প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেডের রাজশাহী শাখার আট কর্মকর্তা ভল্ট থেকে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা সরিয়েছেন। এরমধ্যে ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা তারা সংগ্রহ করেছিলেন গ্রাহকদের কাছ থেকে। টাকা নেওয়ার সময় গ্রাহককে জাল জমা স্লিপ দিয়েছিলেন তারা। এরপর গ্রাহকের জমা করা টাকা তারা আত্মসাৎ করেন। চেকে গ্রাহকের নকল সই দিয়েও টাকা তুলে নেন তারা।
এ সব অভিযোগে করা মামলায় বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রাজশাহী মহানগর বিশেষ আদালতে এ অভিযোগপত্র জমা দেন দুদকের আইনজীবী বজলে তৌহিদ আল হাসান বাবলা।
অভিযুক্ত কর্মকর্তারা হলেন, ব্যাংকটির রাজশাহী শাখার সাবেক সিনিয়র ক্যাশ অফিসার ও ক্যাশ ইনচার্জ এফএম শামসুল ইসলাম ওরফে ফয়সাল (৪২), ডেপুটি ম্যানেজার (বর্তমানে বরখাস্ত) মাজেদুল ইসলাম, সাবেক অফিসার (ক্যাশ) মাহবুবুল আলম ও আতাউর রহমান, সাবেক এসএভিপি (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) শাহ মাসুদ জামাল, ট্রেইনি জুনিয়র অফিসার (ক্যাশ) রাকেশ কুমার দত্ত, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার ফাহমিদা উম্মে নাজনীন এবং সাবেক ম্যানেজার ও জোনাল ম্যানেজার (বর্তমানে বরখাস্ত) সেলিম রেজা খান।
দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় রাজশাহী ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেডের রাজশাহী শাখার সাবেক সিনিয়র ক্যাশ অফিসার ও ক্যাশ ইনচার্জ এফএম শামসুল ইসলাম ফয়সালের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। পরে মামলাটি তদন্তকালে অন্য সাতজনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। তারা পারস্পরিক যোগসাজশে প্রতারণা জালিয়াতির মাধ্যমে গত ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ থেকে ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত গ্রাহকদের জমা দেওয়া টাকা তাদের হিসাব নম্বরে জমা না করে আত্মসাৎ করেন। টাকা জমা নেওয়ার সময় গ্রাহকদের ভুয়া জমা স্লিপ দেওয়া হয়।
এভাবে তারা ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা নেন। এছাড়া তারা গ্রাহকের টাকা জমা দেখিয়ে চেকে জাল স্বাক্ষরের মাধ্যমে আব্দুল্লাহ জুল বাদাইন নামে এক গ্রাহকের হিসাব থেকে ১৬টি চেকের মাধ্যমে ১ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা ও ফজিলা খাতুন নামের আরেক গ্রাহকের ১৫টি চেকের মাধ্যমে ১ কোটি ৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা তুলে নেন। এছাড়া আরও নানা কায়দায় তারা মোট ৩ কোটি ৫৮ লাখ ৯৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। এ ঘটনাটি দুদক তদন্ত করে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে।
আইনজীবী বজলে তৌহিদ আল হাসান বাবলা জানান, মামলার পরবর্তী ধার্য্য তারিখে অভিযোগপত্রের বিষয়ে শুনানি হবে।
২০২০ সালের জানুয়ারিতে ব্যাংকের ক্যাশ উজাড় করে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে প্রিমিয়ার ব্যাংকের রাজশাহী শাখার ক্যাশ ইনচার্জ শামসুল ইসলাম ফয়সালকে আটক করে পুলিশে দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তখন তিনি নিজের অপরাধ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।