সারা বাংলা

গুলিবিদ্ধ পথচারীদের পানি খাওয়াতে গেলে গুলি লাগে ইশানের চোখে

পরিবারের সঙ্গে রাজধানীর উত্তরার ৪ নাম্বার সেক্টরে থাকত সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ইশান। গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট পুলিশের ছোড়া ছররা গুলিতে বাম চোখ নষ্ট হয় তার। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কৃত্রিম চোখ লাগানো হলেও আগের মতো পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে না ইশান। কিশোর সন্তানের এ দুরবস্থায় তার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত মা-বাবা। 

ইশানের বাবা বাবুল শিকদার জানান, গত ৫ আগস্ট দুপুরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবার পর বাসা থেকে বের হয়ে বিজয় মিছিলে যোগ দেয় ইশান। কিন্তু, তখনো উত্তরা পূর্ব থানা পুলিশের সঙ্গে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষ চলছিল। সেদিন থানার সামনে তিনজন পথচারী গুলিবিদ্ধ হয়ে পানির জন্য আর্তনাদ করছিলেন। চোখের সামনে এমন দৃশ্য দেখে ইশান বন্ধুদের নিয়ে তাদের পানি খাওয়াতে যায়। এ সময় পুলিশের ছোড়া ‘ছররা গুলি’ ইশানের বাম চোখে লাগে। পথচারীরা দ্রুত ইশানকে উদ্ধার করে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে দুই দিন পর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার চোখে কৃত্রিম চোখ লাগানো হয়।

কিন্তু আগের মতো পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে না ইশান বলে জানান বাবুল ‍শিকদার। সন্তানের চোখের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা করাতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন বলেও জানান তিনি। 

বাবুল শিকদার পেশায় স্যানিটারি মিস্ত্রি। তিনি বলেন, ‘‘আমার একমাত্র সন্তানের বাম চোখে ভালোভাবে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা আর নেই। ছেলের চিকিৎসার কারণে নিজের কাজেও সময় দিতে পারছি না। এতে আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে।”

ইশানের মা পাপিয়া বেগম বলেন, ‘‘ছেলের চোখ কোনো দিনই আর ভালো হবে না। ছেলেটির চিকিৎসা করাতে গিয়ে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। তবে, এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো অর্থ সহায়তা পাইনি।”

ইশানের বাড়ি ঝালকাঠি সদর উপজেলার বিনয়কাঠি ইউনিয়নের উত্তর মানপাশা গ্রামে। ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমান বলেন, ‘‘জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে যারা আত্মত্যাগ করেছেন, তাদের কাছে দেশের মানুষ চিরঋণী হয়ে থাকবে। যারা চোখ হারিয়েছেন, তাদের প্রতি আমাদের সমবেদনা রইল। সব নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারের জন্য সরকার সব ধরনের সহায়তা করবে।’’