সারা বাংলা

আবু সাঈদের সমাধিতে শপথ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের যাত্রা শুরু

রংপুরে শহিদ আবু সাঈদের সমাধিতে শপথ নিয়ে যাত্রা শুরু হলো রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলন। সেখানে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় প্রধান সমন্বয়ক আহমেদ ইসহাককে সভাপতি ও ফাইজুল্লাহ নোমানকে সাধারণ সম্পাদক করে ৪৬ জন সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়।

বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে রংপুরের পীরগঞ্জের মদনখালী ইউনিয়নের জাফরপাড়া বাবনপুর গ্রামে আবু সাঈদের বাড়িতে আসেন রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় এবং বিভাগীয় পর্যায়ের নেতারা। 

তারা আবু সাঈদের পরিবারের সদস্যদের খোঁজখবর নেন। পরে তার কবর জিয়ারত শেষে রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলন পুনর্গঠিত নতুন কমিটি ঘোষণা করে শপথ বাক্য পাঠ করা হয়।

নবগঠিত কমিটির নেতাদের শপথ পাঠ করান রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ আইনজীবী হাসনাত কাইয়ূম।

কমিটি ঘোষণা অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যে নবনির্বাচিত সভাপতি আহমেদ ইসহাক বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বর্তমান বাংলাদেশ আবারও একটি বাঁক বদলের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।

‘বাংলাদেশের মানুষের প্রয়োজন এমন একটি রাষ্ট্র ও সরকারব্যবস্থা, যেটি তার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারকে নিশ্চিত করবে। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় যে সরকার পরিচালিত হয়, সেই সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে। জনগণের প্রয়োজন হবে- এমন সব প্রতিষ্ঠান, যে প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের কাছে সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে।’ 

‘তেমন একটি ব্যবস্থা করতে হলে প্রয়োজন হবে আমাদের সংবিধানের ক্ষমতাকাঠামো সংস্কার করা’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সংবিধানকে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন উপযোগী করা এবং সরকার পরিচালনার আইন-কানুনের সংস্কার করা দরকার।’

রংপুরের শহিদ আবু সাঈদের সমাধির পাশে বৃহস্পতিবার রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। ছবি: রাইজিংবিডি।

হাসনাত কাইয়ূম বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন দলমত নির্বিশেষে সেই সংস্কারের নতুন রাজনীতিকে গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। ছাত্ররা যদি ইতিহাসের এই অমোঘ আহ্বানকে অনুধাবন করতে পারেন, তাহলে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশ তার কাঙ্ক্ষিত বিজয়কে ঘরে তুলতে পারবে, ইনশাআল্লাহ; এই বিজয়ের জন্য এখানকার মানুষ বিগত কয়েকশ বছর লড়াই করেছে।

‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা বাকস্বাধীনতা পেয়েছি, একে ধরে রাখতে চাইলে এখন প্রয়োজন নতুন ধারার রাজনীতি, নতুন ধরনের সংগঠন। এই আকাঙ্ক্ষাকে সামনে রেখে রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলন তার পুনর্গঠিত নতুন কমিটি ঘোষণা করতে যাচ্ছে।’

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাংগঠনিক সমন্বয়ক ইমরান ইমন, জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য সামিউল আলম রাসু, ঢাকা মহানগর উত্তরের সমন্বয়ক সাধনা মহল, রাষ্ট্র সংস্কার যুব আন্দোলনের সমন্বয়ক মাশকুর রাতুল, বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শেখ নাসির উদ্দিনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈষম্য বিলোপ করে সংবিধান থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোতে প্রয়োজনীয় সংস্কার এনে ‘নতুন বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু হয় রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলনের। এত দিন আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে কার্যক্রম চলছি, এবার তারা নির্বাহী কমিটি পেল, যারা সংগঠনটির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেবে। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হাত ধরে ছাত্র-জনতার সরকার পতনের উত্তাল সময়ে মাঠে ছিল রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর রাষ্ট্রের কী ধরনের সংস্কার হওয়া প্রয়োজন, তা তুলে ধরেছিল সংগঠনটি।