রাইজিংবিডি স্পেশাল

সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়তি, বোরো চালের অপেক্ষায়

সাতক্ষীরায় পাইকারি বাজারে চালের দাম বাড়তির দিকেই যাচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রকারভেদে মণপ্রতি চাল ২০০-২৫০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে শুল্ককর প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর ভারত থেকে গত পাঁচ দিনে ৮৫ ট্রাকে করে চাল এসেছে ৩ হাজার ২১৮ মেট্রিক টন। মিলমালিক ও ব্যবসায়ীরা জানান, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়তি। বাজারে নতুন বোরো চাল না আসা পর্যন্ত জেলার চালের বাজার এমন অস্থিতিশীল থাকবে।

জেলার কয়েকটি চালকল ও পাইকারি বাজার ঘুরে জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকার বাজারে চালের সরবরাহ স্বাভাবিক এবং দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে শুল্ক প্রত্যাহারসহ নানা উদ্যোগেও ভোক্তার স্বস্তি মিলছে না। চালের বাজারের ঊর্ধ্বগতিতে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। এরই মধ্যে আমন ধান কাটা শুরু হলেও কমছে না চালের দাম। ভারতও চালের ওপর শুল্ক কমিয়েছে।

আমদানিকারকরা বলছেন, চাল যদি আমদানি করা হয়, তবে বর্তমানে দেশের বাজারের চেয়ে বেশি দাম দিয়ে ক্রেতাদের কিনতে হবে। শুল্ক কমানো হলেও এ মুহূর্তে দেশে চালের দামে প্রভাব পড়বে না। আর যে চাল আমদানি করা হয়েছে, তা বাজারে আসতে আরো এক সপ্তাহ সময় লাগবে। তাতেও আমদানিতে আগ্রহী নন চাল ব্যবসায়ীরা।

ভোমরা কাস্টমস শুল্ক স্টেশনের দেওয়া তথ্যমতে, শুল্ককর প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর গত ১৩ থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত ৮৫ ট্রাকে করে ভারত থেকে অনুমোদনপ্রাপ্ত আমদানিকারকদের মাধ্যমে মোটা সিদ্ধ চাল এসেছে ৩ হাজার ২১৮ মেট্রিক টন। এর মধ্যে শুধু ১৭ নভেম্বর চাল এসেছে ১ হাজার ১৩৯ মেট্রিক টন। প্রতি টন চালের দাম ৪১০ থেকে ৫০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত।

চালের দাম বাড়ার বিষয়ে সাতক্ষীরা শহরের চালতেতলা সাহা চালকলের স্বত্বাধিকারী তপন সাহা রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‘‘দেড় মাস আগে যে ‘মিনিকেট’ চালের মণ ২ হাজার ২৪০ টাকা বিক্রি করেছি, সেটি এখন ২ হাজার ৪২০। মোটা জাত ও আতপ চালের দাম প্রতি মণে ২০০-২৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।’’

তিনি বলেন, ‘‘সাতক্ষীরায় উৎপাদিত চালের একটি বড় অংশ জেলার বাইরে চলে যায়। ফলে স্থানীয় চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমলে তখন দামও বেড়ে যায়। নতুন বোরো চাল বাজারে না আসা পর্যন্ত জেলায় চালের বাজার এমন স্থিতিশীল থেকে যাবে।’’

শহরের সুলতানপুর বড়বাজারে খুচরা চাল কিনতে আসা গৃহিণী সাবিনা খাতুন রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‘‘গত মাসে প্রতি মণ ২৮ শ’ টাকা করে কিনেছি। এখন কিনতে হচ্ছে ৩ হাজার টাকা দরে। আমরা অসহায়, গরিব মানুষ আর পারছি না।’’

কলেজছাত্রী সুমাইয়া পারভীন রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‘‘প্রতি কেজি চাল ৩ থেকে ৪ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এভাবে চালের দাম বাড়তে থাকলে আমরা ছাত্র-ছাত্রীরাও পড়ছি চরম বিপাকে। মোটা বা আতপ চালের দামও কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।’’

মুনজিদপুর এলাকার ভ্যানচালক শফিকুল ইসলাম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‘‘সারাদিন ভ্যান চালিয়ে আয়-রোজগার খুবই কম হচ্ছে। ভরা মৌসুমেও বাজারে চালের দাম কমছে না। দফায় দফায় চালের দাম বৃদ্ধিতে হিমশিম অবস্থা সাধারণ মানুষের।’’

সুলতানপুর বড়বাজারের খুচরা চাল ব্যবসায়ী জাহিদ হোসেন রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‘‘চাহিদার তুলনায় বাজারে সরবরাহ যেমন কম, তেমনি পাইকারিতে দাম বাড়ায় তার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। প্রতি কেজিতে ৪-৫ টাকা দাম বেড়েছে।’’

সাতক্ষীরার সুলতানপুর বড়বাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতি সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল আজম খান রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‘‘বর্তমানে বাজারে ধান নেই। ধানের দাম বেশির কারণে বাজারে চালের দাম বেশি পড়ছে। এরই মধ্যে আমন ধান কাটা শুরু হলেও কমছে না চালের দাম। সরকার বাজারে চালের সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে শুল্ক প্রত্যাহারসহ নানা উদ্যোগ নিলেও ভোক্তার স্বস্তি মিলছে না। ভারত থেকে আমদানি করা চাল শুল্ক কমানো হলেও বাজারে তার দাম আরো বেশি হবে।’’

সাতক্ষীরা জেলা বাজার মনিটরিং কর্মকর্তা সালেহ্ মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ্ রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‘‘ভারত থেকে আমদানি করা চাল ও জেলায় কিছু এলাকায় ধান কাটা শুরু হয়েছে। এজন্য সাতক্ষীরার বাজারের চালের দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। সুলতানপুর বড় বাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আগের তুলনায় কেজি প্রতি ২-৩ টাকা কম দামে চাল বিক্রি হচ্ছে।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘বোরো মোটা চাল প্রতি কেজি ৫৩ থেকে ৫৪, বোরো ও হাইব্রিড মাঝারি চাল প্রতি কেজি ৬২ থেকে ৬৫ এবং বোরো ও হাইব্রিড সরু চাল কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে।’’

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‘‘জেলায় আমন ও বোরো মৌসুমে প্রায় ৬ লাখ টন চাল উৎপাদন হয়। এর মধ্যে সাতক্ষীরা জেলায় ৬০ শতাংশ চালের প্রয়োজন হয়। বাকি চাল চলে যায় ঢাকা, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এজন্য দামেও কিছুটা প্রভাব পড়ে।’’