পুরো বিশ্বের নজর এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে। সবাই হিসাব-নিকাশ কষছেন, কে হচ্ছেন হোয়াইট হাউসের পরবর্তী ৪ বছরের বাসিন্দা।
ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিস, নাকি রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প? ভোটের এই হিসাব-নিকাশে উঠে আসছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’র বিষয়টি।
যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণ অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো নয়। দেশটিতে সরাসরি জনগণের ভোটে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন না। সাধারণ ভোটাররা মূলত পছন্দের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার মধ্য দিয়ে একটি নির্বাচকমণ্ডলীকে নির্বাচিত করে। ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ নামের এই নির্বাচকমণ্ডলী পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কাজটি করে।
অর্থাৎ সরাসরি প্রার্থীর ব্যালটে যে ভোট পড়বে সেটা তার জনপ্রিয়তার স্বীকৃতি হলেও প্রেসিডেন্ট-ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন তাদের পার্টি থেকে নির্ধারিতসংখ্যক ইলেক্টর নির্বাচিত হওয়ার ভিত্তিতেই। এই পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়েছে রাজ্যগুলোতে জনসংখ্যার তারতম্যের কারণে। কারণ, কেবল সরাসরি ভোটের হিসাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে জনসংখ্যা অনেক বেশি এমন দু’চারটি রাজ্যের ভোটেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে যেতে পারেন, যাতে আর পুরো দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বীকৃতি থাকে না।
যুক্তরাষ্ট্রের মোট ৫০টি অঙ্গরাজ্য ও একটি ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট মিলিয়ে ইলেক্টরের সংখ্যা ৫৩৮। এই ইলেক্টরের সংখ্যা নির্ধারিত হয় পার্লামেন্টের (কংগ্রেস) উচ্চকক্ষ সিনেটের সদস্য এবং নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভসের সদস্য সংখ্যার অনুপাতে। প্রত্যেকটি রাজ্যের সিনেটর সংখ্যা ২ এবং হাউস অব রিপ্রেজেনটেভিসের সদস্য সংখ্যা রাজ্যের জেলাগুলোর সমান সমসংখ্যক। এ হিসেবে ৫০ রাজ্যে সিনেটর ১০০, হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস’র সদস্য ৪৩৫ জন এবং ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ার জন্য নির্ধারিত ৩ ইলেক্টর মিলিয়ে মোট ইলেক্টর হয় ৫৩৮ জন।
যুক্তরাষ্ট্রে ১০ বছর পরপর আদমশুমারি হয়। সর্বশেষ আদমশুমারি হয়েছে ২০২০ সালে। সেই শুমারিতে দেশে জনসংখ্যার যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মোট জনসংখ্যায় পরিবর্তন এসেছে।
ফলে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে যে ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট ছিল, এবার তাতে কিছু পরিবর্তন এসেছে।
আমেরিকার রাজনীতিবিষয়ক খবর প্রকাশের ওয়েবসাইট ২৭০টুউইন- এর দেওয়া তথ্যানুযায়ী, গতবারের তুলনায় এবার কলোরাডোতে একটি, টেক্সাসে দুটি, মন্টানায় একটি, নর্থ ক্যারোলাইনায় একটি, ফ্লোরিডায় একটি এবং অরেগনে একটি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট বেড়েছে। আর ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি, ইলিনয়ে একটি, ওহাইওতে একটি, নিউইয়র্কে একটি, পেনসিলভানিয়ায় একটি, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ায় একটি এবং মিনেসোটায় একটি করে ভোট কমেছে।
যেহেতু ইলেক্টর নির্বাচনের দিকে সবার আগ্রহ থাকবে, সেজন্য রাইজিংবিডির পাঠকদের রাজ্যপ্রতি ইলেক্টরের সংখ্যা জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
আলবামা-৯, আলাস্কা-৩, আরিজোনা-১১, আরকানসাস-৬, ক্যালিফোর্নিয়া-৫৪, কোলোরাডো-১০, কানেক্টিকাট-৭, ডেলাওয়ের-৩, ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়া-৩, ফ্লোরিডা-৩০, জর্জিয়া-১৬, হাওয়াই-৪, ইডাহো-৪, ইলিনয়-১৯, ইন্ডিয়ানা-১১, আইওয়া-৬, কানসাস-৬, কেন্টাকি-৮, লুইজিয়ানা-৮, মাইনে-৪, ম্যারিল্যান্ড-১০, ম্যাসাচুসেটস-১১, মিশিগান-১৫, মিনেসোটা-১০, মিসিসিপি-৬, মিসৌরি-১০, মনটানা-৪, নেব্রাস্কা-৫, নেভাদা-৬, নিউ হ্যাম্পশায়ার-৪, নিউ জার্সি-১৪, নিউ মেক্সিকো-৫, নিউ ইয়র্ক-২৮, নর্থ ক্যারোলিনা-১৬, নর্থ ডাকোটা-৩, ওহাইও-১৭, ওকলাহোমা-৭, অরেগন-৮, পেনসিলভানিয়া-১৯, রোডে আইল্যান্ড-৪, সাউথ ক্যারোলিনা-৯, সাউথ ডাকোটা-৩, টেনেসি-১১, টেক্সাস-৪০, উতাহ-৬, ভারমন্ট-৩, ভার্জিনিয়া-১৩, ওয়াশিংটন-১২, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া-৪, উইকনসিন-১০ এবং উইয়োমিং-৩।
এই ৫৩৮ ইলেক্টর সংখ্যার মধ্যে সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হলে প্রয়োজন হবে ২৭০ ইলেক্টর ভোটে। কেউ যদি জনপ্রিয়তার ভোটে এগিয়েও থাকেন, ইলেক্টর নির্ধারিতসংখ্যক জয়ী না হলে নির্বাচিত হতে পারবেন না। জনপ্রিয়তার ভোটে এগিয়ে থেকেও হারতে হয়েছে প্রার্থীকে এমন নজিরও ৪ বার আছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে।
বেশিরভাগ রাজ্যেই ‘বিজয়ীই সব পাবে’ নীতিতে ওই রাজ্যের ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট বণ্টন হয়। অর্থাৎ একটি রাজ্যে সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্ত রাজনৈতিক দলই ওই রাজ্যের জন্য বরাদ্দ করা সব ইলেক্টোরাল ভোট জিতে নেন। তবে মাইনে ও নেব্রাস্কা রাজ্যে এর ব্যতিক্রম দেখা যায়। সেখানে রাজ্যের জন্য বরাদ্দ ইলোক্টারাল ভোট ‘আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব’ পদ্ধতি অনুযায়ী ভাগ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে রাজ্যে সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্ত রাজনৈতিক দল পায় দু’টি ইলেক্টর ভোট, আবার প্রত্যেক কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্টে বিজয়ী রাজনৈতিক দল পায় একটি করে ইলেক্টর ভোট।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, আগামী ৫ নভেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হলেও, ওই দিন ফল জানা যাবে না। চূড়ান্ত ফল জানার জন্য আরও বেশ কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হবে।
আগামী ১৭ ডিসেম্বর ইলেক্টোরাল কলেজের নির্বাচকেরা তাদের নিজ নিজ রাজ্য এবং ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়াতে প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচতে একত্রিত হবেন। এরপর ২৫ ডিসেম্বর সিনেটের প্রেসিডেন্ট ইলেক্টোরাল ভোট গ্রহণ করবেন। বর্তমানে এর দায়িত্বে রয়েছেন কমলা হ্যারিস।
এরপর নতুন বছরের ৬ জানুয়ারি ভাইস প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসের একটি যৌথ অধিবেশনে ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট গণনার সভাপতিত্ব করবেন। পরবর্তীতে কে নির্বাচিত হয়েছেন, তা জানিয়ে দেবেন।
তবে ওই দিনই নতুন প্রেসিডেন্ট শপথ নেবেন না। নতুন বছরের ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যর্থনা জানানো হবে। এদিন তারা শপথগ্রহণ করবেন।