রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদ হত্যা মামলার প্যানেল আইনজীবীদের পরিচয় প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলন করেছে পরিবার। রোববার (২৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রংপুর আদালত চত্বরে মামলার বাদী ও শহিদের বড় ভাই রমজান আলী সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন।
গতকাল শনিবার রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ষষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে অ্যাডভোকেট জোবায়দুল হক বুলেট নামে এক ব্যক্তি নিজেকে আবু সাঈদ হত্যা মামলার আইনজীবী হিসেবে পরিচয় দেন। এসময় তিনি কথা বলার চেষ্টা করলে অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। পরে তাকে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে আজ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন শহিদ আবু সাঈদের পরিবার। তাদের দাবি, আবু সাঈদের নাম দিয়ে কেউ যাতে প্রতারণা করতে না পারেন এবং এই মামলার আইনজীবীদের সঙ্গে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিতে এই আয়োজন।
লিখিত বক্তব্যে রমজান আলী বলেন, ‘গতকাল শনিবার পুলিশ লাইন্স অডিটরিয়ামে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ষষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আইজিপি মহোদয়ের সুধী সমাবেশে অপ্রীতিকর ঘটনার বিষয়টি আমাদের নজড়ে এসেছে। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে আমি এবং আমাদের পরিবারের সবাই জানাচ্ছি, শহিদ আবু সাঈদের মামলার সঙ্গে বিশৃঙ্খলাকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট জোবায়দুল হক বুলেটের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। উনি শহিদ আবু সাঈদের মামলার কোনো আইনজীবী নন।’
রমজান আলী আবু সাঈদ হত্যা মামলার প্যানেল আইনজীবী পরিষদের নামের তালিকা স্পষ্ট করেন। এ হত্যা মামলার প্যানেল আইনজীবীরা হলেন- অ্যাডভোকেট রোকনুজ্জামান রোকন, অ্যাডভোকেট রায়হান কবির, অ্যাডভোকেট শামিম আল মামুন, অ্যাডভোকেট রায়হানুজ্জামান রায়হান, অ্যাডভোকেট কামরুন্নাহার খানম শিখা, অ্যাডভোকেট রাতুজ্জামান রাতুল, অ্যাডভোকেট মাহে আলম ও অ্যাডভোকেট মাইদুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে আবু সাঈদের বড় বলেন, ‘এরপরও যদি কোনো বিশেষ ব্যক্তি হীন উদ্দেশ্যে শহিদ আবু সাঈদের নামে কোনো বিশৃঙ্খলা ও বাণিজ্য করার চেষ্টা করেন আমরা তাদের কঠোর হাতে দমন করার দাবি জানাচ্ছি। আবু সাঈদের হত্যাকারীদের বিচার হলে তার আত্মা শান্তি পাবে। আমি খুব দ্রুত আবু সাঈদের হত্যাকারীদের বিচার চাই।’
এসময় উপস্থিত ছিলেন শহিদ আবু সাঈদ হত্যা মামলার প্যানেল আইনজীবীরা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুরের প্রতিনিধিরা।
আইনজীবী জোবায়দুল ইসলাম বুলেট জানান, গণঅভ্যুত্থান পূর্ববর্তী সময়ে পুলিশের করা আবু সাঈদ হত্যা মামলায় নিরপরাধ কয়েকজন স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীকে আসামি করা হয়। সেই নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে লড়ে তাদেরকে জামিনে মুক্ত করেছি। আবু সাঈদ হত্যায় তার বড় ভাই রমজান আলী বাদী হয়ে যে মামলাটি করেছেন, সেটির আইনজীবী হিসেবে আমি কখনো পরিচয় দেইনি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি পরিচয় দিয়েছি, সেই সময়ের পুলিশের করা আবু সাঈদ হত্যা মামলার নিরপরাধ শিশুদের পক্ষের আইনজীবির হিসেবে। কাজেই বিষয়টি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কার নিয়ে সারা দেশে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অগ্রণী ভূমিকা ছিল আবু সাঈদের। সেখানে তিনি ছিলেন এই আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক। গত ১৬ জুলাই দুপুর ২টার দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ছাত্ররা মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করেন। সেসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আবু সাঈদ। হাসপাতালে আনার আগেই মারা যান তিনি।
আবু সাঈদ রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে। তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।