রাইজিংবিডি স্পেশাল

চালের দামে অস্থিরতা: আলোচনায় ‘মিল সিন্ডিকেট’ ও ‘বাজার মনিটরিং’

চালের দামে অস্থিরতা: আলোচনায় ‘মিল সিন্ডিকেট’ ও ‘বাজার মনিটরিং’

দীর্ঘদিন পর বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে শুরু হয়েছে চাল আমদানি। অন্যদিকে বাজারেও নতুন চালের সরবরাহ শুরু হয়েছে। আমদানিকৃত ও নতুন চাল সরবরাহে বাজারে ঘাটতি না থাকলেও বরিশালের চালবাজার ‘লাগামহীন’। মোটা চালের দাম নামমাত্র কমলেও লাফিয়ে বাড়ছে ‘মিনিকেট’। বরিশালের বাজারে কেজিপ্রতি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। কেন বাজারে অস্থিরতা, এমন প্রশ্নে পাইকারি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ‘মিল সিন্ডিকেটের’ কারণে দেশব্যাপী চালের দাম বাড়ছে। তবে ক্রেতারা বলছেন, কার্যকর ‘মনিটরিং’ না হওয়ায় বাজারভেদে বাড়ছে দাম।

বরিশালের সবচেয়ে বড় পাইকারি চালের বাজার ফরিয়াপট্টি। সেখানে ঘুরে দেখা গেছে, ২৫ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা বুলেট হাইব্রিড ১১৭০-৮০ টাকা, গুটি স্বর্ণা ১৪০০, আঠাশ বালাম ১৪৫০-৬০ এবং ‘মিনিকেট’ ১৭২০-১৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বরিশাল চাল আড়ত ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক আলম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‘‘মিল সিন্ডিকেটের কারণে চালের দাম কমছে না। করোনাকালে বিভিন্ন মিলমালিকরা ব্যাপক লোকসানের সম্মুখীন হন। এ সুযোগে বিভিন্ন কোম্পানি এসব মিলগুলো লিজ নেয়। তারা এখন চালের বাজার দর নির্ধারণ করছে। দেশের সব চাল ব্যবসায়ীরা এখন তাদের কাছে জিম্মি। এ কারণে বাজারে চালের সরবরাহ থাকা স্বত্বেও দাম কমছে না।’’

ইলা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. আনোয়ার হোসেন রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‘‘আমরা অল্প কিছু লাভে ব্যবসা করি। মিল পর্যায়ে দাম বাড়ালে আমাদেরও বাড়াতে হয়। মিল পর্যায়ে দাম কমলে আমরাও কম দামে বিক্রি করি। বাজারে নতুন চালের সরবরাহ শুরু হয়েছে। ভারত থেকে চাল আমদানি করা হচ্ছে। কিন্তু তুলনামূলক দাম কমছে না। তবে এক সপ্তাহের মধ্যে চালের দাম কিছুটা কমবে বলে আশাবাদী।’’

একই বাজারের চাল ব্যবসায়ী মো. শহিদুল ইসলাম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‘‘মিল পর্যায়ে সঠিক মনিটরিং হলে চালের বাজারে অস্থিরতার সুযোগ নেই। কিন্তু মিল পর্যায়েই কেউ নজরদারি করে না। আমরা তো মিল থেকে কিনে এনে বিক্রি করি। মিলে দাম বাড়লে পাইকারি ও খুচরা বাজারে বাড়বে। মিলে কমলে আমাদের বাজারেও কমবে।’’

বরিশাল নগরীর বাংলাবাজার, নতুনবাজার ঘুরে এবং কয়েকটি মুদি দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুচরা বাজারে চালের মূল্যের তেমন কোনো পরিবর্তন নেই। পাইকারি বিক্রেতারা চালের দাম কিছুটা কমার কথা বললেও পূর্বের দামেই বিক্রি করছেন।

নগরীর নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‘‘সরকার বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে কোনো কাজই করছে না। মানুষ দুর্বিষহ জীবন পার করছেন। বাজারে সব মালামালের দাম বাড়তি। এখন চালের দামও বাড়তে শুরু করেছে। এখনই নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে মানুষের রাস্তায় নেমে আসা ছাড়া পথ থাকবে না।’’

আরেক ক্রেতা প্রভাতী বেপারী রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‘‘অবাক লাগে, যে কোনো সরকারই সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছে না। গত সরকার ১০ টাকায় চাল দেওয়ার কথা বলে ৬০/৭০ টাকার নিচে নামাতে পারেনি। আর এখনকার সরকার তো বাজার নিয়ন্ত্রণেই নিতে পারছে না। একেক বাজারে একেক দামে বিক্রি হচ্ছে। সরকারের জরুরি ভিত্তিতে চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানোর বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে সরকার ব্যর্থ হলে জনরোষ বাড়বে।’’