তিন বছর আগে মাহমুদুর রহমান নামে দাফনকৃত মরদেহটি বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর কিনা তা নিশ্চিতে কবর থেকে দেহাবশেষ তোলা হয়েছে। বুধবার (১৬ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের কামালপুর এলাকায় জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যীন কবরস্থান থেকে দেহাবশেষ উত্তোলন করা হয়।
ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ শেষে দুপুর ২টার দিকে দেহাবশেষ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। সাভার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্টেট এস এম রাসেল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, আজ সকাল ৯টার দিকে দেহাবশেষ উত্তোলনের কাজ শুরু করে সিআইডির ফরেনসিক টিম।
আরও পড়ুন: ডিএনএ পরীক্ষার জন্য তোলা হচ্ছে ‘হারিছ চৌধুরীর’ দেহাবশেষ
ঢাকার সাভারের জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যীন কবরস্থানে ২০২১ সালে মাহমুদুর রহমান নামে এক ব্যক্তিকে দাফন করা হয়। হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরীর এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের নির্দেশে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদস্যরা কবরস্থানটি থেকে দেহাবশেষ উত্তোলন করেন। এ সময় সামিরা তানজিনসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাদরাসার কবরস্থানের একটি অংশ খোঁড়া হচ্ছে। সেখানে পুলিশ ও জনপ্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, হারিছ চৌধুরীর পরিবারের সদস্য ও মাদরাসার শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে দেহাবশেষ কবর থেকে তোলা হয়। পরে সেটি থেকে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে সিআইডি। অনান্য আনুষ্ঠানিকতা শেষে দুপুর ২টার দিকে দেহাবশেষটি সংরক্ষণের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
লাশ উত্তোলনের সময় উপস্থিত হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরী বলেন, ‘তিন বছর হলেও আমার বাবার মৃত্যু মীমাংসিত নয়। তিনি একজন জাতীয় নেতা ছিলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তার প্রাপ্য সম্মান তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে। ১৫ বছর তার চরিত্রহনন করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। কোনো সন্তান চাইবে না, তার বাবার মৃত্যু নিয়ে এমন রহস্য থাকুক। এখন আমরা চাই, তিনি যাতে সম্মান পান। তাকে যথাযথ মর্যাদা দেওয়া হোক। তিনি দেশের জন্য কাজ করেছেন, মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। তার সম্মান ও স্বীকৃতি ফেরত চাই।’
মরদেহটির জানাজা পড়ানো মাওলানা আশিকুর রহমান কাশেমী বলেন, ‘২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মাহমুদুর রহমান নামে মরদেহটি দাফন এখানে করা হয়। জানাজায় হাফেজ ও মাদরাসা ছাত্ররা অংশ নেয়। আমাদের নিজস্ব ব্যবস্থায় কোভিডের (করোনা মহামারি) ওই সময় মরদেহ দাফন করি। আমি জানাজায় ইমামতি করি। তখন থেকে এখন পর্যন্ত আমরা তাকে মাহমুদুর রহমান বলেই জানি। তবে আমরা তার পরিবারের মতো উনার প্রকৃত পরিচয় বেরিয়ে আসুক সেটি চাই। দেশবাসী জানুক তার পরিচয়, আমরাও জানি।’
বিরুলিয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়াডের ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব মনিরুল হক বলেন, ‘আজ যে মরদেহটি উত্তোলন করা হলো, সেটি মাহমুদুর রহমান নামে দাফন করা হয়েছিল। এটি আসলে হারিছ চৌধুরীর মরদেহ। তার মেয়ে এসেছেন আজ, দাফনের সময়ও তিনি ছিলেন। আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য তার ডিএনএ টেস্ট করা হবে। আমরাও চাই হারিছ চৌধুরী হিসেবে মরদেহটি চিহ্নিত হোক। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, তার মরদেহ নিজের এলাকায় দাফন করতে পারেনি। এখন যথাযথভাবে তাকে দাফন করা হোক।’
সাভার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্টেট এস এম রাসেল ইসলাম বলেন, ‘হারিছ চৌধুরীর মেয়ের রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী মাহমুদুর রহমানের (হারিছ চৌধুরী) মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। আজ সকাল ৯টা থেকে হারিছ চৌধুরীর যে কবর তার মেয়ে শনাক্ত করেছেন, সেখান থেকে মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে। ফরেনসিক বিভাগ মরদেহের ডিএনএ শনাক্তের জন্য আলমত সংগ্রহ করেছে। ডিএনএ থেকে যদি শনাক্ত হয় এটি হারিছ চৌধুরীর মরদেহ সেক্ষেত্রে হাইকোর্টের পরবর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মরদেহ আলামত সংগ্রহের পর এটি সংরক্ষণের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।’