বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত কলেজ শিক্ষার্থী শহীদ সবুজ মিয়া চলতি ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৩৩ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তিনি শ্রীবরদী সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেন।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) দেওয়া ফলাফলে দেখা যায়, তিনি ৪.৩৩ জিপিএ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তার এইচএসসি’র রেজাল্ট পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার মা-সহ গোটা পরিবার। শহীদ সবুজ শ্রীবরদী উপজেলার রুপারপাড়ার গ্রামের আজাহার আলীর ছেলে।
গত ৪ আগস্ট শ্রীবরদী উপজেলার রুপারপাড়ার নিজ বাড়ি থেকে শেরপুর শহরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নিয়ে ঘাতকের গুলিতে শহীদ হন সবুজ। সবুজের বাবা অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন এক বছর ধরে। দরিদ্র পরিবারে জন্ম হওয়ায় ৫ম শ্রেণি শেষ করার পর ঢাকায় পাড়ি জমান কাজের সন্ধানে। ঢাকায় কাজের পাশাপাশি পড়ালেখাও চালিয়ে যান সবুজ মিয়া।
ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরে শ্রীবরদী উপজেলার লঙ্গরপাড়া বাজারে একটি ওষুধের দোকানে কাজ করে সংসারের খরচ ও নিজের লেখাপড়া চালিয়ে আসছিলেন। সবুজ তার ছোট দুই ভাই ও বোনের লেখাপড়ায় সহায়তা করতেন। বাবা অসুস্থ থাকায় তার একার রোজগারে চলতো পুরো পরিবার। একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবার। শহীদ হলেও এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন তিনি।
সবুজের ছোট ভাই কাউসার আহমেদ বলেন, ‘ভাইয়ের ইচ্ছা আছিলো পড়ালেহা শেষ কইরা বড় চাকরি করবো। আমারে কইছিলো তুই চিন্তা করিস না। তোরেও পড়ালেহা করামু। কিন্তু ভাইতো মইরা গেল। আজকে রেজাল্ট দিলো। হুনলাম ভাই পাশ করছে। রেজাল্ট দিয়ে কি হবো, ভাইতো আর আইবো না।’
শহীদ সবুজের মা সমেজা খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামী স্ট্রোক করে কয়েক বছর ধরে বিছনায় পইরা আছে। পুলাডা কামাই করতো। বাজার সদাই কিনতো। আমার পোলা আমাগর জন্য অনেক কিছু করতে চাইছিলো। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেছে। আমরা গরিব মানুষ কীভাবে চলমু? কামায় রোজগার করারও কেউ নাই। ছোট দুইজন ছেলে মেয়ে আছে তাদেরও মানুষ করতে হবে। আমরা সরকারের সহযোগিতা চাই।’