ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় রাতভর বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। বুধবার রাতের এ হামলায় বহু মানুষ নিহত ও আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন উত্তর গাজার হাসপাতালের কর্মকর্তারা।
গাজার উদ্ধারকারী দল বলছে, ইসরায়েল বেইত লাহিয়া এবং গাজা শহরের অন্তত পাঁচটি ভবনে বোমা হামলার পর আজ ভোরে অনুসন্ধান অভিযান শুরু হয়। নারী ও শিশুসহ অনেকে ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে আছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৮৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
বেইত লাহিয়ার কামাল আদওয়ান হাসপাতালের পরিচালক ডা. হুসাম আবু সাফিয়া আলজাজিরাকে বলেছেন, উত্তরাঞ্চলীয় এই শহরে ইসরায়েলি হামলার পরে বহু মানুষের মৃতদেহ হাসপাতালে আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, অধিকাংশ মৃতদেহই নারী ও শিশুদের।
কিন্তু ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়াদের বাঁচানোর কোনো উপায় নেই বলেও জানান তিনি। ইসরায়েলি বাহিনী এক মাসেরও বেশি সময় ধরে উত্তর গাজা অবরোধ করে রেখেছে এবং ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্সের জরুরি কর্মীদের ওই এলাকায় কাজ করতে বাধা দিচ্ছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
উত্তর গাজায় সাম্প্রতিক সময়ে হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। তারা বলছে, এর মাধ্যমে হামাসকে পুনরায় সংগঠিত করা থেকে বিরত রাখা হচ্ছে।
উত্তর গাজায় ইসরায়েলের স্থল অভিযান গত পাঁচ সপ্তাহে এক লাখ ৩০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, বেইট লাহিয়া, জাবালিয়া এবং বিত হানুন শহরে পানি ও খাবারের সরবরাহ কমে যাওয়ায় ৭৫ হাজার মানুষ অবরুদ্ধ রয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গত সপ্তাহের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে গাজায় ফিলিস্তিনিদের ব্যাপকভাবে বাস্তুচ্যুত করে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে।
এদিকে সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবে আবারও ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার (২০ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত এই ভোটে পরিষদের অন্যান্য সদস্যদের সমালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, প্রস্তাবটি নিয়ে আপসের প্রচেষ্টাকে নস্যাৎ করা হয়েছে।
১৫ সদস্যবিশিষ্ট পরিষদে ১০টি অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব তোলা হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র একমাত্র স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে ভেটোর মাধ্যমে প্রস্তাবটি আটকে দেয়।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের দাবি, এই হামলায় প্রায় ১২০০ নিহত ও দুই শতাধিক ইসরায়েলিকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে গেছে হামাস যোদ্ধারা। এর জবাবে ওই দিনই গাজায় বিমান হামলা ও পরে স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ১৩ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো এ হামলা অব্যাহত আছে।
গাজায় চলমান ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৩ হাজার ৯৭২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১ লাখ ৪ হাজার ৮ জন ফিলিস্তিনি। হতাহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।