তার নিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তোলা বোকামির পর্যায়ে। তার একাগ্রতা অন্যদের জন্য আদর্শ। তার দর্শন হতে পারে অনুকরণীয়। পরবর্তী প্রজন্মের ক্রিকেটারদের কেমন হওয়া চাই সেই উদাহরণ দিতে হলে মুশফিকুর রহিমের চেয়ে অদ্বিতীয় আর কেউ নেই।
তাইতো তামিম অপকটে বলে দিতে পারেন ‘আমার কথা বলতে পারেন, সাকিবের কথাও বলতে পারেন (আদর্শ)। কিন্তু আপনি যদি (টেস্টে) কাউকে আদর্শ মানতে চান, আমি দৃঢ়ভাবে মনে করি, সেটা হওয়া উচিত মুশফিককে।’
খুব বেশিদিন আগে তামিম এমন কথা বলেননি। বাংলাদেশ যখন ভারতে সিরিজ খেলতে গিয়েছিল, ধারাভাষ্যে ছিলেন তামিম। সেখানেই মুশফিককের নিবেদন, পরিশ্রম নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন। তামিমের সেই দাবিতে আরেকটু রং ছড়াল মুশফিকের নতুন এক কীর্তি। প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ছয় হাজার রানের মাইলফলক পেরিয়েছেন মুশফিক। এর আগে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে চার হাজার, পাঁচ হাজার রানের রেকর্ডটাও তিনিই সর্বপ্রথম অতিক্রম করেছেন।
টেস্ট অঙ্গনে দীর্ঘ পথ পরিক্রমতায় এই মাইলফলকগুলোতে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের অংশগ্রহণ একদমই কম। চার হাজার রান পেরিয়েছেন মাত্র চারজন (মুশফিক, তামিম, সাকিব ও মুমিনুল)। পাঁচ হাজারে কেবল দুইজন (মুশফিক ও তামিম)। এবার ছয় হাজারে কেবল মুশফিক। অথচ আগের চেয়ে টেস্ট খেলার সুযোগ বেড়েছে বাংলাদেশের। হোম অ্যান্ড অ্যাওয়েতে নিয়মিত টেস্ট খেলছে। পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা না থাকায় বড় অর্জনে নাম লিখাতেও লেগে যায় লম্বা সময়।
মুশফিকের ছয় হাজার রানের বিন্যাসটাই দেখুন। ৯৩ টেস্টে ১৭২ ইনিংসে মুশফিক ছয় হাজার রান পূর্ণ করেছেন ৩৮.৪৮ গড়ে। মিরপুরে ৫ হাজার ৯৬১ রান নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাঠে নেমেছিলেন। প্রথম ইনিংসে ১১ রানে থেমে যায় তার রান। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩১ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করার পথে প্রথম ছয় হাজার রান পূর্ণ করেন। পাঁচ হাজার থেকে ছয় হাজার রানে পৌঁছতে মুশফিকের লেগেছে ২৩ ইনিংস। এর আগে চার থেকে পাঁচ হাজারে গিয়েছেন ২৬ ইনিংসে।
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে যদি নজর দেয়া যায় তাহলে মিলবে ‘ভয়ানক’ কিছু। লর্ডসে পথচলার পর হাজার রান করতে মুশফিকের লেগেছিল ৩৯ ইনিংস। যেখানে সেঞ্চুরি ছিল কেবল একটি। হাজার থেকে দুই হাজারে যেতে খেলেছেন ২৮ ইনিংস। সেখান থেকে তিন হাজারে পৌঁছেছেন পরের ২৯ ইনিংসে। এরপর ২৭ ইনিংসে চার হাজারে। বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলা মুশফিকের স্বপ্ন তিন অঙ্ক ছোঁয়া। সেভাবেই নিজেকে প্রস্তুত রাখছেন।
১৮ বছর বয়সে লর্ডসে অভিষেক করে সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে রেকর্ড বইয়ে নাম তুলেছেন। একশ টেস্ট খেলতে পারলে তা হবে মুশফিকের জন্য বিরাট গৌরবের বিষয়। বাংলাদেশের জন্যও বিরাট কিছু। কেননা বর্তমান সময়ের ক্রিকেট ব্যস্ততা, ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট ছাপিয়ে ৩৭ পেরুনো মুশফিকের খেলায় পূর্ণ মনোযোগ ও ফিটনেস ধরে রাখা অনন্য কিছুই। ছয় হাজার পেরিয়ে যাওয়া মিস্টার ডিপেন্ডেবল কোন পর্যায়ে গিয়ে থামেন সেটাই দেখার। এর আগ পর্যন্ত তার ব্যাটে দ্যুতি ছড়িয়ে যাক এমনটা প্রত্যাশা করাই যায়।