ক্যাম্পাস

হাসিনা-প্রদীপ যুগে ফিরতে চায় না টেকনাফ: মানববন্ধনে ঢাবি শিক্ষার্থীরা

শেখ হাসিনা ও ওসি প্রদীপ যুগে ফিরতে না চেয়ে মানববন্ধন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব উখিয়া টেকনাফ (ডুসাট)। এ সময় প্রশাসন ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার ফলেই কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের জননিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।

শনিবার (৩০ নভেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত মানববন্ধনে এসব অভিযোগ ও দাবি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উখিয়া ও টেকনাফের শিক্ষার্থীদের সংগঠন ডুসাট।

এ সময় ডুসাটের সভাপতি জয়নাল উদ্দীন বলেন, “উখিয়া-টেকনাফ মনুষ্য সৃষ্ট সমস্যায় খুবই জর্জরিত। গতকাল (শুক্রবার) ১৪ বছরের একটি বাচ্চাকে পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। তাকে একটি অস্ত্র মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। আমরা শুনেছি, তার বাবা একজন আওয়ামী লীগ নেতা। তার বাবা যদি দোষী হলে সে শাস্তি পাবে। কিন্তু বাবার শাস্তি ছেলে পেতে যাবে কেন?”

তিনি বলেন, “মাদকের মামলায় দরিদ্র পর্যায়ের যে মানুষগুলো মাদক স্থানান্তরের কাজে জড়িত, তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু সিন্ডিকেটের সদস্যদের গ্রেফতার করা হয় না। টেকনাফে ইউএনও ও ওসি হতে হলে লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। তারা সেখানে যায় বাণিজ্য করতে। তাদের সেবা দেওয়ার কোনো উদ্দেশ্য থাকে না। ওসি প্রদীপ ও মেজর সিনহা হত্যার ঘটনা আমরা সবাই জানি।”

তিনি আরো বলেন, টেকনাফে এমন কোনো মাস নেই, যে মাসে চার-পাঁচজনকে অপহরণ করে পাহাড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না। ৫-১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে তাদের উদ্ধার করা হচ্ছে। এ টাকা কিন্তু বিকাশে দিচ্ছে না, সরাসরি হাতে হস্তান্তর করছে। ভিকটিমের পরিবার কিন্তু ওই টাকা দিতে যাচ্ছে না। ভিক্টিমের পরিবার তাদের জায়গা-জমি, সম্পত্তি বিক্রি করে এলাকার ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানের হাতে সেই টাকা দেয়। মূলত আমাদের রক্ষকরাই হচ্ছেন আল্টিমেটলি এ সিন্ডিকেটের সদস্য।”

উপজেলা দুটি চরম নিরাপত্তাহীন উল্লেখ করে সভাপতি বলেন, “উখিয়া টেকনাফের মা-বোনেরা ঠিকমতো ঘুমাতে পারছেন না। এর একপাশে পাহাড় আরেক পাশে সমুদ্র। আমরা পাহাড়ে পানের বরজ করি, সুপারি চাষ করি। কিন্তু সেখানে এখন আর আমরা যেতে পারছি না। পাহাড়ে গেলেই কিডন্যাপ করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আগে আমাদের জেলেরা নাফ নদীতে মাছ ধরতে যেতেন। কিন্তু এখন নিষেধাজ্ঞার ফলে জেলেরা সেখানে যান না। নদীটি এখন মাদক সরবরাহের স্বর্গরাজ্য বানানো হয়েছে।”

স্থানীয় রাজনীতি নেতৃবৃন্দের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে সভাপতি আরও বলেন, “আমাদের উখিয়া টেকনাফে যে সন্ত্রাসী চক্র, সেটা শুধু আওয়ামী লীগের না; বিএনপিরও আছে। সব রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালীরা আছে।”

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমি ঢাকাতে থাকায় সেইফ থাকি। কিন্তু আমার এমন একটা দিন যায় না, যেদিন পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। গত ১৫ বছরে প্রশাসন আমাদের নিরাপত্তা দিতে পারেনি। দ্বিতীয় স্বাধীনতার পর এ সরকারও পারেনি। প্রশাসনের কাছে আমরা বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে গেলে আমাদের জন্য তাদের সময় থাকে না।”

“উখিয়া ও টেকনাফের বিদ্যমান আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সমন্বয়হীনতা, জনগণের নিরাপত্তাহীনতা, প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের দুর্নীতির ফলেই বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম ঘটছে,” যুক্ত করেন সাইফুল।

মানববন্ধন থেকে শিক্ষার্থীরা আট দফা দাবি জানান। দাবিগুলো হলো- সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাফির গ্রেপ্তার নিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে এবং তদন্ত সাপেক্ষে তাকে মুক্তি দিতে হবে; টেকনাফ থানার ওসি মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে; উখিয়া-টেকনাফের পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি ও কোস্ট গার্ডে সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে হবে; সন্ত্রাস, মাদক, অপহরণ ও চাঁদাবাজি নির্মূলে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

অন্য দাবিগুলো হলো- প্রশাসনের কার্যক্রম নিয়মিত পর্যবেক্ষণের আওতায় নিতে হবে; উখিয়া ও টেকনাফে পূর্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে; উখিয়া ও টেকনাফের সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের কার্যক্রম আরো জোরদার করতে হবে; প্রশাসনের কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আসলে দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।