বিনোদন

মারা গেছেন সংগীতশিল্পী পাপিয়া সারোয়ার

একুশে পদকপ্রাপ্ত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী পাপিয়া সারোয়ার মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার সকাল ৮ টায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)।

পাপিয়া সারোয়ারের স্বামী সারওয়ার আলম গণমাধ্যমকে এই খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, পাপিয়া সারওয়ারের মরদেহ আজ বারডেমের হিমঘরে রাখা হবে। শুক্রবার জুমার নামাজের পর জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।

জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে ক্যানসারে ভুগছিলেন পাপিয়া সারওয়ার। নভেম্বরে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। অবস্থার অবনতি হলে তাকে তেজগাঁওয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন ছিলেন পাপিয়া। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে ৭২ বছর বয়সেই চলে গেলেন পাপিয়া। তিনি স্বামী ও দুই সন্তান রেখে গেছেন।

পাপিয়া সারোয়ারের জন্ম বরিশালে, ১৯৫২ সালে ২১ নভেম্বর। ছোটবেলা থেকেই রবীন্দ্র অনুরাগী পাপিয়া ষষ্ঠ শ্রেণিতে ছায়ানটে ভর্তি হন। পরে তিনি বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে ভর্তি হন। ১৯৬৭ সাল থেকে বেতার ও টিভিতে তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে গান করেন তিনি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিলেন।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনিই প্রথম ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে সেখানে স্নাতক করার সুযোগ পান।১৯৭৩ সালে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রসংগীতে ডিগ্রি নিতে ভারতে যান। তার আগে পাপিয়া ছায়ানটে ওয়াহিদুল হক, সন্‌জীদা খাতুন ও জাহেদুর রহিমের কাছে গানের দীক্ষা নেন।

পাপিয়া সারওয়ারের প্রথম অডিও অ্যালবামটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮২ সালে। অ্যালবামটির নামও ছিল শিল্পীর নামেই, ‘পাপিয়া সারোয়ার’। বরেণ্য এই সংগীতশিল্পী দীর্ঘ সংগীত ক্যারিয়ারে রবীন্দ্রসংগীতের জন্য কোটি শ্রোতার ভালোবাসা পেয়েছেন। তার ব্যতিক্রমী কণ্ঠ ও গায়কির প্রশংসা ছিল সংগীতাঙ্গনে। আবার আধুনিক গানেও সাফল্য পেয়েছিলেন এই শিল্পী। ‘নাই টেলিফোন নাই রে পিয়ন নাইরে টেলিগ্রাম’ গানটি তাকে বাংলা গানের শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয়তা দেয়।

সংগীতবোদ্ধাদের মতে, আধুনিক গান বাছাইয়ে বেশ সচেতন ছিলেন পাপিয়া। আর সেজন্য তার অ্যালবামের সংখ্যা কম। পাপিয়া সারওয়ারের সর্বশেষ অ্যালবাম ‘আকাশপানে হাত বাড়ালাম’ প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালে। পাপিয়া সারোয়ার ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি থেকে রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ লাভ করেন। ২০২১ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। পাপিয়া সারোয়ার জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলিন পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন একসময়। সর্বশেষ তিনি এই পরিষদের নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৯৬ সালে ‘গীতসুধা’ নামে একটি গানের দল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি।