ক্যাম্পাস

শ্রেষ্ঠ জয়িতা সম্মাননা পেলেন রোকেয়া রহমান

শ্রেষ্ঠ জয়িতা সম্মাননা পেয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. সুলতানা আক্তারের মা রোকেয়া রহমান। দেশব্যাপী পরিচালিত ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ শীর্ষক কার্যক্রমের আওতায় তিনি মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার সফল জননী ক্যাটাগরীতে এ সম্মাননা লাভ করেন।

সোমবার (৯ ডিসেম্বর) উপজেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে তার হাতে সম্মাননা স্মারক ও সনদ তুলে দেন মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলা প্রশাসক মো. বেলাল হোসেন। 

জানা গেছে, রোকেয়া রহমান ১৯৬৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ জেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের ধলাই গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। ছোটবেলায় বাবা মারা যাওয়ার কারনে তিনি বেশিদূর পড়ালেখা করতে পারেননি। মাত্র ১৬ বছর বয়সে নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ১৯৮১ সালের ১১ জুন মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার ছোট শাকরাইল গ্রামের আব্দুর রহমানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।

রোকেয়া রহমানের পড়ালেখার প্রতি ছিল প্রবল অনুরাগ। তিনি পড়ালেখা করার সুযোগ না পাওয়ায় সন্তানদের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন। সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে নিজের স্বপ্নপূরণ করার চেষ্টা করেছেন। নিজের লুকানো স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে সন্তানদের নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। সন্তানদের পড়ালেখায় উৎসাহ প্রদানের পাশাপাশি যাবতীয় খরচ যুগিয়েছেন।

ব্যক্তি জীবনে রোকেয়া রহমান দুই কন্যা ও দুই পুত্র সন্তানের জননী। বড় মেয়ে রোজিনা মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বিবিএস (হিসাববিজ্ঞান) ও এমবিএস সম্পন্ন করে ৪০নং দৌলতপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত আছেন। ছোট মেয়ে ড. সুলতানা আক্তার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে সুলতানা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।

রোকেয়া রহমানের বড় ছেলে সেলিম মোল্লা কৃতিত্বের সাথে মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বিবিএস (হিসাববিজ্ঞান) ও এমবিএস (প্রথম শ্রেণি) সম্পন্ন করে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার চরকাটারি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব হিসেবে কর্মরত আছেন। ছোট ছেলে ইসতিয়াক মাহমুদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে কৃত্বিত্বের সাথে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কর্মরত আছেন।

জীবন সংগ্রামের গল্প শুনতে চাইলে রোকেয়া রহমান বলেন, “খুব অল্প বয়সে আমার বিয়ে হয়ে যায়। স্বামীর সংসারে এসে নানা প্রতিকূলতা ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে খুবই চিন্তিত হতাম। কিন্তু কোনদিন হতাশ হইনি। স্বামীর কৃষি কাজের আয় দিয়ে অনেক কষ্টে সংসার পরিচালনা করেছি। সন্তানদের সব সময় বুঝিয়েছি শুধু অর্থ উপার্জন করে প্রকৃত মানুষ হওয়া যায় না। লেখাপড়া হচ্ছে স্থায়ী সম্পদ। লেখাপড়া শিখে নিজে আলোকিত হয়ে সমাজকে আলোকিত করা যায়।”

সন্তানদের কাছে প্রত্যাশার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি চাই সন্তানরা সমাজ ও দেশের কাজে এসে মানুষের কল্যাণে নিবেদিত থাকুক। নিজের আলোয় সমাজকে আলোকিত করুক। এছাড়া আমার সন্তান ও পুত্রবধূরা নিয়মিত আমাদের খোঁজখবর নেন। তারা সবসময় ভাল থাকুক এ কামনা করি।”