সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে টাঙ্গাইলের নাগরপুরে। উপজেলার চৌধুরী বাড়ি এলাকায় ৫৪ বছর ধরে একই আঙিনায় পাশাপাশি মসজিদ-মন্দিরে দুই ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ধর্মমতে নামাজ আদায় ও পূজা পালন করে আসছেন। এ বছরও মসজিদের পাশেই মন্দিরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুর্গাপূজা। আজান ও নামাজের সময় বন্ধ থাকছে পূজার কার্যক্রম।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৯৪ বছর আগে চৌধুরী বাড়িতে উঝা ঠাকুর কেন্দ্রীয় দুর্গা মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর থেকে প্রতি বছর ধুমধাম করে দুর্গাপূজা পালন করে আসছেন এলাকার সনাতন ধর্মের লোকজন। মন্দির প্রতিষ্ঠার প্রায় ৪০ বছর পর একই আঙিনায় নির্মাণ করা হয় নাগরপুর চৌধুরী বাড়ি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ। একই স্থানে মসজিদ আর মন্দির নিয়ে কখনো কোনো দ্বন্দ্ব বা সাম্প্রদায়িক হানাহানি হয়নি। হিন্দু-মুসলিমরা যার যার ধর্ম পালন করে আসছেন।
বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সরেজমিনে দেখা যায়, মন্দিরে চলছে পূজা-অর্চনা। পূজারি ও দর্শনার্থীরা আসছেন, প্রতিমা দেখতে এবং পূজায় অংশ নিতে। নির্ধারিত সময়ে আজান শুরুর আগেই থেমে যায় পূজার যাবতীয় কার্যক্রম। নামাজ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পর আবার বেজে ওঠে মন্দিরের মাইক, ঢাক-ঢোল। দেওয়া হয় উলুধ্বনি। শুরু হয় পূজার কার্যক্রম।
লিপি চক্রবর্তী নামে এক নারী বলেন, ৫৪ বছর ধেরে এখানে পূজা করছি। মসজিদ ও মন্দির পাশাপাশি থাকলেও আমাদের কোনো সমস্যা হয় না। মুসলিম ধর্মের মানুষ আমাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেন। আমরাও নামাজ ও আজানের সময় পূজা বন্ধ রাখি। যুগ যুগ এই সম্প্রীতি বজায় রয়েছে। হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই। আমরা একসঙ্গে মিলেমিশে থাকি। কোনদিন দুই ধর্মের মানুষদের মধ্যে কোনো বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেনি। আশা করি, ভবিষ্যতেও ঘটবে না।
চৌধুরী বাড়ি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান সোহেল বলেন, জন্মের পর থেকেই মসজিদ-মন্দির পাশাপাশি দেখছি। সনাতন ধর্মের লোকজন এখানে পূজা করেন। আমরা তাদের সহযোগিতা করি। সব সময় লক্ষ্য রাখি, যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়।
মন্দির কমিটির সভাপতি লিটন কুমার সাহা পোদ্দার বলেন, মন্দিরটা বহু বছরের পুরনো। পাশেই একটি মসজিদ রয়েছে। হিন্দু-মুসলমান আমরা যার যার ধর্ম পালন করি। মুসলিম ভাইয়েরা আমাদের সহযোগিতা করেন। কখনো কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আশা করি, ঘটবেও না। আমরা যেমন মুসলমানদের ঈদে আনন্দ করি। তেমন তারা আমাদের পূজায় আনন্দ করেন।
চৌধুরী বাড়ি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা আব্দুল লতিফ মিয়া বলেন, ৩৭ বছর ধরে এই মসজিদের ইমামতি করছি। আমাদের মধ্যে কোনো ঝগড়া-বিভেদ নেই। আজান-নামাজের সময়সূচী তাদের দেওয়া আছে। নামাজ ও আজানের সময় তারা বাজনা বন্ধ রাখে। আমরাও তাদের সার্বিক সহযোগিতা করি। নামাজ শেষে তারা আবার তাদের ধর্মীয় উৎসব পালন করেন।
নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) দীপ ভৌমিক বলেন, বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এর একটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত চৌধুরী বাড়ি। একই আঙিনায় রয়েছে মসজিদ-মন্দির। মুসলমানরা নামাজের সময় নামাজ আদায় করেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পূজার সময় পূজা করেন। বিগত বছরের মতো এবারও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপিত হচ্ছে।