সারা বাংলা

মেয়ের মুখে ‘বাবা’ ডাক শোনা হলো না আলমগীরের

“দুই ছেলের পর তার ইচ্ছে ছিলো একটি মেয়ের বাবা হওয়ার। বলতেন- ‘আল্লাহতো তোমাকে দুটি ছেলে দিয়েছেন, আমাকে যদি একটি মেয়ে দিতেন’। গত ২৯ সেপ্টেম্বর আমি মেয়ে সন্তানের জন্ম দিলাম। কিন্তু তার আর মেয়ের মুখে বাবা ডাক শুনা হলোনা তার। গত ৫ আগস্ট ঢাকার উত্তরার রাজলক্ষী এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন আমার আইরার বাবা।” 

পৃথিবীর আলো দেখার আগে আইরা মনি তার বাবা আলমগীর হোসেনকে হারিয়েছে এ নিয়ে আক্ষেপ করেই চলেছেন স্ত্রী হোসনে আরা।

আলমগীর হোসেন নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার আমিশাপাড়া ইউনিয়নের কাজিরখিল গ্রামের নুরু মিয়া সর্দার বাড়ির মো. শাহজাহানের ছেলে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর ঢাকার উত্তরার রাজলক্ষী এলাকায় গুলিতে তিনি নিহত হন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফুটফুটে নবজাতক আইরা মনি মায়ের কোলে। কখনো কাঁদছে আবার কখনো চুপ। পাশে তার দুই ভাই। সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অঝোরে কাঁদছেন আলমগীরের স্ত্রী হোসনে আরা।

অঝোরে কাঁদছেন আলমগীরের স্ত্রী হোসনে আরা

জানা যায়, আলমগীর হোসেন ঢাকায় বাস চালিয়ে পরিবারের যাবতীয় খরচ যোগাতেন। আলমগীর হোসেন যখন নিহত হন তখন স্ত্রী হোসনে আরা ছিলেন সাত মাসের গর্ভবতী। এরপর থেকে তার সুখের পরিবারে নেমে আসে অন্ধকার। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীকে হারিয়ে শোকে কাতর হোসনে আরা।

স্ত্রী হোসনে আরা বলেন, “আমার স্বামী বাস চালিয়ে আমাদের সংসার চালাতো৷ আমার দুই ছেলে। তার অনেক ইচ্ছা ছিল একটা মেয়ে সন্তানের। তার মৃত্যুর দুই মাস পর ২৯ সেপ্টেম্বর মেয়ে সন্তান ঠিকই পৃথিবীতে এসেছে কিন্তু সে দেখে যেতে পারলো না। আমার মেয়েটা জন্মের আগেই এতিম হয়ে গেছে।”

তিনি বলেন, “৫ আগস্ট আমার স্বামীর বাস চালানোর ডিউটি ছিল না। তিনি বাসায় ঘুমিয়ে ছিলেন। সে দুপুরে রাজলক্ষীতে গিয়েছিলেন পরিস্থিতি দেখার জন্য। সেখানে পুলিশের গুলিতে মারা যান তিনি। গুলিতে তার মাথার মগজ আলাদা হয়ে পরে ছিল। তার কবরে আলাদা পলিথিনে মগজসহ দাফন করা হয়েছে । দুই ছেলে ও এক মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করলে অন্ধকার হয়ে আসে। আল্লাহ জানে আমাদের ভবিষ্যৎ কি রকম হবে।”

আলমগীর হোসেনের চাচী তাসলিমা আক্তার বলেন, “আলমগীর আমাকে মা বলে ডাকতো। খোঁজখবর নিতো। ছেলেটা মারা যাওয়ার পর তার স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে কষ্টে দিন পার করছে। তার মধ্যে আলমগীরের মৃত্যুর দুই মাসের সময় কন্যা সন্তান হয়েছে। নবজাতক নিয়ে তার স্ত্রী কষ্টে আছে। সন্তানদের কথা চিন্তা করে সব অঝোরে কাঁদছে।”

সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাছরিন আকতার বলেন, “খবর পেয়ে আলমগীর হোসেনের স্ত্রীর সাথে জেলা প্রশাসক যোগাযোগ করেছেন। এছাড়া সরকারের কাছে আমরা তালিকা প্রেরণ করেছি। বড় আকারের সরকারি সহায়তা তিনি পাবেন। তাছাড়া উপজেলা প্রশাসন সব সময় তাদের পাশে থাকবে। আমি সব সময় খোঁজখবর নিবো।”

জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, “আমি যোগদানের পরপর বিভিন্ন উপজেলায় শহীদ পরিবারের সাথে দেখা করেছি এবং তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আলমগীর হোসেনর কথা জানার পর আমি তার বাড়িতে গিয়েছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন সব সময় আলমগীরের পরিবারের পাশে থাকবে। সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও নেওয়া হবে।”