পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসরত বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নতুন বর্ষ বরণের উৎসব হল ‘বৈসাবি’। প্রতিবছর ১২ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় রীতি-নীত মেনে তারা এ উৎসব বর্ণাঢ্য আয়োজনের মাধ্যমে পালন করেন। ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসের ১৩ ও ১৫ তারিখ পরীক্ষা রেখে এসএসসি পরীক্ষার রুটিন ঘোষণা করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড। এই দুই পরীক্ষার রুটিন পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অঙ্কন চাকমা ও সাধারণ সস্পাদক অমল ত্রিপুরা সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে এসএসপি পরীক্ষার রুটিন পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে বৈ-সা-বি’ (বৈসু-সাংগ্রাই-বিঝু-বিহু-সাংক্রান-বিষু) উৎসবের গুরুত্ব তুলে ধরে বলা হয়, “প্রত্যেক বছর ১২ এপ্রিল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জাতিসত্তাসমূহের এই ঐতিহ্যবাহী প্রধান সমাজিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এই দিনসমূহে পাহাড়ের তরুণ-তরুণী ও শিক্ষার্থীরাসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশাজীবী মানুষ জাতিসত্তার ঐতিহ্যকে ধারণ করে নিজ নিজ সংস্কৃতি চর্চা করে থাকেন এবং আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠেন। যার মাধ্যমে পাহাড়ে সব জাতির সাংস্কৃতিক মিলন ঘটে। ২০২৫ সালের ১২ এপ্রিল থেকে এই উৎসব (বৈসাবি) শুরু হবে। তবে, এসএসসি পরীক্ষার রুটিনে আমরা দেখলাম, ১৩ এপ্রিল এবং ১৫ এপ্রিল যথাক্রমে বাংলা দ্বিতীয়পত্র এবং ইংরেজি প্রথমপত্র পরীক্ষা রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ।”
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, “মূলত এই দিনগুলোতেই পাহাড়ি সম্প্রদায়গুলো উৎসবটি পালন করে থাকে। এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা সামনে রেখে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা আনন্দঘন পরিবেশে তাদের উৎসব পালন করার সুযোগ পাবেন না। সুতরাং, এই (এসএসসি) রুটিন অবশ্যই পরিবর্তন করা প্রয়োজন।”
শিক্ষামন্ত্রণালয়ের ‘বৈ-সা-বি’ উৎসবকে বিবেচনায় রাখা উচিত ছিল মন্তব্য করে পিসিপি নেতারা বলেন, “দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট বা এসএসসি পরীক্ষার রুটিন প্রণয়নের সময় এদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রধান সামাজিক উৎসবের বিষয়টা বিবেচনা করা হয়নি। এ সময়টায় পাহাড়ের চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, মুরুং, খুমি, চাক, খিয়াং, লুসাই, পাংখো, বম, তঞ্চঙ্গ্যা, সাঁওতাল, গুর্খা, অহোমী ও রাখাইনসহ ১০ ভাষাভাষী ১৫টি জাতিসত্তার মানুষরা নববর্ষকে নিজ নিজ আচারে বরণ করে নেয়। তাদের উৎসব বৈসু-সাংগ্রাই-বিঝু-বিহু-সাংক্রান-বিষু (বৈ-সা-বি) যে নামেই পরিচিত করি না কেন, এগুলো পাহাড়িদের শত শত বছরের ঐতিহ্য। যা এই দেশের সংস্কৃতিকে আরো সমৃদ্ধ করেছে।”