আন্তর্জাতিক

ফিলিস্তিনিদের যেভাবে মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরায়েলি বাহিনী

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী তার সেনাদের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। গাজার যেসব বাড়িতে হামাসের ফাঁদ থাকতে পারে এবং সুড়ঙ্গ পথগুলোতে এই বেসমিরক নাগরিকদের প্রবেশ করতে বাধ্য করেছে। ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) এক সৈনিক এবং পাঁচজন সাবেক বন্দির বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার সিএনএন এ তথ্য জানিয়েছে।

ইসরায়েলি সৈনিকটি জানিয়েছে, তার ইউনিট দুটি ফিলিস্তিনি বন্দিকে বিপজ্জনক স্থান অনুসন্ধানের জন্য মানব ঢাল হিসাবে ব্যবহার করার সুস্পষ্ট উদ্দেশ্যে বন্দি করেছিল। গাজায় ইসরায়েলি ইউনিটগুলোর মধ্যে এই অনুশীলনটি প্রচলিত ছিল।

তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের আমাদের আগে ভবনে প্রবেশ করতে বলেছিলাম। যদি কোন বুবি ফাঁদ থাকে তবে তারা বিস্ফোরণের শিকার হবে, আমরা নই।’

এটি ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীতে এতটাই সাধারণ ছিল যে এই চর্চার নাম ছিল ‘মশা প্রোটোকল।’   কতটা ব্যাপক হারে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে তার সঠিক মাত্রা জানা যায়নি। কিন্তু সৈনিক এবং পাঁচজন বেসামরিক লোক উভয়ের সাক্ষ্য দেখায় যে এটি উত্তর গাজা, গাজা সিটি, খান ইউনিস এবং রাফাহজুড়ে বিস্তৃত।

ইসরায়েলি সৈনিকটি জানান, চলতি বছরের বসন্তের একদিন একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা দুজন ফিলিস্তিনি বন্দিকে নিয়ে আসেন। এদের এক জন ১৬ বছর বয়সী কিশোর এবং অপরজন ২০ বছর বয়সী তরুণ। ভবনগুলোতে প্রবেশের আগে তাদের মানব ঢাল হিসাবে ব্যবহার করতে বলেছিলেন ওই কর্মকর্তা।

বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তখন ইউনিটের এক জন একজন কমান্ডার সৈনিকটিকে বলেছিলেন, ‘এটা ভাল যে ফিলিস্তিনিরা বিস্ফোরণে মরবে, আমাদের সেনারা নয়।’

ওই সৈনিক জানান, তিনি এবং তার কমরেডরা দুই দিন পর অনুশীলন চালিয়ে যেতে অস্বীকার করেছিলেন এবং এটি নিয়ে তাদের সিনিয়র কমান্ডারের মুখোমুখি হন। তাদের কমান্ডার প্রথমে তাদের ‘আন্তর্জাতিক আইন সম্পর্কে চিন্তা না করতে।’ তার ভাষ্য ছিল, ফিলিস্তিনিদের চেয়ে ইসরায়েলি ‘সেনাদের জীবন আরো গুরুত্বপূর্ণ।’

আন্তর্জাতিক আইনে সামরিক কর্মকাণ্ডে বেসামরিক নাগরিকদের ব্যবহার বা সামরিক অভিযানে বেসামরিকদের জোরপূর্বক জড়িত করা নিষিদ্ধ। পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের সামরিক বাহিনী ব্যবহার করার বিষয়ে অধিকার গোষ্ঠীগুলো অভিযোগ দায়ের করার পরে ২০০৫ সালে ইসরায়েলি সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্টভাবে অনুশীলনটিকে নিষিদ্ধ করেছিল। সেই সময়ে বিচারপতি হারুন বারাক এই অনুশীলনটিকে ‘নিষ্ঠুর ও বর্বর’ বলে অভিহিত করেছিলেন।