয়া যায়। গোয়ালিয়র থেকে দিল্লি—স্থান বদলালেও বদলায়নি বাংলাদেশের ব্যাটারদের পারফরম্যান্স। রান প্রসবা দিল্লির উইকেটে হতাশার মিছিলে নিজেদের সহজাত ব্যাটিংয়ই করেছে।  

সর্বোচ্চ ৪১ রান করা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আউট হয়েছেন তখন ইনিংসের ৫ বল আর ১ উইকেট বাকি। অভিজ্ঞ এই ব্যাটার খরচ করেছেন ৩৯ বল। টি-টোয়েন্টির এই যুগে এমন ইনিংস এক শব্দে ‘অচল।’  আর কোনো ব্যাটার পেরোতে পারেননি বিশের বেশি রান।

  অথচ ব্যাট হাতে ঝড়ো শুরুর সম্ভাবনা দেখিয়েছিলেন পারভেজ হোসেন ইমন। আরশদীপকে তিন চারে প্রথম ওভারে নিয়েছিলেন ১৪ রান! তৃতীয় ওভারে এই আরশদীপেরই অফের বল টেনে নিতে মারতে গিয়ে বোল্ড! এরপর নাজমুল হোসেন শান্ত এসে টানা দুই চার! পরের ওভারে লিটন দাসের দারুণ ছয়! বাংলাদেশ ১ উইকেট হারিয়ে ৪ ওভারে ৩৮ রান নেয়, হারায় ১ উইকেট। এতটুক পর্যন্ত ঠিক, এরপর আর টি-টোয়েন্টি সুলভ কোনো ওভার ছিল না বললেই চলে। বাংলাদেশ হারাতে থাকে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট।

লিটন ১৪ রানের বেশি করতে পারেননি।  শান্ত থামেন ১১ রানে।  যার দিকে তাকিয়ে ছিল দল থেকে পুরো দেশ, সেই তাওহীদ হৃদয় আবারও ব্যর্থ।  এবার ২ রান করেন তিনি।  জাকের আলীও হতাশ করেছেন।  ১ রান করে ফেরেন সাজঘরে।  পাঁচে উঠে আসা মেহেদি হাসান মিরাজ ১৬ রান করেন ১৬ বলে। কোনো টেল এন্ডার দুই অঙ্কের দেখা পাননি।  ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ২টি করে উইকেট নেন নীতিশ কুমার-বরুণ চক্রবর্তী।

মিরাজের করা প্রথম ওভারে ১৫ রান নিয়ে ভারতের ইনিংস শুরু করেন অভিষেক শর্মা-সঞ্জু স্যামসন। দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে স্যামসনকে (১০) ফিরিয়ে শুভসূচনা করে দেন তাসকিন। পরের ওভারের শেষ বলে এবার তানজীমের আক্রমণ। দুই চার হজমের পর অভিষেককে (১৫) ফিরিয়ে প্রতিশোধ নেন তানজীম।

সূর্যকুমার যাদবকে সঙ্গে নিয়ে এগোতে থাকেন নীতিশ কুমার।  তানজীমের পরের ওভারে আসে দারুণ সুযোগ।  শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে গড়বড় করেন নীতিশ, টাইমিং হয়নি ঠিকঠাক, কিন্তু তালুবন্দি করতে পারেননি লিটন। ৫ রানে জীবন পেয়ে দারুণভাবে কাজে লাগান মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচে খেলতে নামা নীতিশ। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে সূর্যকুমারের আউটের পর নিতিশের ক্যাচ নিয়ে আরও বাড়ে আক্ষেপ।

জীবন পেয়ে নিতিশ দানবীয় রুপে ব্যাটিং করতে থাকেন। সঙ্গে ছিলেন রিংকু সিং। দুজনে মাত্র ৪৯ বলে যোগ করেন ১০৮ রান।  নিতিশ ফিফটি করেন ২৭ বলে।  ৩৪ বলে তার ব্যাট থেকে আসে ৭৪ রান।  ছয়ের মার ৭টি আর চারের মার ছিল ৪টি।  তার আউটের পর ভাঙ্গে এই জুটি।

রিংকুকে সঙ্গে নিয়ে নিতিশের এমন ঝড়ো ব্যাটিং বদলে দেয় ম্যাচের মোড়।  রিংকুর ব্যাট থেকে আসে ৩২ বলে ৫৩ রান।  রিংকুর ইনিংসে ছয়ের মার ছিল ৩টি আর চারের মার ছিল ৫টি।  শেষ দিকে হার্দিক পান্ডিয়া ১৯ বলে ৩২ ও রিয়ান পরাগের ৬ বলে ১৫ রান স্কোরবোর্ডকে করে পাহাড়সম।  

বাংলাদেশের হয়ে কৃপণ বোলিং করেন তাসকিন আহমেদ। ৪ ওভারে ১৬ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। ১৩তম ওভারে ২৬ রান দেওয়া মিরাজ ছিলেন সবচেয়ে খরুচে। মাত্র ৩ ওভারে তিনি দেন ৪৬ রান। রিশাদ হোসেন ৪ ওভারে ৫৫ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। দলীয় ১০ম ওভারে তিনি দিয়েছিলেন ২৪ রান। এ ছাড়া তানজীম হাসান সাকিব ৪ ওভারে ৫৫ ও মোস্তাফিজুর রহমান ৩৬ রান দিয়ে নেন সমান ২টি করে উইকেট।