মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের চার দিন পার হলেও সহায়তা পায়নি বরগুনা উপকূলের জেলেরা। যদিও নিষেধাজ্ঞার শুরুর দিনেই এই সহায়তা দেওয়ার কথা ছিল বেকার জেলেদের। এদিকে, অনেক জেলের অভিযোগ, প্রকৃত জেলে হয়েও সহায়তা বঞ্চিত তারা, আর সহায়তা পাচ্ছে ভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
দেশে ইলিশ সম্পদ বৃদ্ধি করতে ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার। এই ২২ দিন ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ, কেনাবেচা ও বিনিময় নিষিদ্ধ এবং দণ্ডনীয় অপরাধ ঘোষণা করেছে মৎস্য অধিদপ্তর।
নিষেধাজ্ঞা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে পায়রা, বলেশ্বর ও বিষখালী নদী ও সাগর মোহনায় ২৪ ঘণ্টা টহল জোরদার করেছে কোস্টগার্ড। চার দিনের অভিযানে ৮ জেলেকে ৬২ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। নিষেধাজ্ঞা পালন করে মাছ শিকার বন্ধ করে দিয়েছে বরগুনা উপকূলের প্রায় লক্ষাধিক জেলে।
প্রশাসনের কঠোর অবস্থানে তালতলীর ফকিরহাট, পাথরঘাটার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাট ও সদরের বিভিন্ন জায়গায় ট্রলার নোঙর করে জাল-দড়ি ও ট্রলার মেরামত করছেন জেলেরা। তারা বলছেন, নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিনেই ২২ কেজি করে চাল সহায়তা দেওয়ার কথা থাকলেও চার দিন পার হলেও সহায়তা পায়নি তারা।
তালতলীর ফকিরহাট এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, এফবি মা, এফবি রাতুলসহ অন্তত শতাধিক ট্রলার নোঙর করে জাল-দড়ি গুছিয়ে নিচ্ছেন জেলেরা।
এফবি মা ট্রলারের মাঝি মাসুদ রানা বলেন, ‘আমিসহ এই ট্রলারে ১৮ জেলে মাছ শিকার করতাম। সাগরে মাছ শিকার করে মালিককে দেই। মালিক টাকা দেয়, সেই টাকা দিয়ে সংসার চলে। মাছ ধরা বন্ধ, তাই সংসারে বাজার করাও বন্ধ। খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছি। মৎস্য অফিস থেকে বলেছিল নিষেধাজ্ঞা শুরুর প্রথম দিনেই সহায়তার চাল দেওয়া হবে। চার দিন পার হলেও সহায়তা পায়নি তারা।’
এফবি রাতুল ট্রলারের মাঝি বিকাশ ও জেলে নারায়ণ, বিধানসহ কয়েকজন জেলে বলেন, সাগরে মাছ শিকার করে সেই মাছ বিক্রি করে চাল-ডাল কেনেন। সাগরে মাছ শিকার বন্ধ, এখন চাল কেনার টাকাও নেই। ২২ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা থাকলেও এখনও দেয়নি।
বরগুনা সদরের পোটকাখালী এলাকার জেলে ইয়াকুব আলী (৭০) বলেন, ‘প্রায় ৫০ বছর ধরে সাগরে মাছ শিকার করি। আমার জেলে কার্ড আছে। কিন্ত সহয়তা পাই না। আমরা সরকারি নিষেধাজ্ঞা পালন করি। অন্যদিকে জেলেদের জন্য বরাদ্দের চাল পায় ভ্যান চালক, রিকশা চালক, মুদি দোকানিসহ অন্য পেশার মানুষ।’
একই এলাকার জেলে সোহেল বলেন, ‘প্রকৃত জেলেরা সহায়তা বঞ্চিত, অন্যদিকে সহায়তা পাচ্ছেন ভিন্ন পেশার মানুষ। চেয়ারম্যান-মেম্বাররা তাদের স্বজনদের নামে-বেনামে জেলেদের ভাগ্যের চাল দিচ্ছেন। বার বার মৎস্য অধিদপ্তরকে আমরা বিষয়টি জানিয়েছি, কিন্ত তারা কোনো সমাধান করতে পারেনি।’
নিষেধাজ্ঞা পালনে নানামুখী উদ্যোগের পাশাপাশি দ্রুত সময়ের মধ্যে সহায়তার চাল বিতরণের কথা জানালেন বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মহসীন। জেলেদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, সহায়তার চাল বিতরণে নৌবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে তারা কড়া নজরদারি রাখবেন।
জেলায় নিবন্ধিত ৪০ হাজার ২১৩ জন জেলের অনুকূলে সহায়তা এসেছে ৩৬ হাজার ১০ জনের। বেসরকারি হিসাবে জেলায় জেলের সংখ্যা প্রায় এক লাখ।