এ বছর বর্ষা মৌসুমে শুরু থেকে অঝরে বৃষ্টি। গত বছরের চেয়ে এবার বৃষ্টির পরিমাণ প্রায় তিনগুণ। এতে খুলনার চাষিরা ক্ষেতে, মাছের ঘেরের আইলে এবং বাড়ির আঙিনায় সবজি রোপণ করেও সুবিধা করতে পারেনি। বর্ষায় প্রায় সব সবজি ক্ষেতেই পঁচে গেছে। জেলায় এবারে ৩৫ কোটি টাকা মূল্যের সবজি পচে গেছে। যে কারণে কার্তিক মাসেও সবজির মূল্য অস্বাভাবিক বেড়েছে।
খূলনা আবহাওয়া অফিস জানায়, এ বছর জেলায় জুন মাসে ৭২ মিলিমিটার, জুলাই মাসে ৩০৯ মিলিমিটার, আগস্ট মাসে ৫০২ মিলিমিটার এবং সেপ্টেম্বর মাসে ৩৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। অথচ গত বছর বর্ষা মৌসুমে আগস্ট মাসে ২৯৮ মিলিমিটার, সেপ্টেম্বর মাসে ১৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
এবারে বৃষ্টিতে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া, পাইকগাছা, দিঘলিয়া, ফুলতলা ও রূপসা উপজেলার সবজি ক্ষেতে সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে।
খুলনা কৃষি অধিদপ্তর জানায়, ১ জুলাই থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত জেলায় ৮৪২ হেক্টর জমির ৬ হাজার ৭৪০ মেট্রিক টন সবজি ক্ষেতেই নষ্ট হয়েছে। জেলায় এবার ১২০০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ৫ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়। ১০ হাজার ২৪০ জন কৃষক আবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। এবার গ্রীষ্ম মৌসুমে জেলায় পেপে, সীম, টমেটো, কচুরমুখী, ওল, বেগুন, গিমে কলমী, লালশাক, বরবটি, ঢেঁড়স, শসা, চালকুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, ধুন্দল, চিচিংঙ্গা ও ঝিঙের আবাদ হয়। জেলায় এবার কাঁচা মরিচ ও বেগুনের আবাদ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে, মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) খুলনা নগরীর বড়বাজার, নতুন বাজার ও মিস্ত্রিপাড়া বাজারে কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ৩০০ টাকা থেকে ৩২০ টাকা দরে বিক্রি হয়। বুধবার (১৬ অক্টোবর) ভ্যানে বিক্রেতারা ২৬০ টাকা দরে বিক্রি করেছে। নগরীর বাজারে আলু ৬০ টাকা, পেঁয়াজ ১১৫ টাকা, ঝিঙে ৭০ টাকা, বেগুন ১২০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, ঢেঁড়শ ৮০ টাকা, লালশাক ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। প্রতি কেজি বরবটির দাম ছিল ১২০ টাকা। অথচ আগস্ট মাসের শেষের দিকে বরবটি ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।
জেলার মনিরামপুর, কেশবপুর ও নওয়াপাড়া থেকে সবজি খুলনার বাজারে সরবরাহ করা হয়। স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তিন হাত বদলের কারণে সবজির দাম বাড়ে। তাছাড়া অতিবৃষ্টিতে ক্ষেতেই সবজি মারা যাওয়ায় বাজারের সরবরাহ কমেছে। তারা মনে করছেন, কার্তিক মাসের মাঝামাঝি সময়ে মূলা, সীম ও ফুলকপি বাজারে চলে আসলে সবজির দাম কমতে পারে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খুলনা উপপরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, জেলায় অতিবৃষ্টিতে ৩৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা মূল্যের সবজি নষ্ট হয়েছে। কৃষক ক্ষতি কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছে। উঁচু জমিতে লালশাক, বেগুন ও ফুলকপির আবাদ শুরু করেছে। বাজারে আসতে কিছুটা সময় লাগবে।