সংস্কারের অভাবে ঝালকাঠি সদর উপজেলার কিস্তাকাঠি আবাসন প্রকল্পের ৪৫০টি বসত ঘর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ভাঙা ঘর ছেড়ে অনেকেই অন্যত্র বসবাস করছেন। আবার অনেকে বাধ্য হয়ে জরাজীর্ণ ঘরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
এ সব বসত ঘরে সামান্য বৃষ্টি হলে পানি জমে যায়। ঘরে হুহু করে বাতাস ঢোকে। তাই ঘরগুলো সংস্কার করা না হলে এ শীত মৌসুমে চরম ভোগান্তিতে পড়বে এখানে বসবাসকারীরা।
২০০৬ সালে ঝালকাঠি পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে সুগন্ধা, বিষখালী ও বাসন্ডা নদীর মোহনায় ৬৫ একর খাস জমিতে স্থাপন করা হয় উত্তর কিস্তাকাঠির আবাসন প্রকল্প। তিনটি ব্যারাকে নির্মিত ৪৫০টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয় ৪৫০ ভূমিহীন নিম্ন আয়ের পারিবারকে। নির্মাণের পর ১৮ বছর অতিবাহিত হলেও সংস্কার না হওয়ায় আবাসনের ৪৫০টি পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে। কষ্ট সহ্য করতে না পেরে অনেকে বর্ষা মৌসুমে অন্যত্র বাসা ভাড়া বসবাস করছেন। নাগরিক সুবিধা বলতে কিছুই নেই এখানে, আছে শুধু নামে মাত্র ঘর।
সাড়ে চারশ' ঘরে আড়াই হাজারের অধিক মানুষের বসবাস। শুধু ঘর না এখানের ৫০টি গভীর নলকূপও অকেজো। সব কয়টি বাথরুমের দরজা ভাঙা । নেই কোনও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। মৃত্যুর পরে শেষ বিদায়ের জন্যও নেই কোন নির্ধারিত স্থান। গোরস্থান বা শশ্মান না থাকায় মৃত্যুর পর লাশ দাফনের জন্য নিতে হয় ৫ কিলোমিটার দূরে পৌর গোরস্থান বা শ্মশানে। বেহাল এই অবস্থায় পরিণত হয়েছে ঝালকাঠির উত্তর কিস্তাকাঠি আবাসন প্রকল্প।
কিস্তাকাঠি আবাসন প্রকল্পে সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ ঘর
গৃহ নির্মাণের পর দেড়যুগের বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়া এসব ঘরের টিনের চালাগুলো মরিচা পড়ে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। চালার ছিদ্র দিয়ে দেখা যাচ্ছে নীল আকাশ। গেলো বর্ষা মৌসুমে এখানকার বাসিন্দাদের কষ্টের কথা শোনার মতো ছিল না কেউ। বৃষ্টির পানিতে ভিজে গেছে বিছানাসহ ঘরের মালামাল। এখানকার বেশির ভাগ শৌচাগার ও গোসলখানাগুলো ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়েছে বেশ ক'বছর আগেই। রাস্তাঘাট ভেঙে চৌচির, প্রবেশ পথের একটি ব্রিজ ভেঙে খালের উপর ঝুলছে দু'বছর ধরে। সবমিলিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে এই আবাসনে বসবাসকারী ৪৫০পরিবারের সদস্যরা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি পাঁচটি পরিবারের জন্য একটি করে শৌচাগার ও গোসলখানা রয়েছে এখানে। শৌচাগারগুলো এখন ব্যবহারের অযোগ্য। পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য ব্যারাকে কোন ড্রেন না থাকায় ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত পানি যাচ্ছে এখানকার পুকুরে। আর দূষিত হচ্ছে গোটা পুকুরের পানি। এই পুকুরের পানি ব্যবহার করে বাসিন্দারাও নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। দুই একজন বাসিন্দা ঘর নিজেরা মেরামত করে বসবাস করলেও নিম্ন আয়ের অসহায় বাসিন্দারা সংস্কার না করেই দিনের পর দিন কষ্টে কাটাচ্ছেন।
এ প্রকল্পের বাসিন্দা সোলেমা হোসেন বলেন, “এখানের সবগুলো ঘরের অবস্থা খুব খারাপ। বৃষ্টির দিনে চালে পলিথিন টাঙিয়েও রেহাই পাওয়া যায় না। আর শীতে তো জম্মের কষ্ট। ভাঙা বেড়া দিয়ে হুহু করে ঠাণ্ডা ঢোকে। আঠা দিয়ে মোটা কাগজ বেড়ায় লাগিয়ে রাখি।”
কিস্তাকাঠি আবাসন প্রকল্পে সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ ঘর
বাসিন্দা গৃহিণী রহিমা বেগম বলেন, “আমাদের কষ্ট দেখার কেউ নাই। সব কিছুরই উন্নতি হয় আমাদের ভাগ্যের উন্নতি আর হলো না। শীত এবং বর্ষায় সীমাহীন কষ্ট করতে হয় আমাদের।”
এখানকার বাসিন্দা সুমন হোসেন বলেন, “প্রতিটি ঘরে ৩ বান করে টিনের প্রয়োজন। খাবার পানির সব কয়টা কল নষ্ট। বাথরুমের দরজাও না থাকার মতো।”
বাসিন্দাদের দুর্দশা নিয়ে উত্তর কিস্তাকাঠি আবাসন প্রকল্প সমবায় সমিতি-১ এর সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন বলেন, “আমরা বিভিন্ন সময় আবাসনের এসব সমস্যার কথা কর্তৃপক্ষকে জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বিগত সরকার বিভিন্ন জায়গায় নতুন নতুন আবাসন ও ঘর নির্মাণ করলেও আমাদের এখানের তিন হাজার বাসিন্দাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। এখানে বসবাসকারীদের একটাই দাবি দ্রুত প্রতিটি ঘরের চালের টিন পরিবর্তন করে নতুন করে চালা তৈরি, শৌচাগার ও গোসলখানাগুলো সংস্কার এবং নষ্ট হয়ে থাকা সব ক'টি টিউবওয়েল মেরামত করে ব্যারাকগুলো বসবাসের উপযুক্ত করা প্রয়োজন।”
সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোজাম্মেল হক বলেন, “কিস্তাকাঠি আবাসন প্রকল্প অনেক পুরনো। সবকিছু নতুনভাবে নির্মাণ করলে সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে। গত ৬ বছর আগে সংস্কারের জন্য চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলাম। তারপর ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঘরপ্রতি দু'টি করে টিন লাগানো হয়েছিল। ঘর বরাদ্দের পর ১৭ বছরের মধ্যে এই মেরামত খুবই নগণ্য।”
বসবাসে ভোগান্তির কথা স্বীকার করে ঝালকাঠি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, “প্রকল্পের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ নিরসনের জন্য যথাসাধ্য কাজ করা হবে।”
বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন বলেও জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।