জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও রংপুর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেছেন, বিগত সময়গুলোর মতো এখনকার সরকারও বৈষম্য করছে। অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যেমন গায়েবি মামলা ও হামলা হয়েছিল, এখনো তেমনি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টির রংপুর সেন্ট্রাল রোডের দলীয় কার্যালয়ে ‘সংবিধান সংরক্ষণ ও গণতন্ত্র দিবস’ উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
দিবসটি গুরুত্ব তুলে ধরে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, “আজকে এ দিনটা জাতীয় পার্টির রাজনীতির জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক সেই প্রত্যাশায় ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন। এখন যে বিএনপিসহ অন্য দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলেছে, ৯০’ সালে ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় এরশাদ সাহেব সেই রূপরেখা তৈরি করে দিয়েছিল। যাতে কোনো দলীয় সরকারের অধীনের নির্বাচন না হয়। আওয়ামী লীগ সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। তারপর থেকে চলছিল এক দলীয় শাসন। জনগণের মতামতকে উপেক্ষিত করে আওয়ামী লীগ দেশটাকে তাদের বাপের দেশ বানিয়েছিল। যার কারণে ছাত্র-জনতার মাধ্যমে চব্বিশের জুলাই বিপ্লবে হাসিনার পতন হয়েছে।”
জাতীয় পার্টির ও চেয়ারম্যান মোস্তফা আরও বলেন, “ছাত্র-জনতার এ গণঅভ্যুত্থান হয়েছে একটি স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। এ আন্দোলনে কয়েক হাজার মানুষ মারা গেছে। আহত হয়েছে প্রায় চল্লিশ হাজার। এতগুলো মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এখন যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং বিগত সরকারের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আগে বিএনপি যা করেছে, আওয়ামী লীগ যা করেছে এ সরকারও তা করছে। কোনো পরিবর্তন নেই। আগেও গায়েবি মামলা-হামলা হয়েছে, এখনো বিভিন্নভাবে মামলা-হামলা হচ্ছে। মানুষের কণ্ঠরোধ করা ও হয়রানি করার যে নিয়মনীতি তার এখনো কোনো পরিবর্তন হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা চেয়েছিলাম বৈষম্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন। এখনকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেই বৈষম্যের মধ্যেই আছে। জাতীয় পার্টিকে ডাকা হচ্ছে না। কাকে নিয়ে ঐক্যের ডাক দেওয়া হয়েছে? বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের প্রায় ৩২ শতাংশ ভোট। এখন তাদের ভোট ধরেন ২০ শতাংশ হবে। সবশেষ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ভোট ৭ শতাংশ। এই ২৭ শতাংশসহ জাসদ-বাসদ ও অন্যান্য দলের যারা আছে তাদের বাদ দিয়ে অর্থাৎ ৪০ শতাংশ মানুষকে বাদ দিয়ে কীভাবে ঐক্য সম্ভব? এই ঐক্যে ঐক্য থাকবে না।”
বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে জাতীয় পার্টির শীর্ষ এই নেতা বলেন, ”ঐক্যের ডাক দিলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে নিয়ে কাজ করতে হবে, কাউকে বাদ দিয়ে নয়। জাতীয় পার্টি কখনো আওয়ামী লীগের দোসর ছিল না। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতসহ অন্যান্য দলগুলো চেয়েছিল একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। সেই ডাকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সাড়া দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে এসেছিল। ২৯৬টি আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন বিক্রি হয়েছিল, সেখান থেকে ২৫৪ জন মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছিল। তখন শুধু ৪২ জন যারা জাতীয় পার্টির দালাল এবং সুবিধাবাদী। তারা রওশন এরশাদকে নিয়ে নির্বাচন করেছিল। তখন তো বিএনপি কথা বলেনি। ২০২৪ সালের নির্বাচনে জিএম কাদেরকে পার্টি অফিসে রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে জিম্মি করে তাকে নির্বাচনে যেতে বাধ্য করল, তখনও তো আপনারা আমাদের পাশে দাঁড়ালেন না। ২০১৮ সালে তো বিএনপিও নির্বাচন করেছে, তাহলে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের দোসর হয় কীভাবে? যারা জাতীয় পার্টিকে বাদ দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন তাদের স্বপ্ন কোনো দিনও পূরণ হবে না। জাতীয় পার্টি ছাড়া আগামীতে কোনো নির্বাচন হবে না।”
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর মহানগর সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসিনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব ও রংপুর জেলার সদস্য সচিব হাজী আব্দুর রাজ্জাক।
এছাড়াও বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও রংপুর মহানগর সিনিয়র সহ সভাপতি লোকমান হোসেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় যুব সংহতি রংপুর জেলার সভাপতি হাসানুজ্জামান নাজিম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ও রংপুর মহানগর কমিটির সিনিয়র সহ সভাপতি জাহেদুল ইসলাম।
আলোচনা সভায় রংপুর জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টি এবং অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।