মাত্র তিন দিনের মধ্যে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগত সরকারি বাহিনীর অত্যাশ্চর্য পতনের পর বিদ্রোহীরা সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পো দখল করে নিয়েছে। আক্রমণের নেতৃত্বে ছিলেন আবু মোহাম্মদ আল-জুলানি। তিনি হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) এর প্রধান। এটি এই মুহূর্তে সিরিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী সশস্ত্র বিদ্রোহী বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।
কিন্তু কে এই আবু মোহাম্মদ আল-জুলানি? তার অতীত-ই বা কী?
এইচটিএস-এর প্রতিষ্ঠাতা আল-জুলানি প্রায় এক দশক ধরে সিরিয়ার অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিলেন। এই সময়টাতে তিনি সিরিয়ায় একটি ‘ইসলামিক প্রজাতন্ত্র’ গঠনের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন। ২০১৬ সাল থেকে তিনি নিজেকে এবং তার দলকে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের কাছ থেকে মুক্ত করার নেতৃত্ব হিসাবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
এইচটিএস সিরিয়ান স্যালভেশন গভর্নমেন্টের মাধ্যমে ইদলিবের গভর্নরেট পরিচালনা করেছিল। ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত স্যালভেশন গভর্নমেন্ট নাগরিক পরিষেবা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, বিচার বিভাগ এবং অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি অর্থ ও ত্রাণ বিতরণ পরিচালনা করছে। এইচটিএসও কঠোর হাতে শাসন করে এবং ভিন্নমত সহ্য করে না বলে জানিয়েছে অধিকারকর্মী ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যম।
আবু মোহাম্মদ আল-জুলানি ১৯৮২ সালে সৌদি আরবের রিয়াদে জন্মগ্রহণ করেন। সেখানে তার বাবা পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কাজ করতেন। এই পরিবারটি ১৯৮৯ সালে সিরিয়ায় ফিরে আসে এবং দামেস্কের কাছে বসতি স্থাপন করে।
২০০৩ সালে ইরাকে যাওয়ার আগে দামেস্কে জুলানির কার্যক্রম সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। সেখানে তিনি একই বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণের প্রতিরোধের অংশ হিসাবে ইরাকে আল-কায়েদাতে যোগদান করেছিলেন। ২০০৬ সালে ইরাকে মার্কিন বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন জুলানি এবং পাঁচ বছর আটক ছিলেন। মুক্তির পর আল-জুলানিকে পরে সিরিয়ায় আল-কায়েদার শাখা আল-নুসরা ফ্রন্ট প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। গোষ্ঠীটি বিরোধী-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বিশেষ করে ইদলিবে প্রভাব বৃদ্ধি করেছিল।
আল-জুলানি ওই সময় আল-কায়েদার শাখা ইসলামিক স্টেট ইন ইরাকের প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদির সাথে কাজ করছিলেন। ২০১৩ সালে বাগদাদি হঠাৎ করে আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দেন এবং আইএসআইএস প্রতিষ্ঠা করেন। আল-জুলানি আল-কায়েদার প্রতি আনুগত্য বজায় রেখে এই পরিবর্তন প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। পরের বছরগুলোতে আল-জুলানি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে ‘বৈশ্বিক খিলাফত’ প্রতিষ্ঠার আল-কায়েদার প্রকল্প থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেন। ওই সময় তিনি সিরিয়ার ভেতরে নিজের কার্যক্রম সীমিত করে নেন।
২০১৬ সালের জুলাইয়ে আলেপ্পোতে আসাদের শাসনের পতন ঘটে এবং সেখানকার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো ইদলিবের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। ২০১৭ সালের শুরুর দিকে হাজার হাজার যোদ্ধা আলেপ্পো থেকে পালিয়ে ইদলিবে প্রবেশ করে এবং আল-জুলানি সমমনা বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে নিয়ে এইচটিএস গঠন করেন।