ক্যাম্পাস

বুটেক্স শিক্ষক পরিচয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ 

বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) শিক্ষক পরিচয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে বৃত্তির প্রলোভন দেখিয়ে অভিভাবকদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের বুটেক্স শিক্ষক পরিচয়ে কল দেওয়া হচ্ছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

এদিকে, শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সংরক্ষিত থাকে। এ তথ্য কীভাবে বাইরে যায়, বিশ্ববিদ্যালয় দায়িত্বরত কেউ এর সঙ্গে জড়িত কিনা, তা নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন।

ভুক্তভোগী ৪৭তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে জানান, প্রথমে তার বাবার কাছে বুটেক্সের শিক্ষক পরিচয়ে কল দেওয়া হয় এবং তার ব্যক্তিগত তথ্য (বাবার নাম, মায়ের নাম, বৃত্তির টাকা যে অ্যাকাউন্টে আসে সে অ্যাকাউন্টের নাম্বার ইত্যাদি) বলে বৃত্তির ১৫হাজার ৭০০ টাকা পাঠানোর কথা বলেন। তারপর শিক্ষক পরিচয় দেওয়া ওই ব্যাক্তি বলেন, বর্তমানে কিছু সমস্যার কারণে অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়া যাবে না। এটিএম কার্ডের মাধ্যমে দিতে হবে বলে জানান। বাবার কাছে কার্ড না থাকায় তার বন্ধুর কার্ড নাম্বারের তথ্য দেওয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে প্রথমে ৩০ হাজার এবং পরে ২০ হাজারসহ মোট ৫০ হাজার টাকা কেটে নেওয়া হয় কার্ড থেকে।

এভাবে বৃত্তির প্রলোভন দেখিয়ে কল দেওয়ার বিষয়ে আরও অনেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন। তারা বলেন, বিগত কিছুদিন ধরেই তাদের অভিভাববদের ফোন দেওয়া হচ্ছে। ফোন দিয়ে একইভাবে ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করে এবং কোন ব্যাংকে বৃত্তির টাকা আসে তাও বলে। পাশাপাশি এটিএম কার্ডের তথ্য চায়। তবে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ও অভিভাবক তাদের ফাঁদে পা দেয়নি বলেও জানা গেছে।

ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তানভির হাসনাত তন্ময় বলেন, প্রথমে এটিএম কার্ডের তথ্য না দিয়ে কিছুক্ষণ পরে আব্বু আবার ওই নাম্বারে কল দেন এবং তার পরিচয় জিজ্ঞেস করেন। তিনি মিজানুর রহমান বলে পরিচয় দেন। আমার বাবা কিছুটা সচেতন বলে হয়তো এই ফাঁদে পা দেননি। কিন্তু অনেক অভিভাবক আছেন, যারা এই ফাঁদে পা দিতেই পারেন। আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য কীভাবে বাইরে যাচ্ছে, এসব বিষয়ে আমাদের জানা উচিত।

একই বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. ফাহিম বলেন, বিগত অনেকদিন ধরেই আব্বুর ফোনে কল আসছিল। রিসিভ করলে বুটেক্স থেকে কামরুজ্জামান স্যার পরিচয় দিয়ে বলেন ফাহিম বৃত্তির টাকা পেয়েছে ১২ হাজার ৫০০ টাকা। এটা নেওয়ার জন্য ফাহিমের এটিএম কার্ডের নাম্বার লাগবে।

টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী দিব্যজিৎ কুন্ডু অন্তু বলেন, এ রকম ঘটনা আমার সঙ্গে কিছুদিন আগে ঘটে। পরেরদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দপ্তরে গিয়ে আমি জিজ্ঞেস করি যে সত্যিই এমন কিছু লাগবে কি না। তারা এমন ব্যবহার করলো, মনে হলো আমি যেন প্রশ্ন করতে গিয়ে মহাপাপ করে ফেলেছি। কিন্তু, আমিও বলেছিলাম যে আমার ব্যক্তিগত তথ্য বাইরের লোক জানবে কেন? তখন তারা চুপ করে গিয়েছিল। এখন দেখছি আবার পুরোনো কায়দায় একই প্রতারণা শুরু হয়েছে। কিন্তু আমার এত তথ্য বাইরের লোক যে জেনেছে, সেটার জন্য ভেতরের লোকরা দায়মুক্ত হতে পারে না। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দায়িত্বে যারা আছেন, তারা আছেনই আমাদের সেবা দেবার জন্যে। তথ্য চাওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যাদের কাছে কল এসেছিল, তারা সবাই বোর্ড বৃত্তিপ্রাপ্ত। ধারণা করা হচ্ছে কোনোভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তিপ্রাপ্তদের ব্যক্তিগত তথ্য প্রতারক চক্রের হাতে গেছে। যার মাধ্যমে তারা প্রতারণার চেষ্টা করছে। যেসব নাম্বার থেকে কল এসেছে, তার মধ্যে- ০১৮১৭৪৬৮৯৪২, ০১৩২৯৯০৮২৪১ অন্যতম।

শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য কাউকে শেয়ার করা হয়েছে কিনা- এ ব্যাপারে অ্যাকাডেমিক সেকশনের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. শরীফুর রহমান শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য কারো কাছে শেয়ার করা হয় না বলে জানান। 

এদিকে, বুটেক্সের ওয়েবসাইটে সম্প্রতি সমাবর্তনে বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের ডেটা আপলোড করা হয়। শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত ডেটা কেনো উন্মুক্ত করা হলো এ নিয়ে 'বুটেক্স ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তন' গ্রুপে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বুটেক্স অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন নামে ওয়েব পেজ মুছে দেওয়া হলেও গুগলে সার্চ করলে এখনও অ্যালামনাইদের ডেটার পিডিএফ ফাইল পাওয়া যাচ্ছে। দায়িত্বরতদের এমন কার্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।

এছাড়া, বৃত্তির টাকার প্রলোভনে শিক্ষার্থীদের কল দেওয়ার সঙ্গে ক্যাম্পাসে চলমান অটোমেশনের কাজে দায়িত্বরতদের সঙ্গে যোগসূত্র আছে কিনা অভিযোগ করেন কেউ কেউ।

এ নিয়ে অটোমেশনের কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, যে অটোমেশন প্রজেক্টের কাজ চলছে, তার জন্য কেবল ৫০তম ব্যাচের তথ্য নেওয়া হয়েছে। অন্যান্য ব্যাচের তথ্য তাদের কাছে নেই। আর বৃত্তির তথ্যও তাদের কাছে নেই, কারণ সেগুলো তাদের প্রয়োজনও নেই। ডেটা বাইরের ছড়ানোর বিষয়ে দ্রুত তদন্ত করা প্রয়োজন বলেও জানান তারা।

অ্যাকাডেমিক সেকশন হয়েছে বলেও মনে করছেন বেশিরভাগ শিক্ষার্থী। সার্বিক ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. উম্মুল খায়ের ফাতেমা জানান, এ বিষয়ে তিনি অবগত এবং তিনি সহকারী প্রক্টরদেরও এ ব্যাপারে অবগত করেছেন। অ্যাকাডেমির কার্যক্রম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি এই ব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ এর সঙ্গে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে থানায় সাধারণ ডায়েবি করার পরামর্শ দেন।

তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কখনো এমন ফোনকল করা হয় না এবং হবেও না। তবে এখন যেহেতু পূজোর ছুটির কারণে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ। তাই আপাতত তিনি শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকতে বলেন এবং এ ধরনের প্রতারক চক্রর কাছে কোনো ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান বা অর্থিক লেনদেন করা থেকে  বিরত থাকার পরামর্শ দেন।