দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রকারভেদে এ সব পেঁয়াজ ৩ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আমদানিকারকরা বলছেন, ভারতে অতিবৃষ্টি আর ভ্যাপসা গরমে এ সব পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। এতে তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
এদিকে, আমদানিকারকদের নষ্ট পেঁয়াজ ফেলে দিতে হচ্ছে। ফেলে দেওয়া পেঁয়াজ গবাদিপশু খাচ্ছে। নিম্ন আয়ের মানুষও তা কুড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে হিলি বন্দরের বিভিন্ন আড়ৎ ঘুরে দেখা যায়, আড়তে বস্তায় বস্তায় ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ রাখা আছে। এর মধ্যে অনেক পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এগুলোর মধ্য থেকে কিছুটা ভালো পেঁয়াজ বাছাই করা হচ্ছে। বাছাইকৃত পেঁয়াজ বিভিন্ন দরে বিক্রি করা হচ্ছে। নষ্ট পেঁয়াজগুলো ফেলে দেওয়া হচ্ছে। ফেলে দেওয়া পচা পেঁয়াজ এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পরিবেশ দুষিত হচ্ছে।
আড়তে এ সব পেঁয়াজ ৩ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ৫০ কেজির এক বস্তা পচা পেঁয়াজ ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর একটু ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। কাস্টমসের তথ্যমতে, এই বন্দর দিয়ে চলতি সপ্তাহে ৩ হাজার ২৪৪ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।
নবাবগঞ্জ থেকে পেঁয়াজ কিনতে আসা পাইকার ব্যবসায়ী আজিজার রহমান বলেন, ‘আমি হিলির বিভিন্ন আড়ৎ থেকে পেঁয়াজ পাইকারি কিনে নিজ এলাকায় ব্যবসা করি। কয়েকদিন থেকে মোকামে পেঁয়াজের মান খুব খারাপ। আড়তে প্রায় পেঁয়াজ নষ্ট। ভালো জেনে পেঁয়াজ কিনে দেখা যায় বস্তার ভিতরে খারাপ। আমি আজ ৮০ টাকা কেজি দরে পাইকারি কিনলাম। তবে ভিতরে অনেক খারাপ পেঁয়াজ আছে। এতে আমার লোকসান হবে।’
পাইকার আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল নষ্ট পেঁয়াজ ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বস্তা দরে কিনেছিলাম। সেগুলো বাছাই করে রোদে শুকাচ্ছি। দেখি তাতে কিছু লাভ হয় কি-না?’
পচা পেঁয়াজ কুড়াতে আসা দুই নারী বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, পেঁয়াজের দাম অনেক। এখানে পেঁয়াজগুলো পড়ে আছে, নষ্ট পেঁয়াজ; এরমধ্যে বেছে বেছে নিয়ে যাচ্ছি। বাড়িতে নিয়ে শুকিয়ে রান্না করব।’
পেঁয়াজ আমদানিকারক নুর-ইসলাম বলেন, ‘কিছু দিন থেকে ভারতের বৃষ্টি হচ্ছে। আর পেঁয়াজের ট্রাকগুলো ভারতের অনেক ভেতর থেকে আসে। টানা বৃষ্টি আর ভ্যাপসা গরমে ট্রাকের ভিতরে অনেক পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের অনেক লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ সব পেঁয়াজ ৩ থেকে ৮০ টাকা কেজি হিসেবে পাইকারি বিক্রি করছি।’
পেঁয়াজ আমদানিকারক শহিদ ইসলাম বলেন, ‘ভারত থেকে এ বন্দরে পেঁয়াজের ট্রাক আসতে ৬ থেকে ৭ দিন সময় লাগে। ভারতে টানা বর্ষায় কয়েক দিন থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’
হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন শিল্পী বলেন, ‘বর্তমান হিলি স্থলবন্দরে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে আমদানিকৃত পেঁয়াজের মান তেমন ভালো না। ভারতে টানা বৃষ্টি ও ট্রাকে ত্রিপল দিয়ে ঢাকার কারণে গরমে এবং মোকামগুলোর দূরত্ব অনেক হওয়ায় পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। এতে অনেক ব্যবসায়ীর লোকসান গুনতে হচ্ছে।’
হিলি কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা সফিউল ইসলাম বলেন, ভারত থেকে এই বন্দরে আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক আছে। চলতি সপ্তাহের ২৬ অক্টোবর থেকে ২৯ অক্টোবর গত চার দিনে এ বন্দরে ১১২টি ট্রাকে ৩ হাজার ২৪৪ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। যা থেকে রাজস্ব আদায় করা হয়েছে ৯৭ লাখ ৩৩ হাজার ২০০ টাকা। টন প্রতি ৪১০ ডলারে এ সব পেঁয়াজ আমদানি করছেন আমদানিকারকরা। যেহেতু এগুলো কাঁচা পণ্য, সেহেতু কাস্টমসের সব কার্যক্রম দ্রুত সমাধান করে পণ্যগুলো ছাড় করে দেওয়া হচ্ছে।