যশোরে কারাতে প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের উন্নয়নের গুণকীর্তন করে রচিত সঙ্গীত বাজানোর অভিযোগে পাঁচ জনকে আটক করে পুলিশ। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তাদের আটক করা হয়। আট ঘণ্টা পর থানা থেকে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান তারা। গতকাল শুক্রবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে যশোর জিমনেশিয়ামে ঘটনাটি ঘটে।
আটককৃতরা হলেন- জয়তি সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক অর্চনা বিশ্বাস, সাংস্কৃতিক সংগঠন শেকড়ের সাধারণ সম্পাদক রওশানা আরা রাসু, বাংলাদেশ সোতোকান কারাতে দো এসোসিয়েশন (কিউখাই) খুলনা বিভাগের সদস্য সচিব ইমরান হাসান টুটুল, বাংলাদেশ কারাতে পরিষদ যশোরের সভাপতি হুময়ান কবির ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম।
প্রতিযোগিতার আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার যশোর জিমনেশিয়ামে ‘পঞ্চম আন্তজার্তিক কারাতে’ চ্যাম্পিয়নশিপের আয়োজন করে বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশন। সহযোগিতায় ছিল বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জয়তি সোসাইটি। প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার প্রতিযোগীরা অংশগ্রহণ করে। অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি ছিলেন যশোরের জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম। দুপুর ১২টার কিছু আগে প্রধান অতিথি অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধন শেষে ‘খেজুর গুড়ের ফুলের মেলা, নকশির কাঁথার যশোর জেলা’ শিরোনামে গানটিতে নৃত্য পরিবেশন করে শিশুরা। গানে যশোরের ইতিহাস ঐতিহ্য ও শেখ হাসিনা সরকার সময়কালের উন্নয়নের কথা রয়েছে। এই গানে নৃত্য পরিবেশন করায় ক্ষুদ্ধ হন জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম। গান শেষে তিনি আয়োজক ও নৃত্য পরিবেশনকারী শিশুদের আটকের নির্দেশ দেন। একপর্যায়ে আয়োজকরা তাদের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইলেও জেলা প্রশাসক নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। পরে আয়োজকদের অনুরোধে সাংস্কৃতিক পর্বে অংশ নেওয়া শিশুদের ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেন জেলা প্রশাসক।
ঘটনাস্থল থেকে শেকড়ের সাধারণ সম্পাদক রওশনা আরা রাসু, বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশন যশোরের সভাপতি হুময়ান কবির ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামকে আটক করে পুলিশ। বাকি দুইজন জয়তি সোসাইটির পরিচালক অর্চনা বিশ্বাস ও বাংলাদেশ সোতোকান কারাতে দো এসোসিয়েশন (কিউখাই) খুলনা বিভাগের সদস্য সচিব ইমরান হাসান টুটুলকে মুঠোফোনে থানায় ডেকে এনে আটক করে পুলিশ। অর্চনা বিশ্বাসকে নারী অধিকার সংরক্ষণে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ গত সরকারের আমলে (২০২১) রোকেয়া পুরস্কার দেওয়া হয়।
অর্চনা বিশ্বাস থানায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার সেচ্ছাসেবী ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জয়তি সোসাইটি অনুষ্ঠানের স্পন্সর হিসেবে ছিল। অনুষ্ঠান কিভাবে হবে, কারা থাকবেন সেটা আমার জানা ছিল না। পুলিশ আমাকে ডেকে এনে থানায় বসিয়ে রাখে।’
রওশন আরা রাসু বলেন, ‘আমি সংস্কৃতিকর্মী। শেকড় নামে আমার একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে। আয়োজকরা জানিয়েছিল, উদ্বোধন অনুষ্ঠানে একটি সাংস্কৃতিক পর্ব থাকবে। সেখানে কয়েকটি নাচের পর্ব থাকবে। তাই আমার সংগঠনের কয়েকজন শিশু সেখানে নৃত্য পরিবেশন করে। যশোরের ব্যান্ডিং গান হিসাবে পরিচিত ‘খেজুর গুড়ের ফুলের মেলা, নকশির কাঁথার যশোর জেলা’ শিরোনামে গানটিতে নৃত্য পরিবেশন করে তারা। এই গানে যশোরের উন্নয়ন নিয়ে কথা রয়েছে; ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য ছিল না আমাদের।’
যশোরের জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘উদ্বোধনের পর খেলা শুরুর আগে নাচের সঙ্গে সাউন্ডবক্সে থিমসং বাজানো হচ্ছিল। গানটিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের কথিত উন্নয়নের ফিরিস্তি নিয়ে রচিত। আমার কাছে মনে হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারকে বিব্রত করতে ঘটনাটি ঘটানো হতে পারে। তাই সঙ্গে সঙ্গে পাঁচজনকে পুলিশে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করবে। আসলে তাদের কী লক্ষ বা উদ্দেশ্য ছিল।’
যশোর কোতয়ালী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) কাজী বাবুল হোসেন বলেন, ‘জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশে পাঁচজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। গতকাল রাত ৮টায় মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।’