আমরা প্রায়ই এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হই ‘আপনি ইন্ট্রোভার্ট নাকি এক্সট্রোভার্ট?’। ইন্ট্রোভার্ট ও এক্সট্রোভার্ট ব্যক্তিভেদে আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে। কোন কোন বৈশিষ্ট্য থাকলে একজনকে ইন্ট্রোভার্ট আর কোন কোন বৈশিষ্ট্য থাকলে একজনকে এক্সট্রোভার্ট বলা যায়-সেই বিষয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেছেন জাতীয় মানসিক সাস্থ্য ইনস্টিটিউটের এফসিপিএস পার্ট ২ ট্রেইনি মনোবিদ ডা. মুনিরা হোসেন মনি।
তিনি বলেন, ‘‘মূলত ইন্ট্রোভার্ট এবং এক্সট্রোভার্ট আমাদের ব্যক্তিত্বের একটি অংশ। বর্তমান সময় অন্যদের সাথে মেলামেশা করতে পারা, সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারা, নিজের প্রচারণা চালানো, এগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ স্কিল মনে করা হয়। যারা এগুলো করতে পারেন— ভাবেন যে সফল হতে পারবেন, তাদের টিপিক্যাল এক্সট্রোভার্ট হিসেবে ধরে নেওয়া যায় । অন্যদিকে ইন্ট্রোভার্টরা সামাজিকভাবে মেলামেশা করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন না। অনেক মানুষ তাদেরকে ভালোমতো বুঝতে না পেরে মনে করেন তারা অসামাজিক এবং তারা বন্ধুত্বপূর্ণ নয়। অথবা তারা বোরিং। আধুনিক মনোবিজ্ঞানে এখন সাধারণত মানুষকে সরাসরি ইন্ট্রোভার্ট বা এক্সট্রোভার্ট বলা হয় না। বলা হয়ে থাকে ইন্ট্রোভার্শন অথবা এক্সট্রোভার্শন। আপনার মধ্যে শতভাগ ইন্ট্রোভার্শন অথবা এক্সট্রোভার্শন থাকা ব্যাপারটি রেয়ার। ধরুন একজন মানুষের মধ্যে ৪০ ভাগ ইন্ট্রুভার্শন এর বৈশিষ্ট্য আছে এবং ৬০ ভাগ এক্সট্রুভার্শন এর বৈশিষ্ট্য আছে। অর্থাৎ আপনার মধ্যে ইন্ট্রোভার্ট এবং এক্সট্রোভার্ট দুইটার ই বৈশিষ্ট্য কম বেশি মাত্রায় থাকতে পারে।
যেভাবে বুঝবেন আপনি ইন্ট্রোভার্ট নাকি এক্সট্রোভার্ট: যদি ইন্ট্রোভার্শন এর মাত্রা এক্সট্রোভার্শন মাত্রার থেকে বেশি থেকে থাকে তখন আমরা বলতে পারি মানুষটি ইন্ট্রোভার্ট। তেমনি যদি এক্সট্রোভার্শন এর মাত্রা বেশি পাওয়া যায় তখন আমরা মানুষটিকে এক্সট্রোভার্ট বলতে পারি।
ডা. মুনিরা হোসেন মনি জানান, ইন্ট্রোভার্টরা সাধারণত নিজের জগত, নিজের চিন্তাভাবনার দিকে বেশি মনোযোগ দেন। অন্যদিকে এক্সট্রোভার্টরা বহির্মুখী, সামাজিক কর্মকাণ্ডের দিকে বেশি ফোকাসড থাকতে পছন্দ করেন। ইন্ট্রোভার্টরা যখন নিজ পরিবেশে, নিজের মতো থাকেন তখন তারা সাধারণত recharged ফিল করেন। অন্যদিকে এক্সট্রোভার্টরা সামাজিক কর্মকাণ্ড এবং মেলামেশায় নিজেকে স্বতঃস্ফূর্ত রাখতে পছন্দ করেন। ইন্ট্রোভার্টরা সাধারণত তাদের মনের কথা সবার সাথে স্বাচ্ছন্দ্যে প্রকাশ করতে পারেন না। অন্যদিকে এক্সট্রোভার্টরা সহজেই নিজেকে প্রকাশ করতে পারেন। ইন্ট্রোভার্টরা একটু গম্ভীর প্রকৃতির হয়ে থাকেন। অন্যদিকে এক্সট্রোভার্টরা হাসিখুশি, চঞ্চল স্বভাবের হয়ে থাকেন। তারা সহজেই এগিয়ে গিয়ে মানুষের সাথে পরিচিত হতে পারেন, যেটাতে ইন্ট্রোভার্টরা একটু অস্বস্তিবোধ করেন। এক্সট্রোভার্টরা (adventure) ঘুরতে ভালোভাসেন। ইন্ট্রোভার্টরা এক্ষেত্রে নিজের মতো থাকতেই ভালোবাসেন।
ডা. মুনিরা হোসেন মনি আরও বলেন, ‘‘কথা বলা, ভাব বিনিময়ের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ইন্ট্রোভার্টরা কথা বলার আগে বেশ চিন্তাভাবনা করে ধীরে ধীরে কথা বলেন। এ ছাড়াও তারা কথা বলার চেয়ে শুনতে বেশি পছন্দ করেন। অন্যদিকে এক্সট্রোভার্টরা তুলনামূলক ভাবে একটু বেশি কথা বলেন এবং সবার সাথে কথা বলতে ভালোবাসেন। ইন্ট্রোভার্টরা সাধারণত একা একা কাজ করতে পছন্দ করেন অন্যদিকে এক্সট্রোভার্টরা টিম নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করেন।’’