আন্তর্জাতিক

গোলান মালভূমির বাফার জোনে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর তৎপরতায় জাতিসংঘের উদ্বেগ

সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ সরকারের পতনের পরপরই দেশটির অধিকৃত গোলান মালভূমির বাফার জোন (সংঘাতের প্রভাব এড়াতে বিশেষ অঞ্চল) দখল করে নিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। খবর আনাদোলু এজেন্সির। 

সোমবার (৯ ডিসেম্বর) জাতিসংঘ সোমবার সতর্ক করে বলেছে, সিরিয়ার গোলান মালভূমির বাফার জোনে ইসরায়েলি সামরিক তৎপরতা ইসরায়েল ও সিরিয়ার মধ্যে ১৯৭৪ সালের সমঝোতা চুক্তির ‘লঙ্ঘন’ হবে।

জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “ইসরায়েলের পদক্ষেপ সম্পর্কে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীকে অবহিত করেছে যে, এই পদক্ষেপগুলো ১৯৭৪ সালের সমঝোতা চুক্তি লঙ্ঘন করবে। বাফার জোনো কোনো সামরিক বাহিনী বা তৎপরতা থাকা উচিত নয়।”

জাতিসংঘের ডিজএনগেজমেন্ট অবজারভার ফোর্সের (ইউএনডিওএফ) বরাত দিয়ে ডুজারিক বলেন, “ইউএনডিওএফ নিশ্চিত করেছে যে, ইসরায়েলি সেনা সদস্যরা সিরিয়ার গোলান মালভূমির বাফার জোনে প্রবেশ করেছে এবং সেখানে অবস্থান করছে।”

ডুজারিক জানান, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, সশস্ত্র গোষ্ঠীদের দখল রোধ করার জন্য তারা অস্থায়ীভাবে সেখানে অবস্থান নিয়েছে। ইসরায়েল এটিকে আত্মরক্ষামূলক অবস্থান বলছে।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের প্রধামন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গোলান মালভূমিতে ইসরায়েল অধিকৃত এলাকা থেকে বাফার জোনে এবং আশপাশের কমান্ডিং অবস্থানগুলোতে ঢোকার জন্য তিনি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে (আইডিএফ) নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন, ইসরায়েল নিজেদের সীমান্তে কোনো শত্রু বাহিনীকে অবস্থান নিতে দেবে না।

আনাদোলু এজেন্সির খবরে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির কাছে লেখা একটি চিঠিতে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন দাবি করেছেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বাফার জোন এলাকায় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রবেশ প্রতিহত করতে ইউএনডিওএফ-কে সহায়তা করছে।

চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, “ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা হুমকি এবং ইসরায়েলের জন্য - বিশেষ করে গোলান মালভূমির বাসিন্দাদের জন্য নিরাপত্তা হুমকির প্রতিক্রিয়া হিসেবে- ইসরায়েল তার নাগরিকদের জন্য আরও হুমকি মোকাবেলায় সীমিত এবং অস্থায়ী ব্যবস্থা নিয়েছে।”

ড্যানন আরো জানিয়েছেন, “ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ইসরায়েল রাষ্ট্র এবং এর নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কাজ চালিয়ে যাবে।”

“এই পদক্ষেপ নেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তবে, সিরিয়ার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে চলমান সংঘর্ষে ইসরায়েল হস্তক্ষেপ করছে না; আমাদের পদক্ষেপগুলো শুধুমাত্র আমাদের নিরাপত্তা রক্ষার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।” তিনি ইসরায়েলি সামরিক পদক্ষেপকে ‘সীমিত এবং অস্থায়ী’ বলে অভিহিত করেছেন।

রবিবার, সিরিয়ার বিদ্রোহী যোদ্ধারা প্রেসিডেন্ট বাশার আল–আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর গোলান মালভূমির বাফার জোনে প্রবেশ করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। 

সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সম্ভাব্য অনুপ্রবেশ সম্পর্কে সামরিক উদ্বেগের প্রতিক্রিয়া হিসাবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সিরিয়া এবং অধিকৃত গোলান মালভূমিকে পৃথককারী বাফার জোনে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে বলে জানিয়েছে।

সমঝোতা চুক্তি

৩১ মে, ১৯৭৪ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তিটিতে ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় দখল করা হারমন পর্বতের সব এলাকা ও কুনেইত্রা প্রদেশের প্রায় ২৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা থেকে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। 

চুক্তিটি সামরিক ব্যবস্থাসহ ইসরায়েল এবং সিরিয়ার মধ্যে বর্তমান সীমান্তকে সংজ্ঞায়িত করে, দুটি পৃথক অঞ্চল তৈরি করে – ইসরায়েলি (নীল) এবং সিরিয়ান (লাল) – তাদের মধ্যে একটি বাফার জোন রয়েছে।

চুক্তিটি জাতিসংঘের ডিজএনগেজমেন্ট অবজারভার ফোর্স (ইউএনডিওএফ) পর্যবেক্ষণ করে থাকে। জাতিসংঘের এই শান্তিরক্ষী বাহিনী ১৯৭৩ সালের যুদ্ধের পর থেকে ইসরায়েল এবং সিরিয়ার মধ্যে যুদ্ধবিরতি বজায় রাখার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত।

১৯৭৪ সাল থেকে ইউএডিওএফ ইসরায়েল এবং সিরিয়া নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে বাফার জোনে টহল দিচ্ছে।

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের প্রায় ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি পাথুরে মালভূমি গোলান। ১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের সময় গোলান মালভূমির বেশিরভাগ অংশ দখল করে ইসরায়েল। ১৯৮১ সালে তারা এটিকে একতরফাভাবে নিজেদের অংশ বলে ঘোষণা করে। তবে ইসরায়েলের এ পদক্ষেপ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পায়নি। যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সালে একতরফাভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।