ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর তাকে বহু স্তুরের নিরাপত্তার মধ্যে রাখা হয়েছে।
দিল্লির ইন্ডিয়া গেট এবং খান মার্কেটের কাছে লুটেনস বাংলো জোনের যে বাড়িটিতে তাকে রাখা হয়েছে সেটি ছিল ভারতীয় গোয়েন্দা ব্যুরোর (আইবি) সেইফ হাউস।
শুক্রবার হিন্দুস্তান টাইমসের এক খবরে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্টের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসার পর শেখ হাসিনা দিল্লির উপকণ্ঠে উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদের কাছে হিন্ডন বিমানঘাঁটিতে নামেন। সেখানে তিনি দুদিন অবস্থান করেন। পরে তাকে লোধি গার্ডেনের লুটেনস বাংলো জোনে তার মর্যাদা অনুসারে থাকার জন্য বেশ বড়সড় বাংলো দেওয়া হয়। সাধারণত এ ধরনের বাংলো ভারতের মন্ত্রী, পার্লামেন্ট সদস্য ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। হিন্দুস্তান টাইমস নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে লিখেছে, শেখ হাসিনার নতুন বাসভবনটি একটি গোয়েন্দা ব্যুরো (আইবি) সেফহাউস ছিল। তবে হাসিনার জীবনের ওপর হুমকি রয়েছে উল্লেখ করে তার সঠিক অবস্থান প্রকাশ না করতে নির্দেশনা দেওয়া হয় কর্মকর্তাদের।
এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দিল্লিতে এই ধরনের তিনটি সেইফ হাউস রয়েছে। এগুলোর অভ্যন্তরীণ ও বাইরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন কেন্দ্রীয় সংস্থার কর্মকর্তারা। সন্দেহজনক কার্যকলাপ এবং লোকজনের ওপর নজরদারি রাখতে দিল্লি পুলিশের কমান্ডো ইউনিটের ‘পর্যবেক্ষক এবং স্পটার’ সেইফ হাউসের চারপাশে মোতায়েন করা হয়।
আরেকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হাসিনাকে হিন্ডন বিমানঘাঁটি থেকে দিল্লিতে আনার পর দিল্লি পুলিশের একজন সাব-ইন্সপেক্টরকে (এসআই) কয়েক দিনের জন্য আইবি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (এমইএ) কর্মকর্তাদের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘সাব-ইন্সপেক্টরকে খুব স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল- গোপন অপারেশন এবং সেইফ হাউসের ঠিকানা সম্পর্কে তার ব্যক্তিগত ও পেশাদার পরিচিতিদের মধ্যে কাউকে যেন জানানো না হয়। এসআইকে বলা হয়েছিল, দিল্লি পুলিশপ্রধান বা তার তত্ত্বাবধায়ক কর্মকর্তাদের কেউ এ ব্যাপারে জানতে চাইলেও তথ্য প্রকাশ করা যাবে না।’
আইবি এবং এমএইচএ কর্মকর্তারা নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করায় এসআইকে দুই বা তিন দিন পরে নিরাপত্তা প্রোটোকল থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ধারায় সরকার পতনের এক দফায় ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গণভবন ছেড়ে সামরিক কার্গো উড়োজাহাজে দিল্লিকে সংক্ষিপ্ত নোটিশ দিয়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা, সঙ্গে ছিলেন তার ছোট শেখ রেহানা।
ভারতে শেখ হাসিনার আশ্রয় নেওয়ার ঘটনায় দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতি হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়।অবশ্য পরে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, এতে দুই দেশের সম্পর্কের ওপর প্রভাব পড়বে না।
চলতি মাসেই শেখ হাসিনার ভারত ছাড়ার গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়িয়েছিল, অসমর্থিত সূত্রের বরাত দিয়ে খবর হয়েছিল যে, তিনি দুবাই চলে গিয়ে থাকতে পারেন। অবশ্য এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারও কথা বলেছিল। ভারত যদি তাকে ট্রানজিট ভিসা দেয় তাতে ঢাকার কিছু বলার নেই বলে মন্তব্য এসেছি।
এ অবস্থায় দ্য প্রিন্টের খবরে শিরোনাম হন শেখ হাসিনা, যেখানে বলা হয়, তিনি ভারতেরই কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে আছেন। শুক্রবার হিন্দুস্তান টাইমস জানাল, দিল্লিতে বহু স্তরের নিরাপত্তাবেষ্টিত লুটেনস বাংলো জোনে আছেন তিনি।
তবে শেখ রেহানা দিল্লিতে শেখ হাসিনার সঙ্গে আছেন কি না, সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি হিন্দুস্তান বা দ্য প্রিন্ট।