বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় উৎসবের নাম দুর্গাপূজা। শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে সিরাজগঞ্জের প্রতিটি সড়কে লাল-নীল-হলুদ-সবুজ আলোয় সাজানো হয়েছে। বর্ণিল এ আলোর ঝলকানি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীারা দলে দলে ভিড় করছে।
জেলাশহরের পূজামণ্ডপে মুখরোচক খাবার ঝুড়ি, মোয়া, তিলের খাঁজা, রকমারি খেলনার দোকান জমে উঠেছে। আজ শনিবার (১২ অক্টোবর) শারদীয় দুর্গাপূজার নবমী। আগামীকাল রোববার (১৩ অক্টোবর) দেবী বির্সজনের মধ্য দিয়ে পূর্জা শেষ হবে।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সিরাজগঞ্জ শহরের মুজিব সড়ক, এসএস রোড, বাজার স্টেশন সড়কের বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ঘুরে ভক্ত, সাধারণ মানুষ ও দর্শনার্থী এবং তাদের সঙ্গে আসা শিশুদের রকমারি খেলনা ও মুখরোচক খাবার কেনার দৃশ্য চোখে পড়ে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মুজিব সড়কে শ্রী শ্রী মহাপ্রভুর আখড়া, যুগল কিশোর মন্দির, কালিবাড়ী মন্দির, বানিয়াপুট্টি কালী মাতা মন্দির, মারোয়ারিপুট্টি মন্দির, নিমতলা পুজামণ্ডপ, হরিজন কলোনী পুজামণ্ডপ, স্টেডিয়াম রোড পূজামণ্ডপ এলাকায় রাস্তার দুইপাশে মাটির তৈরি রকমারি পণ্য, ছোট ছোট চৌকির উপরে সাদা ঝুড়ি, গুড়ের বুন্দা, চিড়ার মোয়া, তিলের খাজা, লাড্ডুসহ বিভিন্ন রকমের মুখরোচক খাবারের পসরা বসিয়েছে দোকানিরা। খেলনার মধ্যে রয়েছে মাটি, লোহা ও প্লাস্টিকের তৈরি মাছ, আম, টিয়া, তরমুজ, হাতি, হাঁড়ি-পাতিল, গরু, বিড়াল, হাঁস, মোরগ, পুতুল, বাঘ, হরিণ, ফুলদানি, মাটির ব্যাংক ইত্যাদি। নারী-পুরুষ এবং পূজা দেখতে আসা শিশুরা মা-বাবার সঙ্গে দোকানে ভিড় করছে।
শহরের জ্ঞানদায়িনী উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলনা সামগ্রীর দোকান নিয়ে বসেছে লুৎফর হোসেন। তিনি বলেন, প্রতি বছর পূজার সময় এখানে খেলনা বিক্রি করেন। মাটির তৈরি সামগ্রী পূজার সময় বেশি বিক্রি হয়। এখন বিক্রি বেড়েছে। মাটির তৈরি খেলনা ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের পুতুল, প্লাস্টিকের ফুলের সামগ্রী, পিস্তল, হারমোনিয়াম, গিটার, বিড়ালসহ বিভিন্ন ধরনের খেলনা রয়েছে। পূজার শেষ দিন মেলাতে বেচাকেনা বাড়ে বলে তারা জানান।
পাশের আরেক দোকানি তরিকুল ইসলাম বলেন, রায়গঞ্জের পাঙ্গাসী গ্রাম থেকে এখানে এসেছেন। বিভিন্ন খেলনা বিক্রি করেন। মাটি ও প্লাস্টিকের বিভিন্ন জিনিসপত্রও রয়েছে। তার দোকানে মাটির ছোট হাড়ি, কলস, বিভিন্ন খেলনা রয়েছে। কেউ শখের বসে বা ছোটদের উপহার দেওয়ার জন্য এ সব কিনে নিয়ে যাচ্ছে। পূজায় তার ৪০ থেকে ১ লাখ টাকা বিক্রি হয়। এবার মানুষের উপস্থিতি অনেক বেশি এবং কেনাবেচা ভালো হচ্ছে বলে জানান তিনি।
মুক্তা প্লাজার সামনে মুখরোচক খাবারের পসরা বসানো আল-আমিন, হৃদয় হোসেন ও রফিকুল ইসলাম বলেন, পূর্জায় অনেকে ঘুরতে আসেন। তারাও মুখরোচক খাবার কিনে নিয়ে যায়। বর্তমানে সাদা ঝুড়ি ৩০০ টাকা, গুড়ের তৈরি ঝুড়ি ২০০ টাকা, চিনির তৈরি হাতি-ঘোড়া ২৮০ টাকা ও তিলের খাজা ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চিড়ার খাঁজা ১ প্যাকেট ৫০ টাকা, লাড্ডু ৮ পিচের ১ প্যাকেট ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতা শিল্পী দাস, মিঠুন চন্দ্র, হাবিবুর রহমান, শাকিল হোসেন জানান, শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে প্রতিবছর পূজামণ্ডপে হরেকরকম খেলনা ও বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবারের দোকান বসে। শিশু, কিশোর-কিশোরী মাটির তৈরি ও প্লাস্টিকের পণ্য বেশি পছন্দ করে। তাদের পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে বিভিন্ন সামগ্রীর পসরা সাজানো হয় এবং হরেকরকম খেলনা সামগ্রী নিয়ে বসেন দোকানিরা। বড়রা বাসাবাড়িতে সাজিয়ে রাখার জন্য মাটির তৈরি সামগ্রী কিনে থাকে। নারী ক্রেতারা মাটির তৈরি ব্যাংক, বিভিন্ন শো-পিচ বেশি কেনে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পূজামণ্ডপ পরিদর্শন শেষে ভক্ত ও দর্শনার্থীরা তাদের সঙ্গে আসা শিশুদের নিয়ে এসব সামগ্রী কিনতে দোকানে ভিড় করছেন।
সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ জানান, জেলার ৯টি উপজেলায় ৪৯৯টি মণ্ডপে পূজা উদযাপন করা হচ্ছে। পূজায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি পূজামণ্ডপে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় স্থানীয় প্রশাসন, র্যাব ও সেনাবাহিনী কাজ করছে। এছাড়াও মোবাইল টিম সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখছে। পাশাপাশি সবকটি মণ্ডপে গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। এর পাশাপাশি মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবীরা নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন।