পুঁজিবাজার সংস্কারে সকল অংশীজনদের পরামর্শের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পলিসি তৈরি করবে ‘পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স’। বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার, বিনিয়োগকারী, গবেষক, বিশ্লেষক, পেশাদার, অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, নিয়ন্ত্রক সংস্থা, পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ এবং গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতিতে কাজ করবে গঠিত এ টাস্কফোর্স।
সোমবার (২১ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সিকিউডিরটিজ কমিশন ভবনে ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন পুঁজিবাজার সংস্কারে গঠিত টাস্কফোর্স সদস্যরা।
বৈঠক শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন বলেন, দীর্ঘ মেয়াদে পুঁজিবাজার একটি ভালো অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য যা যা পলিসি পরিবর্তন করা দরকার, আমরা তাই করব। এজন্য আমরা সকল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি পলিসি ডকুমেন্ট তৈরি করব। তারপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ভবিষ্যতে পলিসি বাস্তবায়ন করবে। তখন এ কার্যক্রমের ফল আমরা দেখতে পাব। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারে কী হচ্ছে, সেটা দেখা টাস্কফোর্সের উদ্দেশ্য নয়। দীর্ঘমেয়াদে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য পলিসিগত প্রস্তাব দেবে টাস্কফোর্স।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি’র সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান বলেন, আজকের বৈঠকে ডিবিএ ডিমিউচুয়ালাইজেশন স্কিম রিভিউ করার প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা সেটা বিবেচনা করব। ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন ২০১৩ সালে প্রণয়ন করা হয়। সেই আইনে উল্লেখ রয়েছে, ১০ বছর পর তা রিভিউ করতে হবে। যেহেতু এই আইন প্রণয়ন করা ১০ হয়ে গেছে, সেহেতু আমরা এটা রিভিউ করার ব্যবস্থা করব টাস্কফোর্সের অংশ হিসেবে। এ ছাড়া, আমাদের অনেক আইনকানুন আছে যেগুলোর ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড বা বর্তমান বাজারর প্রেক্ষাপটে যায় না। আমরা সেসব জায়গাগুলোতে কাজ করার চেষ্টা করব। তবে এখনই এসব বিষয়ে কথা বলার সময় হয়নি। আমরা কাজ শুরু করেছি। সকল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করি তারপর কথা বলব। আমরা ইতোমধ্যে ইমেইল অ্যাড্রেস তৈরি করেছি যাতে করে সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও পুঁজিবাজার সংস্কারে তাদের মতামত তুলে ধরতে পারেন।
হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং’র সিনিয়র পার্টনার এ এফ এম নেসার উদ্দীন বলেন, আমরা কাজ শুরু করেছি। তারই অংশ হিসেবে আজকে আমরা ডিবিএ’র সঙ্গে আলোচনা করেছি। এরপর আমারা অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করব। এ মুহূর্তে আমরা পুঁজিবাজার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না। কারণ আমরা এখনো রিসার্চ ও অ্যানালাইসিস করি নাই। আমরা আগে সকল অংশীজনদের সঙ্গে কথা বলি। তারপর আমরা পুঁজিবাজার সংস্কারের বিষয়ে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ নিয়ে কথা বলব।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোস্তফা আকবর বলেন, পুঁজিবাজারে তথ্য প্রযুক্তি বা আইটির বিষয়ে অনেক অভিযোগ থাকে। সেসব বিষয়ে ডিবিএর সঙ্গে আজকে আলোচনা হয়েছে। আমরা সেসব সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছি। আমরা পুঁজিবাজারের সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে সেসব সমস্যা সমাধান করার প্রস্তাব দিব। সেক্ষেত্রে ওই সুপারিশ বাস্তবায়ন করা শুধুমাত্র বিএসইসির দায়িত্ব নয়। এই মার্কেটের সকল স্টেকহোল্ডারকে এ কাজে সহযোগিতা করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন বলেন, ডিবিএ পুঁজিবাজারের একটি মেজর স্টকহোল্ডার। তাই আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। ডিবিএ’র পক্ষ থেকে বেশ কিছু প্রস্তাব এসেছে। আমরা পুঁজিবাজারের আরও যেসব অংশীজন রয়েছে তাদের সঙ্গে আলোচনা করব। তাদের প্রত্যেকের মতামত আমরা নিব। তারপর সেটা আমরা কম্পাইল করব। আমরা সব আংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করার পর বিভিন্ন ফোকাস গ্রুপ করব। সেখানে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দেশি ও বিদেশি অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা থাকবেন। পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা আনয়ন এবং সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন পলিসি তৈরি করতে চেষ্টা করব। যাতে বিনিয়োগকারীরা তাদের পুঁজির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারবেন। তবে সেটার বাস্তবায়ন করবে বিএসইসিসহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররা।
প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ স্বাক্ষরিত আদেশে পাঁচ সদস্যের ‘পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স’ গঠন করা হয়। আর গত ৯ অক্টোবর প্রথম সভার মাধ্যমে কাজ শুরু করে টাস্কফোর্স।