সন্তানের রক্তমাখা শার্ট, প্যান্ট, ঘড়ি, বেল্ট— সবই এখন মা ডলি বেগমের কাছে অমূল্য। আদরের সন্তানের মৃত্যুর পর এগুলোর মধ্যেই তিনি ছেলের স্পর্শ খুঁজছেন।
গত ১৯ জুলাই ঢাকার মিরপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান জুনায়েদ (১৭)।
জুনায়েদের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার বিলদেওনিয়া গ্রামে। বাবার নাম শাহআলম ফরাজি। তিনি পেশায় দিনমজুর। তিন ভাই-বোনের মধ্যে জুনায়েদ বড়। অভাবের সংসারে ৬ষ্ঠ শ্রেণির পর থমকে যায় তার পড়াশোনা। পরিবারের হাল ধরতে ঢাকার মিরপুরে একটি কম্পিউটারের দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ নেন জুনায়েদ।
জুনায়েদের কর্মস্থল আইটি গ্যালারির সত্ত্বাধিকারী সবুজ আলম বলেন, ‘‘গত ১৯ জুলাই বিকেলে জুনায়েদ দোকান বন্ধ করে বাসায় ফিরছিল। সেসময় ওই এলাকায় পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ দেখে সে দোকানে ফিরে আসছিল। তখন পেছন দিক থেকে আসা একটি বুলেট তার শরীর ভেদ করে বেরিয়ে যায়। পরে পথচারীরা তাকে প্রথমে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে এবং পরে জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে নিয়ে গেলে সন্ধ্যা ৭টার দিকে জুনায়েদকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।’’
কবরের পাশে হারানো সন্তানের পোশাক আঁকড়ে থাকা মা ডলি বেগম
“ওই দিন এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা জানতে পেরে জুনায়েদসহ আরো ৪ কর্মচারীকে দ্রুত দোকান বন্ধ করে বাসায় চলে যেতে বলি। এর কিছুক্ষণ পরেই জানতে পারি জুনায়েদের শরীরে গুলি লেগেছে। পরে আমি দ্রুত হাসপাতালে ছুটে যাই। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ হয়ে গেছে। ও খুব ভালো একটা ছেলে ছিল। চুপচাপ কাজ করতো। আমি ওর বাবা-মাকে কি বলে সান্ত্বনা দেব!’’ বলছিলেন সবুজ আলম।
জুনায়েদের মা ডলি বেগম বলেন, “আমার জুনায়েদ ১০-১৫ দিন পরপর আমাকে দেখতে বাড়ি আসতো। আমার খরচ দিতো, খবর নিতো। অনেক স্বপ্ন ছিল আমার বাবার। কিন্তু বাবা এখন আমার কবরে শুয়ে আছে। এখন কে নেবে আমার খবর? কার কাছে বলব আমি দুঃখের কথা? আমার ছেলের মৃত্যুতে আমার সুখের সংসার শেষ হয়ে গেল।”
জুনায়েদের বাবা শাহআলম ফরাজি বলেন, “আমার আয়ে সংসার চলে না। তাই বড় ছেলে জুনায়েদ অল্প বয়সেই ঢাকায় একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজ নেয়। প্রতিমাসে ও টাকা পাঠাতো, তাই দিয়ে ওর ভাই-বোন পড়াশোনা করতো। আমার ছেলেটা গুলিতে মারা গেলো- এর দায় কে নেবে? আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।”
নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শঙ্করচন্দ্র বৈদ্য বলেন, “জুনায়েদের পরিবারের পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা অবগত। তাদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। পরিবারের যেকোনো প্রয়োজনে আমরা পাশে থাকবো। সরকারি অনুদান নিশ্চিত করতে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”