সারা বাংলা

‘কত সাংবাদিকই ছবি তুইল্লা নিছে ব্রিজ হইলো কই?’

“কত সাংবাদিকই তো ছবি তুইল্লা নিছে। কিন্তু ব্রিজ হইলো কই? নির্বাচন আসলে শুনতাম পাশ করলে এইবার অমুক এমপি, তমুক চেয়ারম্যান নদীর ওপর ব্রিজ কইরা দিব। নির্বাচন শেষ হওয়ার পর তাদের আর খোঁজ পাওয়া যায় নাই।” 

শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) এভাবেই আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার টানবলাকী গ্রামের ৭০ বছর বয়সী আব্দুল লতিফ।

জানা গেছে, গজারিয়া উপজেলার হোসেন্দী ইউনিয়নের টানবলাকী ও চরবলাকী দুই গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে মেঘনার একটি শাখা নদী। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে নদীতে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন এই দুই গ্রামের বাসিন্দারা। বছরের পর বছর জনপ্রতিনিধিদের আশ্বাস পেলেও নদীর ওপর এখনো একটি সেতু তৈরি হয়নি। জরাজীর্ণ কাঠ-বাঁশের সেতুর ওপর দিয়ে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ।

চর বালাকী গ্রামের বাসিন্দারা জানান, হোসেন্দী ইউনিয়নের নদীবেষ্টিত চরবলাকী, টানবলাকী ও ভাটি বলাকী গ্রাম। তিন গ্রামের মানুষ চরবলাকী খেয়াঘাট দিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে আসা যাওয়া করেন। ভাটি বলাকী ও টানবলাকী গ্রামকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে মেঘনার শাখা নদী। এই শাখা নদীর ওপর কাঠ-বাঁশের সেতুর ওপর দিয়ে গ্রামবাসীকে বুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। জরাজীর্ণ কাঠ-বাঁশের সেতুটি সংস্কারে কেউ এগিয়ে না আসায় দুর্ঘটনা এখানে নিত্যদিনের ব্যাপার। গ্রামবাসী নদীর ওপর একটি পাকা ব্রিজ নির্মাণের জন্য দাবি জানালেও এখন পর্যন্ত কোনো সেতু করেনি প্রশাসন। 

চর বলাকী গ্রামের আছমা বেগম (৫০) বলেন, “জরাজীর্ণ সেতুটি পারাপারে বেশি সমস্যায় পড়ে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, বয়স্ক মানুষ ও শিশুরা। এই প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে নিয়মিত উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করে থাকেন শিক্ষার্থীরা। আমাদের অনেকদিনের দাবি একটি ব্রিজ যেন করে দেওয়া হয়। বর্ষাকালে আমাদের ভোগান্তি বাড়ে।”

তিনি আরো বলেন, “আগেও অনেক সাংবাদিক এসেছিলেন। তারা আমাদের ভোগান্তির কথা শুনেছেন। নদীর ওপর থাকা সাঁকোর ছবি তুলে নিয়ে গেছেন। জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচনের সময় এসে ব্রিজ করার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে, নির্বাচন হয়ে গেলে তাদের আর খোঁজ থাকে না।”

টানবলাকী গ্রামের কলেজ শিক্ষার্থী ফাহিমা আক্তার বলেন, “ঘুনে ধরা কাঠের সাঁকোতে এই নদী পার হতে ভয় লাগে।” 

স্থানীয় ইউপি সদস্য নবি হোসেন বলেন, “উপজেলা সদরে ব্যবসা-বাণিজ্য, হাট বাজার, চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যাতায়াত, মামলা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় যেকোনো কাজে এই সেতুর ওপর দিয়েই নদীর এ পাড়ের মানুষদের চলাচল করতে হয়। পায়ে হেঁটে ঝুঁকি নিয়ে সেতুটি পার হতে হয় তাদের।

গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কহিনূর আক্তার বলেন, “এ সম্পর্কে শুনেছি। খোঁজ খবর নিয়ে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”