বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করা ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে স্থলভাগের দিকে ধেয়ে আসছে। বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) ভোর থেকে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে সাতক্ষীরায় থেমে থেমে হালকা থেকে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। নদ-নদীতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। ১৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ ৮৮৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টায় সাতক্ষীরার আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র কারণে গত চব্বিশ ঘণ্টায় সাতক্ষীরায় ৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আজ রাতে ভারতের উড়িশা রাজ্যের উপকূলী এলাকায় আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’। এর প্রভাবে সাতক্ষীরায় কিছুটা বৃষ্টিপাত বাড়বে।
এদিকে বুধবার বিকেলে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলা ও জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে সাতক্ষীরায় জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সাতক্ষীরার উপ-পরিচালক মাশরুবা ফেরদৌস, সাতক্ষীরায় দায়িত্বরত সেনাবাহিনীর মেজর ইশতিয়াক হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শেখ মঈনুল ইসলাম মঈন প্রমুখ।
উপকূলীয় উপজেলা আশাশুনির কুড়িকাহুনিয়া এলাকার বাসিন্দা রেজাউল ইসলাম জানান, কপোতাক্ষ নদ তীরবর্তী লঞ্চঘাটের অবস্থা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার, পদ্মপুকুর, কামালকাটি, কোমরপুর, কুড়িকাহুনিয়াসহ কমপক্ষে ৯টি পয়েন্টে ৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
সাতক্ষীরা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুল বাসেত জানান, দুর্যোগ মোকাবিলায় ১৫৬টি আশ্রয় কেন্দ্রসহ ৮৮৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ৫ লাখ টাকার গো খাদ্য, ৫ লাখ টাকার শিশু খাদ্য, ৮০০ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ অর্থ প্রায় ৭ লাখ টাকা মজুদ রয়েছে। এছাড়া জরুরী ত্রাণের জন্য ৪শ ৪২ মেট্রিকটন চাল মজুত রয়েছে।
সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী ফরেস্ট স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা এবিএম হাবিবুল ইসলাম বলেন, আবহাওয়া বেশি খারাপের দিকে গেলে অবশ্যই তাদেরকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসা হবে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দীন জানান, সাতক্ষীরায় ৬শ ৮৩ কি.মি. বেড়িবাঁধ রয়েছে। যার মধ্যে ৯টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ। তবে তাৎক্ষণিক মোকাবিলায় ১১ হাজার জিও ব্যাগ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সাতক্ষীরায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। জেলায় কর্মরত সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। জেলার ১৫৬টি আশ্রয় কেন্দ্রসহ ৮৮৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেখানে ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ জন মানুষ নিরাপদে আশ্রয় নিতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর জন্য ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।