অর্থনীতি

বিক্রি হচ্ছে বেক্সিমকো গ্রুপের ‘বি’ ক্যাটাগরির প্রতিষ্ঠান

দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বেক্সিমকো গ্রুপের ‘বি ক্যাটাগরি’ কোম্পানিগুলোর স্বত্ত্ব বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেক্সিকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের শ্রম ও ব্যবসা পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।

গত ২৮ নভেম্বর কমিটির আহ্বায়ক শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসা পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির প্রথম সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বেক্সিমকো শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনের দাবিতে শিল্প এলাকাগুলোতে ক্রমাগত আন্দোলনের মুখে সরকার গত ২৪ নভেম্বর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেনকে আহ্বায়ক করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে। গত ২৮ নভেম্বর কমিটির প্রথম সভা হয়।

জানা গেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে শ্রম পরিস্থিতি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনীর শিল্প নিরাপত্তা টাস্কফোর্স, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন এবং মালিক ও শ্রমিক নেতাদের নিরলস চেষ্টার কথা তুলে ধরা হয়। সভায় ৩টি সুনির্দিষ্ট আলোচ্য সূচি যথাক্রমে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের প্রতিষ্ঠানসমূহের শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে মধ্যমেয়াদি ও স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে সুপারিশ প্রণয়ন, একই ধরনের প্রতিষ্ঠানসমূহে ইস্পিত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য করণীয় নির্ধারণ এবং ন্যাশনাল টি কোম্পানির শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের বিষয়ে কমিটির সদস্যদের মতামতের প্রেক্ষিতে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত হয় বলে সূত্র জানিয়েছে।

সভায় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘‘শিল্পের শ্রমিকদের মজুরিসহ সার্বিক কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। কিন্তু সম্প্রতি শ্রমিকেরা তাদের বকেয়া ও ন্যায্য মজুরি না পেয়ে প্রায়ই রাস্তাঘাট বন্ধসহ বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। ফলে গার্মেন্টসসহ অন্যান্য খাতেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় সরকারের রাজস্ব খাত থেকে মজুরি প্রদানের লক্ষ্যে অর্থ বরাদ্দ করেছে। তবে এ ধরনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিল্প ও প্রত্যাশী ব্যাংকের সঙ্গে গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করা উচিত। এ ক্ষেত্রে শিল্প প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অর্থ সংস্থানে দেওলিয়া বা ব্যর্থতা সম্পূর্ণ দায়বভার ঋণ প্রদানকারী ব্যাংকের।’’

উপদেষ্টা বলেন, ‘‘দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক সহায়তা দিয়ে দ্রুত মজুরি পরিশোধ করে বেক্সিমকো ও ন্যাশনাল টি কোম্পানি বিক্রি করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দেন, যাতে শিল্প উপদেষ্টাও সহমত পোষণ করেন।’’

সভায় প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন বিষয়ক বিশেষ সহকারী, বেক্সিমকো লিমিটেডের রিসিভার, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি, জনতা ব্যাংকের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক, কৃষি ব্যাংকের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত, চেয়ারম্যান, সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, অ্যাটর্নি জেনারেল, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব, অর্থ সচিব, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান ও বিজিএমইএ এর প্রশাসক অংশ নেন।

সভায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘বেক্সিমকোর ১৬৯টি কোম্পানির মধ্যে তিনটি ক্যাটাগরি করা যেতে পারে। ‘এ’ ক্যাটাগরিতে বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেড লাভজনক কোম্পানি, তবে তাদের শেয়ার হোল্ডারদের শেয়ার স্থানান্তরের বিষয়টি আইনগতভাবে স্থগিত করা যেতে পারে। ‘বি’ ক্যাটাগরিতে ৩২টি কোম্পানির মধ্যে ১৬টি মূলত গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল কারখানা যেগুলো চলমান আছে। বাকি কোম্পনিগুলো ‘সি’ ক্যাটাগরির। ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট ‘এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট (ইওআই)’ জারি করে ঋণ দানকারী সংস্থা জনতা ব্যাংক ও আইএফআইসি ব্যাংকের মাধ্যমে খ্যাতি সম্পন্ন আন্তর্জাতিক অপারেটরদের কাছে ব্যবস্থাপনা স্বত্ব বিক্রি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। ‘সি’ ক্যাটাগরির ক্ষেত্রে তিন মাসের প্রয়োজনীয় বেতন-ভাতা পরিশোধ করে বন্ধ করে দেওয়া যেতে পারে। সমজাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে বিশেষ করে, ইপিজিড ও ইপিজেড-এর বাইরে বিভিন্ন শিল্প কারখানায় উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে আলোচনায় গুরুত্বারোপ করা হয়। ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেড এর শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধের লক্ষ্যে কৃষি ব্যাংকের কাছে অর্থ সংস্থানের বিষয়ে আলোচনা হয়।

সিদ্ধান্ত ১. বেক্সিমকো ইন্ডাষ্ট্রিয়াল পার্কের প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রমিকদের আগামী ৩ মাসের বেতনের প্রয়োজনীয় অর্থ জনতা ব্যাংক যোগান দেবে।   ২.বেক্সিমকোর কোম্পানিগুলোর মধ্যে ‘বি’ ক্যাটাগরি' কোম্পানিসমূহের স্বত্ত্ব বিক্রির লক্ষ্যে এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট (ইওআই) চূড়ান্ত করে ঋণ প্রদানকারী জনতা ব্যাংক আগামী ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবে। ৩. হাইকোর্ট বিভাগে চলমান রিটের জবাব প্রস্তুতের লক্ষ্যে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবী নিয়োগ করে রিসিভারের টিওআর চূড়ান্ত করা ও রিটের জবাব যথাযথভাবে প্রয়োজনীয় সাপোর্টিং ডকুমেন্টসসহ অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে প্রেরণ করা হবে। এক্ষেত্রে আইনজীবী নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থ অর্থ বিভাগ সংস্থান করবে। ৪. আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে বেক্সিমকোর কোম্পানিগুলোর শেয়ার হস্তান্তরের নিয়ন্ত্রণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করবে।

এছাড়া সভায় ইপিজেড এর অভ্যন্তরে এবং বাইরেও অবস্থিত শিল্প প্রতিষ্ঠান নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সভায় চা বাগান শ্রমিকদের বেতন, ন্যাশনাল টি কোম্পানির সরকারি শেয়ার বাড়ানো এবং ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেড এর অবিক্রিত ২২ লাখ কেজি চা দ্রুত বিক্রির ব্যবস্থা নিতেও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়।