ঘুষ এবং প্রতারণার মামলায় বুধবার ভারতের আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী গৌতম আদানিসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
নিউইয়র্কে মার্কিন কৌঁসুলিদের মামলার অভিযোগ বলেছেন, লাভজনক সৌর শক্তি সরবরাহ চুক্তি সুরক্ষিত করার জন্য ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তাদের ২ হাজার ২৯ কোটি রুপি ঘুষের চক্রান্ত করে আদানির বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি।
উপ-সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল লিসা মিলার বলছেন, গৌতম আদানি ও তার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা তাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানি কোম্পানির জন্য একটি কাজ পাওয়ার চেষ্টায় ভারতীয় কর্মকর্তাদের ২৫ কোটি ডলার ঘুষ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, যে কাজ পেলে আগামী ২০ বছরে তাদের ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি লাভ হতে পারে।
লিসা মিলার বলেন, আদানির বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদের ব্যবহার করে দুর্নীতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে রাষ্ট্রব্যাপী ওই বিশাল জ্বালানি শক্তির কন্ট্রাক্ট গ্রহণ ও অর্থায়ন করতে চেয়েছিলেন।
বিবিসির খবর বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে অভিযোগ গঠনের পর এ বিষয়ে আদানি গ্রুপের আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।
এই ঘুষের তদন্তের প্রতিবেদন কয়েক মাস ধরেই চলছে। প্রসিকিউটররা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ২০২২ সালে তদন্ত শুরু করেছিল এবং তদন্তে বাধাও এসেছে।
মার্কিন অ্যাটর্নি ব্রিয়ান পিস বলেছেন, অভিযুক্তরা বিলিয়ন ডলার মূল্যের চুক্তি সুরক্ষিত করার জন্য ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে একটি বিস্তৃত স্কিম সাজিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে মূলধন সংগ্রহ করার জন্য ঘুষের পরিকল্পনা সম্পর্কে মিথ্যা বলেছিলেন তারা।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে আদানি ঘুষের পরিকল্পনাকে এগিয়ে নিতে সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করেছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার দুই সপ্তাহের মাথায় আদানির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ গঠন হল। নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের পর সামাজিকমাধ্যমে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন গৌতম আদানি। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, তার প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রে ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে চায়।
বিবিসির প্রতিবেদন অনুসারে, নিউ ইয়র্কের আদালতে আদানির বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ ৬২ বছর বয়সী ধনকুবের আদানির জন্য নতুন এক ধাক্কা, যার ব্যবসার সাম্রাজ্য ছড়িয়ে আছে বন্দর ব্যবস্থাপনা থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি পর্যন্ত।
যুক্তরাষ্ট্রে আদানির ব্যবসা নিয়ে জটিলতা শুরু হয় ২০২৩ সালে, যখন বিনিয়োগ সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চ তাদের এক প্রতিবেদনে এ গ্রুপের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযোগ আনে।
সেখানে বলা হয়, আদানি গ্রুপ কয়েক দশক ধরে শেয়ারবাজারে কারসাজি এবং তাদের হিসাব-নিকাশে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে। গৌতম আদানিকে ‘কর্পোরেট জগতের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ধোঁকাবাজ’ আখ্যায়িত করা হয় ওই প্রতিবেদনে।
গৌতম আদানি ভারতের শাসক দল বিজেপি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত। আর এই ঘনিষ্ঠতা থেকে দুই পক্ষই লাভবান হচ্ছে বলে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধী দলগুলো অভিযোগ করে আসছে।